রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

মেরাজের প্রাপ্তি ও শিক্ষা

শাহ মাহমুদ হাসান | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

নবুয়াতের প্রমান স্বরূপ নবীদের থেকে অলৌকিক কিছু প্রকাশ পেলে তাকে মোজেযা বলে। আমাদের প্রিয় নবীর (সা.) ছিল অসংখ্য মোজেযা। তার মধ্যে মেরাজ গমন একটি বিস্ময়কর মোজেজা। এ জন্যই মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করার আয়াতের শুরুতেই আল্লাহ তায়ালা সুবহানআল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করে মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। সুবহানআল্লাহ শব্দটি আশ্চর্যজনক ঘটনার সময়ই ব্যবহার করা হয়। মেরাজ যে সশরীরে হয়েছিল তা বুঝাতে আব্দুন শব্দ ব্যহার করেছেন। আর আবদ বা বান্দা বলা হয় রুহ ও দেহের সমষ্টিকে। এ শব্দটিও রসূল (সা.) এর মেরাজ সশরীরে হবার প্রমান বহণ করে।

মেরাজের সংজ্ঞা:
মেরাজ আরবি শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ সিঁড়ি বা ঊর্ধ্বরোহণ। ইসলামি পরিভাষায় মুহাম্মদ (সা.) এর সশরীরে কাব শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে উপনীত হয়ে সেখান থেকে সপ্তাকাশ হয়ে আরশে আজিম পৌঁছে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করাকে মেরাজ বলে।
মেরাজের সময় ও প্রেক্ষাপট:
মেরাজ সংঘটিত হবার ব্যাপারে কয়েকটি মতামত রয়েছে। ইমাম নববী ও কুরতুবির মতে, মিরাজের ঘটনা রসূল (সা.) এর নবুয়তপ্রাপ্তির পাঁচ বছর পর ঘটেছে। ইমাম হরবির মতে, ইসরা ও মিরাজের ঘটনা রবিউস সানি মাসের ২৭ তারিখ রাতে হিজরতের এক বছর আগে ঘটেছিল। বেশির ভাগ মতে, রসূল (সা.) ৫২ বছর বয়সে অর্থাৎ নবুয়তের দশম বছর রজব মাসের ২৬ তারিখ দিনগত রাতে রোজ সোমবার মেরাজের আশ্চর্যতম ঘটনাটি সংঘটিত হয়। এ বছরেই হুজুর (সা.) এর চাচা আবু তালেব ও স্ত্রী হজরত খাদিজা (রা.) ইন্তেকাল করেন। এ জন্য এ বছরকে আমুল হুজন বা দুঃখের বছর বলা হয়। রসূল (সা.) কে সান্তনা দান ও দাওয়াতি কাজে উদ্বুদ্ধকরণ নিমিত্তে আল্লাহ তাঁর হাবীবকে মিরাজে ডেকে নিয়ে ছিলেন।
মেরাজের উদ্দেশ্য:
হুজুর (সা.) এর চাচা আবু তালেব ও স্ত্রী হজরত খাদিজা (রা.) ইন্তেকালের পর তাঁর উপরে অত্যাচারের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যায়। এমতাবস্থায় আল্লাহর নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ করিয়ে রসূল (সা.) এর মনোবল চাঙ্গা করাটা ছিল মেরাজের অন্যতম উদ্দেশ্য। এব্যপারে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। (সূরা বানি ইসরাইল : ১)
মেরাজের প্রপ্তি:
মেরাজের ঘটনা থেকে মুমিন খুঁজে পায় সঠিক পথের দিশা, লাভ করে দ্বিনের উপর টিকে থাকার অবিচলতা। মিরাজের ঘটনাকে সত্যায়নের পরেই হযরত আবু বকার (র.) সিদ্দীক উপাধীতে ভূষিত হন। মিরাজে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধু মুহাম্মাদ (সা.) কে স্বীয় সান্নিধ্যে ডেকে নিয়ে উম্মতে মুহাম্মাদীকে পুরস্কার স্বরূপ তিনটি বিশেষ উপহার প্রদান করেন। যা অন্য কোন নবীকে দেওয়া হয়নি। যথা- (১) পাঁচ ওয়াক্ত নামায, যা ফযীলতের দিক দিয়ে ৫০ ওয়াক্তের সমান। (২) সূরা বাকারার শেষোক্ত দুটি আয়াত। যেখানে এই উম্মতের প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত ও অনুগ্রহের কথা বলা হয়েছে। এবং (৩) উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে শিরককারী ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করার সুসংবাদ।
মেরাজের শিক্ষা : রসূল (সা.) মেরাজ থেকে ফিরে আসার পর সূরা বনি ইসরাইলের মাধ্যমে ১৪টি প্রশিক্ষণ উম্মতের সামনে পেশ করেন-
১. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক কোরো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে। আর তোমরা কেবল আল্লাহরই বন্দেগি করো।
২. মা-বাবার সাথে উত্তম ব্যবহার করো। তাদের একজন বা উভয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় যদি তোমাদের সামনে উপনীত হয় তাহলে তাদের সাথে উহ শব্দটিও বলো না। তাদের ধমক দিও না; বরং তাদের সাথে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বলো। আর তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে বিনয়ী থেকো আর বলো ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন শৈশবে তারো আমাদের লালন-পালন করেছেন।’
৩. তোমাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের মনের খবর জানেন।
৪. আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দান কর আর অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের হক আদায় কর।
৫.অপব্যয় কোরো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই, আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।
৬. হকদারদের হক আদায়ে অপারগ হলে তাহলে তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলো।
৭. একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়োনা আবার একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।
৮. দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা কোরো না। কারণ তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা মহাপাপ ।
৯. জেনা-ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চই এটি নিকৃষ্ট কাজ ও মন্দ পথ।
১০. কোনো জীবনকে অন্যায়ভাবে হত্যা কোরো না। কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে তার উত্তরাধিকারীকে আমি এই অধিকার দিয়েছি, তবে সে যেন প্রতিশোধের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করে।
১১. এতিমের স¤পদের ধারে কাছেও যেয়ো না। স¤পদের ব্যাপারে তার বয়োপ্রাপ্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করো আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার স¤পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
১২. ওজনে কখনো কম দিয়ো না। সঠিকভাবে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। এটা উত্তম; এর পরিনাম শুভ।
১৩. যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সেগুলোর পেছনে লেগো না। নিশ্চয়ই চোখ, কান, অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।
১৪. পৃথিবীতে দম্ভভরে চলো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমান হতে পারবে না। এগুলো সবই মন্দ ও ঘৃণিত কাজ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩-৩৮)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন