স্পোর্টস ডেস্ক : হেডিংলি বলেই বাজির দরে কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিলো শ্রীলঙ্কা। ২০১২ সালে প্রথমবারের মত এই মাঠ থেকেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় লঙ্কানরা। দীর্ঘ বিরতি পেরিয়ে গতকাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠে গড়ানো এই টেস্টটিও তাই স্বপ্ন দেখাচ্ছিলো এশিয়ান জায়ান্টদের। তবে কিছুটা হলেও পাল্লা ইংল্যান্ডের দিকে ঝুঁকে ছিলো শুধুমাত্র অ্যালিস্টার কুকের কল্যাণে। টেস্টে ১০ হাজারী ক্লাবের পৌঁছানোর অপেক্ষায় ছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক। কিন্তু ইংলিশ গ্রীষ্মের প্রথম সকালের সবটুকু আলো কেড়ে নিলেন আনকোরা দাসুন শানাকা। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওভারেই দুটিসহ হেডিংলি টেস্টের প্রথম দিনে লাঞ্চের আগে ৩ উইকেট নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার অভিষিক্ত এই অলরাউন্ডার।
২৪ বছর বয়সী শানাকা মূলত ব্যাটসম্যান। পাশাপাশি করেন জেন্টল মিডিয়াম পেস। মূলত টি-টোয়েন্টি উপযোগী ক্রিকেটারই ভাবা হচ্ছিল তাকে। ইংল্যান্ড সফরের শ্রীলঙ্কা দলে তার জায়গা পাওয়াটাই ছিল চমক। টেস্টের আগে লিস্টারশায়ারের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে শতক করেছিলেন আট নম্বরে নেমে। তাতে নিশ্চিত হয়ে যায় টেস্ট ক্যাপ পাওয়াও। শানাকার এই বিস্ময়কর এগিয়ে চলা অব্যাহত থাকলো টেস্ট ক্রিকেট অভিযানের প্রথম দিনেও। নিজের মাত্র দ্বিতীয় ওভারেই পেয়ে যান উইকেট। সেটিও সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় শিকার। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে পিচ করে বেরিয়ে যাওয়া বল তাড়া করে কট বিহাইন্ড কুক।
ইংল্যান্ডের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রান স্পর্শ করতে কুকের প্রয়োজন ছিল ৩৬। এই ইনিংসে করতে পেরেছেন ১৬।
শানাকা আসল চমক উপহার দিয়েছেন এরপর। আউট করেছেন আঁটসাঁট টেকিনকের আরও ২ ব্যাটসম্যান, নিক কম্পটন ও জো রুটকে! কুক আউট হওয়ার দু বল পরই ¯িøপে ক্যাচ দিয়ে আউট কম্পটন। শানাকার পরের ওভারে আলতো ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে ধরা সদ্য ইংল্যান্ডের বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হওয়া রুট। রানের খাতা খুলতে পারেননি দুজনের কেউই। ৪৯ রানের উদ্বোধনী জুটির পর চোখের পলকে ইংল্যান্ডের রান হয়ে যায় ৩ উইকেটে ৫১। ৩ উইকেটে ৫৭ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় ইংল্যান্ড। সেখান থেকে এসে দলীয় ৭০ আর ৮৩ রানে অভিষিক্ত ভিন্স ও স্টোকসকে হারালে আবারও বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ইংল্যান্ড (৮৩/৫)। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন হালেস আর বেয়ারস্টো। ৫৩ ওভার শেষে বৃষ্টির বাধা পড়ার আগ পর্যন্ত দলকে টেনে নেন দুজনে মিলে। বৃষ্টি না থামায় সেখানেই দিন শেষ ঘোষনা করেন আম্পায়াররা। প্রথম দিন শেষে ৫ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডের খাতায় জমা পড়ে ১৭১ রান। হালেস ৭১ আর বেয়ারস্টো অপরাজিত আছেন ৫৪ রানে।
শানাকা প্রথম খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন গত জানুয়ারিতে। শ্রীলঙ্কার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ৪ ম্যাচে দুটি টর্নেডো সেঞ্চুরি করে। এক ম্যাচে ১২ ছক্কায় ৪৮ বলে করেছিলেন অপরাজিত ১৩১। দু ম্যাচ পর রেকর্ড ১৬ ছক্কায় করেছিলেন ৪৬ বলে ১২৩! এই পারফরম্যান্সে জায়গা পেয়ে যান গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শ্রীলঙ্কা দলে। শ্রীলঙ্কার হয়ে বিশ্বকাপে বা অন্য ম্যাচেও ব্যাট হাতে এখনও তেমন কিছু করতে পারেননি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার এর আগের উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্সটাও ছিল বল হাতে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পুনের সবুজ উইকেটে ভারতের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। বাকি ৯ টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। এটাই বলে দেয় তার বলের হাত। সেই শানাকা আবার চমকে দিলেন বল হাতে। সেটিও টেস্ট ক্রিকেটে!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন