গত বছর সউদী আরামকোর নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ১১১ বিলিয়ন ডলার। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি অ্যাপলের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মুনাফাকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। গত সোমবার মুডি’জ ইনভেস্টরস সার্ভিসেস প্রকাশিত এক মূল্যায়নে এ কথা বলা হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের বন্ড ছাড়ার আগে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক বিষয়ে তারা এ মূল্যায়ন করে।
এ মুনাফার পরিমাণ আরামকোকে বিশে^র সবচেয়ে বেশি মুনাফাকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অগ্রবর্তী স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশেষ করে তাদের মুনাফার পরিমাণ অ্যাপলের প্রায় দ্বিগুণ। বিশে^র শীর্ষ মুনাফাফাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অ্যাপল গত পূর্ণ বছরে নিট মুনাফা করেছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। রয়াল ডাচ শেল নিট মুনাফা করেছে ২৩ বিলিয়ন ডলার। আর এক্সন মোবিল ২১ বিলিয়ন ডলার।
মুডি’জ বলে, তেল দানবের গত বছরের রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৩৫৫.৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে তারা দৈনিক ১০.৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। আরামকো ২০১৮ সালে ৫৮.২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৭ সালে ৫০.৪ বিলিয়ন ডলার লাভ পরিশোধ করেছে। সউদী বাদশাহী ও তাদের শাসক পরিবারগুলোর মধ্যে এ লাভের অর্থ কীভাবে বিতরণ করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
আন্তর্জাতিক বিনিময়ে আরামকোর আংশিক তালিকাভুক্তির প্রত্যাশায় সউদী সরকার ২০১৭ সালে আরামকোর কর হার ৮৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৫০ শতাংশ করে। এটা ছিল নতুন আয়ের ধারা তৈরি এবং তেল রাজস্বের উপর সউদী সরকারের নির্ভরতা কমিয়ে আনার উদ্যোগের অংশ।
আরামকোর গ্রেড নির্ধারণের এ প্রথম উদ্যোগে ফিচ প্রতিষ্ঠানটিকে এ+ রেটিং এবং মুডি’জ একে এ ১ রেটিং দিয়েছে। এ রেটিংকে বিনিয়োগ-গ্রেড লেভেল বলে বিবেচনা করা হয় ও নিম্ন ক্রেডিট ঝুঁকির আভাস দেয়। তবে সংস্থাগুলো সউদী রাষ্ট্রীয় পর্যায় ও আরামকোর মধ্যে জোরালো সম্পর্কের কারণে আরামকোকে তাদের টপগ্রেড প্রদান বন্ধ রেখেছে। এ ক্ষেত্রে ফিচ বিশেষ করে উৎপাদনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, কর নির্ধারণ ও লাভ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কোম্পানির উপর রাষ্ট্রের প্রভাবের বিষয় উল্লেখ করেছে।
আরামকো যেদিন জানায় যে তাদের বন্ড বিক্রির ব্যাপারে তারা বিনিয়োগকারীদের সাথে বৈঠক শুরু করবে, রেটিং সংস্থাগুলো সেদিনই তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব বন্ড ছাড়া হলে ডলারে তার মূল্য নির্ধারিত হবে এবং লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তা বিক্রি হবে। এ বন্ড বিক্রি আরামকোকে রাষ্ট্রের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রতিষ্ঠান সউদী পেট্রোকেমিক্যাল প্রতিষ্ঠান সাবিক-এর শেয়ারের প্রধান অংশ অধিগ্রহণ বাবদ ৬৯ বিলিয়ন ডলার পরিশোধে সাহায্য করবে।
ফিচ বলে, তাদের রক্ষণশীল পূর্বাভাসে দেখা যায় যে সাবিক লেনদেন একত্রীকরণের পর ২০২১ সালে সউদী আরামকোর নিট ঋণ ৩৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। সাবিক-এর সাথে ৬৯ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সরকারি বিনিয়োগ ফান্ডে (পিআইএফ) পুঁজি সঞ্চালন করবে। এ প্রতিষ্ঠানটি দেখভাল করেন সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
যুবরাজ সালমান আরামকোর শেয়ার বিক্রি বিলম্বিত হওয়ার মধ্যে এ ফান্ডকে দেশব্যাপী প্রধান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সহায়তা দিতে ব্যবহার করেছেন। তিনি একে পিআইএফ-র প্রকল্পগুলোর জন্য পুঁজি যোগানোর পন্থা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
গত বছর ইস্তাম্বুলে সউদী কনস্যুলেটে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট সউদী ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগীর হত্যাকান্ডের পর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের পরিকল্পনার জন্য পাশ্চাত্য বিনিয়োগ আকর্ষণে সউদী যুবরাজের প্রচেষ্টা সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার পর সাবিক-এর সাথে এ চুক্তি করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন