ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির কাছে সরকারি এবং সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনীর চলমান সংঘর্ষে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন দুই পক্ষের অন্তত ২১ সদস্য। এতে আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ২৭ যোদ্ধা। রোববার জাতিসংঘের দেওয়া তথ্যের বরাতে করা প্রতিবেদনে সংঘর্ষে এই হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে লন্ডনভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্রোহী নেতা জেনারেল খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র সংগঠন লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এলএনএ) ক্রমশ দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে রাজধানী ত্রিপোলি অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে। এ বিষয়ে লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী ফাইয়েজ আল-সিরাজের অভিযোগ করে বলেন, ‘জেনারেল খলিফা দেশে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিদ্রোহীদের এই চেষ্টার জবাব অবশ্যই শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দেওয়া হবে।’
গত দুদিনের বেশি সময় যাবত থেমে থেমে চলছে এ যুদ্ধ। এরইমধ্যে জাতিসংঘ মাত্র দুঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানিয়েছিল। যেন তারা হতাহতসহ এলাকায় থাকা বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে সরিয়ে অন্যত্র নিতে পারেন। যদিও কোনো পক্ষই এতে জাতিসংঘের এমন অনুরোধকে কর্ণপাত করেনি।
চলমান সংঘর্ষে গত শনিবার রেড ক্রিসেন্টের একজন চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাছাড়া বিরোধী এলএনএ বাহিনীর দাবি, এখন পর্যন্ত তারা তাদের ১৪ যোদ্ধাকে হারিয়েছে। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনার ডাক দিয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করেছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ত্রিপোলিতে চলমান এ লড়াই নিয়ে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা দুপক্ষের আলোচনায় বসার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মার্কিন প্রশাসন এও বিশ্বাস করে যে, উভয় পক্ষই চলমান সংঘর্ষকে সংক্ষিপ্ত করে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করবে।’
পম্পেওর বিবৃতিতে আরো বলেছেন, ‘ত্রিপোলিতে এই এক-পাক্ষিক সামরিক কর্মকাণ্ড বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে এবং সমগ্র লিবিয়া বাসীর একটি সুন্দর ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিচ্ছে।’
এ বিষয়ে এক টুইট বার্তায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাস বলেছিলেন, ‘আমি লিবিয়া বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন। গভীর দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে লিবিয়া ছেড়ে যাচ্ছি। আশা করি ত্রিপোলিতে সরকারি বাহিনীর সদস্যরা এই রক্তাক্ত সংঘাত এড়াতে পারবে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘বিদ্রোহীদের বিশাল একটি দল সড়কপথে হামলা চালানোর লক্ষ্যে ক্রমশ রাজধানীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যা নিয়ে আমি ইতোমধ্যে সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ফয়জ-আল-স্যারি এবং বিদ্রোহী নেতা খলিফা হাফতা উপস্থিত ছিলেন।’
অপরদিকে অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ধনী দেশগুলোর গ্রুপ জি-৭। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা লিবিয়ায় যেকোনো ধরণের সামরিক ব্যবস্থার কঠোর বিরোধী। আমরা দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন পদক্ষেপের ওপর আমাদের সমর্থনের কথা পুর্নব্যক্ত করছি।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানী অভিমুখে রওনা দিয়েই ত্রিপোলির একশো কিলোমিটার দক্ষিণের শহর গারিয়ানের নিয়ন্ত্রণ নেয় হাফতারের (এলএনএ) যোদ্ধারা। তাছাড়া ২০১৪ সাল থেকে বন্ধ থাকা রাজধানীর একমাত্র বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে গেছে বলে জানা যায়। যদিও এ খবর নিয়ে এখন পর্যন্ত পরস্পরবিরোধী নানা বক্তব্য দিয়েছে উভয় পক্ষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন