শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বান্দরবানের ‘সাইরু রিসোর্ট’ হার মানাবে দার্জিলিংকেও

মো. সাদাত উল্লাহ, বান্দরবান থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

জাতিগত বৈচিত্র্য আর প্রকৃতির অপার লীলাভ‚মি বান্দরবান পার্বত্য জেলা। এখানকার ১৩টি সম্প্রদায়ের বর্ণময় সংস্কৃতি, তাদের জীবনাচার এবং পাহাড়ি-বাঙ্গালির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের আকর্ষণ করে চলেছে প্রতিনিয়ত। রয়েছে বিস্তৃত পর্বতরাজির কোল ঘেঁষে বয়ে চলা নদী সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী। পাশাপাশি পাহাড়ে সবুজের মেলার সাথে অপরুপ ঝর্ণা।
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মায়ানমার ও ভারত সীমান্ত পরিবেষ্টিত বান্দরবান জেলা নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের কারণে ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। ফলে শান্ত সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্যে নগর জীবনের ক্লান্তি ঘুচাতে পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে পার্বত্য এই জেলা । এখানে ১১টি নৃতাত্তি¡ক জনোগোষ্ঠীর রয়েছে আলাদা ভাষা ও সংস্কৃতি। তাদের সামাজিক রীতিনীতি, জীবনাচার ভ্রমণকারী পর্যটকদের জন্য বাড়তি পাওনা।
বান্দরবান একটি বিকাশমান পর্যটক শহর। এখানে রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং, দ্বিতীয় পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং। সেনাবাহিনী পরিচালিত নীলগিরি, চিম্বুক, জিয়া পুকুর, কিংবদন্তীর বগা লেক, জেলা প্রশাসন পরিচালিত মেঘলা, প্রান্তকি লেক, নীল আঁচল, পাহাড়ি ঝর্ণাধারা শৈলপ্রপাত, রিজুক, রূপমুহুরী, বনপ্রপাত, শুভ্রনীলা, নৈসর্গিক শোভামÐিত মিরিঞ্জাসহ অসংখ্য পর্যটন স্পট ভ্রমণ বিলাসী পর্যটকদের আকর্ষণ করে চলছে। এর মধ্যে “সাইরু রিসোর্ট” পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্পট হিসাবে মনে করে এলাকাবাসী।
‘সাইরু রিসোর্ট’ পর্যটন প্রেমীদের সর্বশেষ সংযোজন। পর্যটকদের মতে, এটি দার্জিলিংকেও হার মানাবে। জেলা শহর থেকে ১৮ কি.মি. দূরে চিম্বুক সড়কে ওয়াই জংশন নামক সেনা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় প্রকৃতির অপরূপ পাহাড়ের পাদদেশে এটি অবস্থিত। সাইরু নামকরণে রয়েছে বেদনাবিধূর ইতিহাস।
রিসোর্টের প্রতিটি স্থাপনায় একটি বৈচিত্র রয়েছে। এখানকার ১৩টি উপজাতী জনগোষ্ঠির কৃষি সংস্কৃতি জীবনাচার ও পাহাড়ী বাঙ্গালীর সম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে প্রধ্যান্য দিয়ে তৈরী করা হয়েছে প্রতিটি উপভোগ্য বস্তুকে। কটেজগুলোকে প্রকৃতির সাথে মিল রেখে আধুনিকতার সর্বশেষ মডেল সংযোজিত হয়েছে। নিরাপত্তা বিভাগ, রিসিপশন, ডাইনিং স্পেস, ওয়াশ রুমসহ প্রতিটি বিভাগের সাথে প্রকৃতির একটি বিশাল মিতালী রয়েছে। সাইরুর অভ্যন্তরে নিজস্ব টমটম নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ে নিঃশব্দ গতিতে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়াকে দারুণ আন্দোলিত করে।
সাইরুর অন্যতম নান্দনিক নিদর্শন হলো সুইমিংপুল। যা ভ‚পৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উপরে অবস্থিত। যে কেউ আসলে এখানে তার হৃদয় আকুল ও চঞ্চল হয়ে উঠবে। এখানে আরো উপভোগ্য বিষয় হচ্ছে, সাইরুর পর্বত চ‚ড়ায় একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত যাওয়ার মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউর রহমান রেজা ইনকিলাবকে জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান রাংলাই ¤্রাে এর নিজস্ব পাহাড়ে ডুমাস আর্কিটেক্ট ফার্ম এই আকর্ষণীয় রিসোর্টটি নির্মাণ করেন। চেয়ারম্যান শামীম ইমাম, পরিচালক রাংলাই ¤্রাে, এথেন্স ¤্রাে, মীর মোহাম্মদ আলী ও সাইফুল ইসলামের নির্দেশনা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি মোস্তাফা আমিনের সুনিপণ তত্বাবধানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিকট আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
নামকরণে বিষাদময় কাহিনী
সাইরুর নামকরণে রয়েছে অভিমানী প্রেমিকার করুণ আত্মত্যাগের বিষাদময় ইতিহাস। সাইরু পর্বতের একাংশে রয়েছে জিরো পয়েন্ট। তার সাথে আছে দুইটি আলিঙ্গণরত গাছ। স্থানীয় ¤্রাে সম্প্রদায় গাছ দুইটিকে নাম দিয়েছে ধারমারা (পুরুষ) এবং ফুলশুমারীকে (স্ত্রী) গাছ। তার পাশে বিশাল পাহাড়ের খাদ রয়েছে। ¤্রাে অর্থ পবিত্র জন্ম। এই গাছ দুইটি পবিত্র অবস্থায় জন্ম নিয়েছে বলে তারা বিশ্বাস করে।
জানা গেছে, এক ¤্রাে সম্প্রদায়ের যুবতীর নাম ছিল “সাইরু”। তিনি তার এক আত্মীয়কে খুবই ভালোবাসতেন। কিন্তু ¤্রাে ধর্মীয় রীতি তাদের প্রেমকে চিরস্থায়ী করতে দেয়নি। ঐ ছেলের অন্যত্র বিয়ে হলে সাইরু মেয়েটি অভিমান করে উক্ত পাহাড়ের খাদে আত্মহত্যা করে। পরে ঐ স্থানে দুইটি গাছ পবিত্রভাবে আলিঙ্গন করে জন্ম নিয়ে বড় হতে থাকে। এভাবে অভিমানী প্রেমের বিষাদময় স্মৃতি ধরে রাখতে এ পাহাড় এবং রিসোর্টকে ‘সাইরু’ নামকরণ করা হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের সিইও রেজাউর রহমান রেজা এবং পরিচালক এথেন্স ¤্রাে। যে কেউ চাইলে দৃষ্টিনন্দন এ পর্যটন স্পটে ঘুরে আসলে অনাবিল শান্তির সমারোহ বয়ে আসতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন