স্পোর্টস রিপোর্টার : সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্বে ছিলেন ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জর্ডারের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে তাকে বিদায় দেয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। প্রায় ৯ মাস পর আবারো জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে ঢাকায় এলেন ডি ক্রুইফ। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের প্লে-অফে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে আগামী ২ ও ৭ জুন দু’টি হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এ দুই ম্যাচকে সামনে রেখেই আপাতত স্বল্প মেয়াদে আনা হয়েছে এই ডাচম্যানকে। গতকাল ভোরে নেদারল্যান্ডস থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান ডি ক্রুইফ। বিকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলোয়াড়দের নিয়ে অনুশীলন শুরু করেন তিনি। অনুশীলন শুরুর আগে ক্রুইফ মুখোমুখি হন মিডিয়ার। সেখানে উঠে আসে নানা প্রসঙ্গ। ডাচ কোচ জানান, তিনি বাংলাদেশের ফুটবলকে টেনে তুলতে চান। ব্যর্থতা ভুলে সফলতা এনে দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পুরণ করতে চান। সেই সঙ্গে তিনি পুনঃনির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান বাফুফের তিনবারের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে। তিনি আরো জানান, বাফুফের সঙ্গে সব সময়ই তার ভালো সম্পর্ক ছিলো। গত সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো। এখন স্বল্প মেয়াদে আসলেও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন চাইলে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার ইচ্ছে আছে এই ডাচম্যানের।
কাল মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় প্রথমেই ক্রুইফ বলেন,‘আমি সালাউদ্দিনকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। তার পুনর্নির্বাচনের সঙ্গে আমার প্রত্যাবর্তনটাও জড়িয়ে আছে। সালাউদ্দিন আবার বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন, আমি পুনরায় বাংলাদেশে ফিরে এসেছি। বাংলাদেশ ফুটবলকে ঘিরে উন্নয়নের জন্য যে চিন্তাধারা আমার মাঝে কাজ করে, সালাউদ্দিনও একই চিন্তা করেন। আমাদের দু’জনার চিন্তাধারা একই।’ তিনি আরো বলেন, ‘গত কয়েক মাস বাংলাদেশের ফুটবল সঠিক পথে ছিল না। মাঝে খÐকালীন দায়িত্ব পালন করলেও প্রায় ৯ মাস আমি বাংলাদেশে ছিলাম না। কিন্তু এ কারণে আমি ভীত নই। আমি আমার খেলোয়াড়দেরকে চিনি। আমি জানি কীভাবে তাদের আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য তৈরি করতে হয়। আমি ঢাকায় এসেছি এক মাসের জন্য। ৭ জুন হোম ম্যাচ শেষে ৯ অথবা ১০ জুন ফিরে যাবো নেদারল্যান্ডসে।’
এবার খুব অল্প সময়ের জন্য দায়িত্বে আসলেও নিজের লক্ষে অটল ডি ক্রুইফ। তার কথা, ‘বাংলাদেশের ফুটবলে বর্তমানে যে নিম্নমুখী ধারা, সেখান থেকে আমি টেনে তুলতে চাই। আমি চাই, বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল নিয়ে আনন্দমুখর সময় ফিরে পাক। এদেশের ফুটবলে সাফল্য ফিরিয়ে আনতে চাই। আমার জন্য এ কাজ অনেকটাই সহজ। কারণ আমি বাংলাদেশের ফুটবলের পারিপার্শ্বিকতা বুঝি। আমি জানলাম, ঢাকা আবাহনীর হয়ে ফিরে আসছেন কোচ জর্জ কোটান। এটিই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের ফুটবলে একজন বিদেশি কোচের পক্ষে টিকে থাকাটা কতটা কঠিন। এখানে অনেক কিছুই বুঝতে হয়। সে অনুযায়ী চলতে হয়।’ ডি ক্রুইফ বলেন, ‘গত আট মাসে বাংলাদেশ তিনজন কোচ বদল করেছে। যা কখনও সুস্থ ধারা নয়। দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি ছাড়া কোনও কোচই দলকে স্থায়ী সাফল্য এনে দিতে পারবেন না। আমি মামুনুল ও সোহেল রানাকে চেয়েছি, কারণ আমার খেলার যে ধারা, সে ধারায় তাদের খুবই দরকার। জাহিদ ও ইয়াসিনের ব্যাপারে বলবো, তাদেরকে স্বল্প সময়ে ফিরিয়ে আনা কষ্টকর।’
জাতীয় দলের ডাচ কোচ খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়ে উদ্বিগ্ন নন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়রা একটি টুর্নামেন্ট খেলেছে। আমার ধারণা তাদের ফিটনেস ভালোই রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে খুব একটা উদ্বিগ্ন নই।’ তাজিকিস্তান প্রসঙ্গে ডাচ কোচ বলেন, ‘বিশ্বকাপ বাছাইয়ে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ১-১ গোলে ড্রয়ের ম্যাচটা আমার স্মৃতিপটে উজ্জ্বল। ওদের একজন খেলোয়াড় লালকার্ড পেয়েছিল এবং ৮৩ মিনিটে আত্মঘাতী গোল হজম করে সে ম্যাচটি আমরা ড্র করেছিলাম। ওই ম্যাচে অনেকগুলো সুযোগ নষ্ট করেছি আমরা। সে ম্যাচটি হতে পারে এবারকার চ্যালেঞ্জে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। অবশ্য দুশানবেতে ফিরতি ম্যাচে ০-৫ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে আমি ছিলাম না। আমি ইউটিউবে ম্যাচটির অংশ বিশেষ দেখেছি। বাংলাদেশ ওই ম্যাচে ভালো খেলেনি। এ দুই ম্যাচের নিরিখে বলতে চাই, এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের প্লে-অফের অ্যাওয়ে ম্যাচে দুশানবেতে যদি আমরা তাজিকিস্তানের বিপক্ষে ড্র করে মাঠ ছাড়তে পারি, তাহলে নিজ মাঠে ফিরতি ম্যাচে আমাদের পক্ষে জেতা সম্ভব। দুশানবেতে ২ জুন বাংলাদেশ স্বাগতিকদের বিপক্ষে কৌশলগত দিক দিয়ে ভালো ফুটবল খেলবে। আর সেটা করতে পারলে আমার দলের সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশ্বাস করি আমি।’
এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের প্লে-অফে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে দু’টি হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাজিকদের বিপক্ষে জিতলে আগামী তিন বছর আন্তর্জাতিক ম্যাচ পেতে বাধা থাকবে না লাল-সবুজদের। যদি তাজিকিস্তানের বিপক্ষে জয় না আসে তাহলে পরবর্তীতে ভুটানের বিপক্ষে আরো দুটি প্লে-অফ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। এই প্লে-অফেও যদি জয়ের দেখা না পাওয়া যায় তাহলে ফিফা আগামী তিন বছর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ দেবে না বাংলাদেশকে। তাই তাজিক ম্যাচের গুরুত্ব বুঝে ডি ক্রুইফকে আবারো জাতীয় দলের দায়িত্বে আনা হয়েছে। কন্ডিশন, খেলোয়াড়দের সঙ্গে বোঝাপড়া সবদিক বিবেচনা করেই নতুন কাউকে না এনে পুরনো ক্রুইফেই আস্থা রেখেছে বাফুফে। এখন দেখার বিষয় ক্রুইফ বাফুফের আস্থার প্রতিদান কতটা দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন