অর্থনৈতিক রিপোর্টার : চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশটির ব্যবসায়ীদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহŸান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে চীনের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে সংগঠনটি। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে এফবিসিসিআইয়ের নেতাদের সঙ্গে চীনের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের এক আলোচনায় সভায় এ আহŸান জানান সংগঠনটির নেতারা। আলোচনা সভায় চীন ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স¤প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হয়। আসছে কুনমিং ট্রেড ফেয়ারে নিজেদের পণ্য প্রদর্শনীর লক্ষ্যে এফবিসিসিআই সদস্যদের জন্য কমপক্ষে ২০টি স্টল বরাদ্দ চান ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। চীনের ইউনান প্রদেশের ৬ সদস্যের এক ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল সভায় অংশ নেয়। ইউনান প্রদেশের সিনিয়র অ্যাডভাইজার জং মিয়ান এ দলের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের নেতৃত্বে সংগঠনের প্রথম সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সহসভাপতি মাহবুবুল আলম ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এতে অংশ নেন। আলোচনার শুরুতে মাতলুব আহমাদ বলেন, বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ দেশে অনেক সম্ভাবনাময় খাত রয়েছে। চীন এখানে বিনিয়োগ করতে পারে এবং তাদের ব্যবসা বাড়াতে পারে। এ সময় জং মিয়ান বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
আলোচনা শেষে মাতলুব আহমাদ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে আমদানি পণ্যের অধিকাংশ বাজারই চীনের দখলে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশটির সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য চললেও আমরা তাদের কাছ থেকে বিশেষ কোনো সুবিধা পাচ্ছি না। তাই আমরা চাই আগামীতে আমাদের পণ্য চীনের বাজারে সরবরাহের ক্ষেত্রে যেন শুল্কমুক্ত সুবিধা পাই।
তিনি বলেন, চীনের এ প্রতিনিধিদল আগামী কুনমিং ফেয়ারে আমাদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করতে এসেছে। চীনের অন্যতম বৃহৎ এ বাণিজ্য মেলায় বরাবরই আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে আসছি। আগে এ মেলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য একটি বড় প্যাভিলিয়ন দিলেও এবার দুটি প্যাভিলিয়ন দেওয়া হবে। আমরা ওই প্যাভিলিয়নে এফবিসিসিআই মেম্বারদের জন্য কমপক্ষে ২০টি স্টল চেয়েছি। তারা বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। ওয়েস্টার্ন চায়নার সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেকটা ফারাক রয়েছে উলেখ করে তিনি বলেন, চীন সরকার ওই অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের আমাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীর সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে। এ কারণে ওই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বিনিয়োগ বাড়াতে অনেক দিন ধরেই আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। আমরা এবার সে সুযোগটা কাজে লাগাতে চাচ্ছি।
বাংলাদেশে জাপানি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহŸান
এদিকে বাংলাদেশে জাপানি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করার আহŸান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) নেতারা। গতকাল বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত মি.মাসাতো ওয়াতানাবে এর সঙ্গে এফবিসিসিআই এর এক আলোচনায় এ আহŸান জানানো হয়। মতিঝিল ফেডারেশন ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এফবিসিসিআই পরিচালকরা ছাড়াও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। আব্দুল মাতলুব আহমাদ জাপানকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন যে, বাংলাদেশ খুব দ্রæত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এ বছর দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি দশমিক ৭ শূন্য ৫ ও মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হতে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তার উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জাপানকে আরো নিবিড়ভাবে পেতে চায়। এ লক্ষ্যে দেশে জাপানি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে আহŸান জানান তিনি। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জাপানের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং বাংলাদেশে জাপানের প্রযুক্তি হস্তান্তরের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়াও তিনি চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে তাঁর সফরসঙ্গী এফবিসিসিআই নেতাদের সাথে জাপানের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের ‘বিজনেস মিটিং আয়োজনের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান। জাইকা যেহেতু বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যে আগ্রহী জাপানি ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করেছে। তাই সহজেই দু’দেশের খাতভিত্তিক ব্যবসায়ীদের সভা আয়োজন করা সম্ভব বলে জানান মাতলুব আহমাদ। এফবিসিসিআই প্রথম সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বাংলাদেশে জাপানের শিল্প স্থানান্তর এবং জাপানের বাজারে আরো বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি পণ্য রফতানির সুযোগ প্রদানের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান।
এছ্ড়াও এফবিসিসিআইয়ের বিভিন্ন সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের জ্বালানি, কৃষি ও বায়োটেকনোলজি খাতে জাপানের বিনিয়োগ আহŸান করেন। জাপানের রাষ্ট্রদূত মি. মাসাতো ওয়াতানাবে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমে আরো বেশি জাপানি সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ লক্ষ্যে তিনি দু’দেশের ব্যবসায়ী স¤প্রদায়ের মাঝে নিয়মিত ‘ডায়লগ’আয়োজনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি এফবিসিসিআই এবং জাপান বাংলাদেশ জয়েন্ট কমিটি ফর ইকনোমিক কো-অপারেশন (জেবিসিসিইসি) কে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করার আহŸান জানান। জাইকা এবং জেট্রোকে নিয়ে জাপান দূতাবাস দু’দেশের ব্যবসা উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে কাজকরবে বলে রাষ্ট্রদূত এফবিসিসিআই নেতাদের আশ্বাস দেন। উল্লেখ্য যে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ জাপানে ৯১৫ দশমিক ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করে এবং ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশ থেকে জাপান মূলত নীটওয়্যার পণ্য, ওভেন পণ্য, হোম-টেক্সটাইল, জুতা, চামড়াজাত দ্রব্য এবং হিমায়িত খাদ্য আমদানি করে থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন