অর্থনৈতিক রিপোর্টার ঃ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সর্বোচ্চ খাত হিসেবে ধরে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্য থেকে ৩৫ শতাংশের বেশি হবে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকার রাজস্ব অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে এনবিআর দিয়ে আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এই লক্ষ্যমাত্রা চলতি (২০১৫-২০১৬) অর্থবছরের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা বেশি।
চলতি অর্থবছরের বাজেটের শুরুতে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা রাজস্ব আরহণকারী প্রতিষ্ঠানটি। পরে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ২৫ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। এনবিআর সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, আগামী অর্থবছরে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩৭ শতাংশ আদায় হবে ভ্যাট থেকে। সে হিসেবে এনবিআরকে ভ্যাট খাত থেকে প্রায় ৭৫ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে। এছাড়া আয়কর খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ৭৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক খাত থেকে প্রায় ৫৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৬ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের চূড়ান্ত পর্যায়ে খাতওয়ারি লক্ষ্যমাত্রা কিছু কমবেশি হতে পারে।
অপর দিকে চলতি অর্থবছরে বাজেটে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সর্বোচ্চ খাত হিসেবে আয়কর থেকে ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, মূসক ভ্যাট খাতে ৬৩ হাজার ৯০২ কোটি টাকা এবং শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
তবে এই অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দ্বাড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এই নয়মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ২১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। সেখানে এই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ২১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ফলে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর তাই পূর্বের নির্ধারণকৃত ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে কাটছাঁট করে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭২০ কোটি টাকা চলতি অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে এনবিআর।
চলতি অর্থবছরে ঘাটতি সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরে আরো বেশি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আশাবাদী এনবিআর। এনবিআরের পক্ষ থেকে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা আদায়ের জন্য এবং কর্মকর্তাদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের জন্য এপিএ (বার্ষিক পারদর্শিতা চুক্তি) করা হয়েছে। যা আগের অর্থবছরগুলোতে ছিল না। এছাড়া সম্প্রতি মাঠপর্যায়ে জনবল পদায়ন, বড় অঙ্কের রাজস্ব জড়িত মামলা নিষ্পত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করাসহ নানা পদেক্ষেপের কারণে রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু করছে। যা আগামীতে আরো বেশি পড়বে। তাই চলতি অর্থবছরের তুলনায় সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি রাজস্ব আদায়ে আশাবাদী এনবিআর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন