বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

বন্ড মার্কেট বিকশিত করা হবে : অগ্রণী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের প্রয়োজন মেটাতে দেশের বন্ড মার্কেটকে অনেক বেশি বিকশিত করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আমরা এখনও অনেক ফিনান্সিয়াল টুলস ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে পরিচিতি করতে পারিনি। এতে স্বল্পমেয়াদী আমানত দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের অর্থায়নে ব্যবহার করছি। কিন্তু আমাদের মাথায় ঢুকে না যে স্বল্পমেয়াদী আমানত দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পে ঋণ হিসেবে দেওয়া হলে সেই অর্থ কিভাবে ফেরত আসবে। এই কাজটি যারা করে তারা বোকার রাজ্যে রয়েছে। এজন্য আমাদের প্রথম কাজটি হবে বন্ড মার্কেটকে অনেক বেশি বিকশিত করা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অগ্রণী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত্রে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যদি আমরা বন্ড মার্কেটকে ডেভেলপমেন্ট করতে পারি তবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের ব্যবস্থা হবে। সর্বপ্রথম প্রাণকে দিয়েই বন্ডের বিনিয়োগ শুরু করার কথা জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার পরামর্শ দেন। এছাড়া দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেউলিয়া আইন যুগোপযোগী করার ওপর জোর দেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন দেউলিয়া আইনটি করা আমাদের জন্য খুবই জরুরী। যত দ্রæত সম্ভব এটা করা হবে। পৃথিবীতে এমন কোন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে দেউলিয়া আইন নেই।
দেশের উন্নয়নের করের পরিধি আরো বাড়াতে হবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের দেশে যারা ট্যাক্স প্রদান করে তারাই বারবার ট্যাক্স প্রদান করে আসছেন। কিন্তু নতুন করে করের আওতায় আসার উপযোগী অনেক মানুষ এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন না। তাই আগামী বাজেটে আমি এই অপবাদ থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে চাই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দেশের প্রতিটি পরিবার থেকে আগামী বাজেটে একজনের কর্মসংস্থান সৃস্টির আশ্বাসও দেন অর্থমন্ত্রী। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে কোন গরীব লোক থাকবে না বলেও জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, প্রকৌশলগত দিক থেকে সারা বিশ্ব খুব দ্রæত গতিতে আগাচ্ছে। বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে সেই প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে হবে। তা না হলে অন্যরা এগিয়ে যাবে এবং অলসরা আগের জায়গাতেই পড়ে থাকবে। সেজন্য ব্যাংকের সকল কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ২০১৮ সালে বিভিন্ন সূচকে উন্নয়নে অগ্রণী ব্যাংকের প্রশংসা করে গভর্নর বলেন, অনেক খাতে উন্নয়ন হলেও ব্যাংকটি ২০১৮ সাল শেষে ৮৮৩ কোটি টাকা মুলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এছাড়া বর্তমানে ব্যাংকটির যে খেলাপি তা আরও কম হতে পারত। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। তিনি খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার ও ব্যাংকের সব পর্যায়ে সুশাসন নিশ্চিতেরও তাগিদ দেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের ভিতরে যেসব সমস্যা আছে তার সমাধান আপনারাই করতে পারেন। কারণ এটা নিয়ে আপনারা সবসময় কাজ করেন। এজন্য নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় করুন। তাহলে আমার মনে হয় সমস্যার সমাধান পাওয় যাবে। এছাড়া আর্থিক বিভাগের পক্ষ থেকে যে ধরনের সহযোগীতা করা দরকার তা করতে আমরা প্রস্তুত।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্যাংকটির সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম। তিনি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা তুলে ধরে বলেন, ২০১৮ সাল শেষে অগ্রণী ব্যাংকের আমানত দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এ সময় ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ দাঁড়িয়েয়ে ৩৯ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। আমদানি ও রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২৩ হাজার ৫৫১ কোটি ও ৮ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। রেমিট্যান্স এসেছে ১২ হাজার ৬৮০ কোটি টাকার। এছাড়া ২০১৮ সালে ব্যাংকটি ৯৫৭ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে মোট ১৬ জন গুণী গ্রাহককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়াও অন্যান্য সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন- প্রাণ গ্রæপের পরিচালক উজমা চৌধুরী, বসুন্ধরা গ্রæপের আহমেদ আকবর সোবহান, এপেক্স গ্রæপের চেয়ারম্যান মনজুর এলাহী, সিটি গ্রæপের ফজলুর রহমান, নিটল-নিলয় গ্রæপের মাতলুব আহমাদ, নর্থইস্ট পাওয়ারের খুরশিদ আলম, নোমান গ্রæপের নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের আইয়ুব হোসেন, বিএসআরএমর আলী হোসেন, পিএইচপি গ্রæপের সুফি মিজানুর রহমান, ইস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, এসএমই উদ্যোক্তা নুরুন্নাহার বেগম, প্রাইম গ্রæপের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল ও মোহাম্মদ শাহজাহান।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা
জাতীয় সংসদে আগামী ৬ জুন (বৃহস্পতিবার) ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে। গতকাল নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে নীতিগত বিষয়সমূহের ওপর মতবিনিময়ের জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বসেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১০ মার্চ দেশের থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। পরে ধারাবাহিকভাবে এনজিও, মন্ত্রণালয়, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে একই বিষয়ে আলোচনায় বসবেন তিনি।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বা সাড়ে ১৩ শতাংশ বেশি।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারকে মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট এবারের বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য। সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানে। এছাড়া আগামী বাজেটে গ্রামীণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে থাকছে বিশেষ পদক্ষেপ।###

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন