বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলা নববর্ষ সংখ্যা

পদাবলি

| প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

কাজিম রেজা

মনে ছিল

মাঝ গাঙে খালি নৌকা
কেউ নেই
ঢেউয়ে দুলছে
কেন স্থির এক তালে ?
প্রশ্নটি রয়ে গেছিল মনে
কতকাল আগে বিস্তৃত পদ্মার ঢালে ।
অর্থটা দাঁড়ায় নিদারুণ শুকনার দিন-কালে
অর্থবহ হতে থাকে আরো...
সকলে তোমাকে নদী ভুলে যেতে চায় !

শাহীন রেজা
অভিমান

বুকের ভিতর শোকের হানা পালায় হীরক জুঁই
কোথায় খুঁজি বনমালতী বিরান চাষের ভ‚ঁই
সুখের সুবাস হারিয়ে শেষে পেলাম শাওন ছোঁয়া
চিরল দিনের বিরল রোদে জাগছে ধূসর ধোঁয়া
শ্রাবণ বীণে সুর ওঠেনা আকাশ জুড়ে মেঘ
বক্ষে কেবল কষ্ট সুধা বাড়ায় জলের বেগ
ভালবাসার সেই চিঠিটা কোথায় কেমন আজ
নিরেট ভ‚মে আছড়ে পড়ে গন্ধবকুল বাজ
কোথায় তুমি রোদন শাওন কোথায় তুমি নীল
তোমার শোকে এই আমিটা বোধন দিনের চিল
অভিমানে দুঃখ আঁকি অশ্রু লিখি চোখে
কাব্যঘোড়া দারুন হাঁকাই কে আমাকে রোখে।


মাহমুদ কামাল
বরষার জবানবন্দি

কিশোরী যুবতী হয়ে প্রকাশিত যখন প্রচ্ছদ
সেখানে আমার মুখ ভেসে ওঠে উদ্দীপিত স্রোতে
অবিনত আত্মশ্লাঘা ক্রুর মুখ পরোয়া করি না
বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়ে আমিও যুবতী হয়ে উঠি
আমাকে বাধতে এলে ভেঙ্গে দেব তার প্রকৌশল
বাধা দিলে ফুঁসে ওঠে চারুশীল আমার আঁচল
ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় অতিধূর্ত ধর্ষক পুরুষ
কদম যখন ফোটে চলে আসি প্রেমিকের কাছে
জীবনের ভুলগুলো শুধরে নিতে বেগবান হই
অফুরন্ত বয়ে চলে এইপ্রেম হৃদয়ে হৃদয়ে
জানালা দরোজাহীন আলোড়ন কে রোখে আমার
বেনোজলে বুনোকেও পোষমানে তরঙ্গ শরীর
আয়নায় ভেসে ওঠে যার যার প্রিয় মনোনীতা
হৃদয় জাগিয়ে দিয়ে চলে আসি নিজবাসভূমে
পড়ে থাকে দীর্ঘশ্বাস নোনাজল চোখের গভীরে
অধৈর্য হয়ো না প্রেম দেখা হবে আগামী শ্রাবণে।

জাহাঙ্গীর ফিরোজ
মাছের জীবন

তাল-সুপুরির দীর্ঘ ছায়া
একটি দুটি হিজলতরু
পুকুর পাড়ে, খালের ধারে বৃদ্ধ বরুন
ঝরছে কেবল হলুদ পাতা।
দুপুর গড়ায় নিঝুম বিকেল
উড়ন্ত এক মাছরাঙ্গা স্থির
দুইটি ডানা ভীষণ অধীর
জলের মুকুর গাছের ছায়া
ভাঙল হঠাৎ ভাঙল হৃদয়;
মাছের জীবন ভয় শিহরণ
কাঁপছে ঠোঁটে জলের মায়া
শেষ বিকেলে মাছের চোখে
ফুরিয়ে গেলো জলের কায়া।
মাছরাঙ্গাটি বসলো আবার বরুন ডালে।


আল মাহমুদ
নদীর ভিতরে নদী

তোমার গোসল আমি দেখেনি কি একদা তিতাসে?
মনে পড়ে? শ্মশানঘাটের সেই সিঁড়ি ছুঁয়ে নেমে যাওয়া জল
ডোবায় সে পাদপদ্ম। সফরী পুঁটির ঝাঁক আসে
আঙুল ঠুকরে খেতে। নদী যেন নদীতে পাগল।
নদীর ভিতরে যেন উষ্ণ এক নদী স্নান করে।
তিতাসের স্বচ্ছজলে প্রক্ষাললে নেমেছে তিতাসই।
নিজের শাপলা লয়ে খেলে নদী নদীর ভিতরে
ঠাট্টা বা বিদ্রুপ নেই, শ্যেনচক্ষু, নেই চারণের বাঁশি।
অমন নাহানা আর দেখিনাকো; ঘুরি দেশান্তর
সাগরের বেলাভ‚মি ঘুরি আমি, তামাম হাম্মাম;
সিনানের ছবি দেখে ম্যুজিয়মে কাটাই প্রহর
পাই না সে দৃশ্যপট তিতাসের। প্রক্ষালনে নারীর আরাম।
ঈভের শরীর যত কেলি করে প্যাসিফিকে, ভ‚মধ্যসাগরে
নুনের দাহিকা হয়ে জ্বলে তারা অধরে, নধরে।

জামালউদ্দিন বারী
গ্রহণকালের পথ

যে পথ ফেলে এসেছি সে পথে যাবো না আর
পথ পেরিয়ে নতুন পথ
নদীর ওপারে স্মৃতিময় আরেক নদী
ভুলো পথে কখনো হারিয়ে যাই যদি
আমাকে খুঁজো না আর।
অসংখ্য বন্ধুর পথ মরুভূমি
পাহাড় সমুদ্র ডিঙ্গিয়ে
নতুন পথের সন্ধানে নামি।
যে পথ হারিয়েছি সে পথ পাবো না
সে পথে যাবো না আর
চলো নতুন ঠিকানা খুঁজি তুমি আর আমি।
নতুন পথে হাঁটি ছুঁড়ে ফেলি মিথ্যার ফানুস
স্বপ্ন সাধ স্বচ্ছলতা, সবকিছু তুচ্ছ করে
ভালবাসি এই গ্রহণকাল এই মাটি ও মানুষ।

 

সায়ীদ আবুবকর
তোমার পৃথিবী চালায় দস্যুরা
তোমার পৃথিবী চালায় দস্যুরা,
মারছে মানুষ শোষণে-শাসনে;
তাদের পানীয় শোণিতের সুরা,
তবু তুমি চুপ তোমার আসনে।
আকাশ, সমুদ্র, গ্রহ ও নক্ষত্র
ওঠে আর বসে তোমার নির্দেশে;
তোমার রাজত্ব চলছে সর্বত্র,-
এ মহাবিশ্বের শুরুতে ও শেষে;
শুধু মানুষের পৃথিবীর ভার
ছেড়ে দেছো তুমি মানুষেরই হাতে,-
সেখানে দস্যুরা করে কারবার,
লুটায় সভ্যতা অস্ত্রের আঘাতে।
কাঁদছে মানুষ, হাসে শয়তান;
ঘৃণার আগুনে পুড়ে হয় খাক
তোমার পৃথিবী, যেন বা শ্মশান;
তবু তুমি চুপ, নীরব, নির্বাক।


সুমন আমীন
ওগো বৃক্ষ; প্রেয়সী আমার

আমাদের তুমুল বসন্তকালে
বার্লিন প্রাচীরের ন্যায় ভাগ হয়ে যায়
যৌথ প্রেমের জমিন
খরস্রোতা হৃদয় হয় মৃত নরসুন্দা
অকালে ঝরে যায় চন্দ্রাবতী প্রেম।
অত:পর স্বর্গীয় অভিশাপে বিরহী যক্ষের মতো
পতিত স্বপ্ন ঝরে সুকঠিন পৃথিবীর পথে।
চোখের পাপড়ি ফেলার মতো
হৃদয়ের আশির্বাদ বহমান
‘অযুত সুখে পুষ্পিত হোক তোমার বাগান’।
তবু পৃথিবীর দূষিত ইথারে রটে
তোমার ফুল ঝরে যাবার ব্যাথা
যা শ্রবনে কবির আকাশে আজ প্রলয় আঁধার
তবু ভালো থেকো, ওগো বৃক্ষ; প্রেয়সী আমার।


সাইয়্যিদ মঞ্জু
একালের বৈশাখ
চৈত্রের তীব্র খরায় নব এক বৈশাখের আবহ
রৌদ্রের বিচিত্র নৃত্যলীলা প্রকৃতির প্রাঙ্গণে
অস্তমিত যৌবনে হালখাতা- চৈত্র সংক্রান্তি
কালের করাল গ্রাসে মাটির তৈজসপত্র
কবে যে নিজের জাত হারিয়েছে কুমার।
যে সুর মনের দ্যোতনায় -
সে সুর পুরানো ক্যাসেটের অচল ফিতায় বন্দি
ইলিশের শরীরে দাউ দাউ চৈত্র আগুন
গরমভাতেও বহে শীতল জলের তিব্র ঢেউ ।
মরিচপোড়ার ঘ্রাণে আসে একালের বৈশাখ
শাদা আর লাল পেড়ে সাজ
সাড়ম্বরে দ্যাখি এসো হে বৈশাখ এসো ডাক।

হালিম নজরুল
কষ্ট রঙের পাখি

পাখিগুলো বেড়ায় উড়ে এ ঘর ও ঘর।
কারো কারো বাড়ি ঢোকে,
বেরিয়ে যায় কর্ম শেষে।
মনে রাখে কেউ কেউ তা,
স্মরণে যা জায়গা হারায়, বেরিয়ে যায় অন্য বাড়ি।
পাখিগুলোর নিজের কোন ঠিকানা নেই,
অনেকটা ঠিক স্বর্ণলতা-ব্যাঙের ছাতা।
রসাল ডালই নিরাপদ ও নিরাপত্তা।
ঠিকানাটার মতই যে তার নিজের কোন নাম থাকে না,
কেউবা তাকে সুখ বলে,আর কেউবা চেনে দুঃখ নামে।
কষ্ট রঙের পরলে জামা গন্তব্য ঠিক আমার এ ঘর।
এ গাঁয়ে তার নিদ্রা আহার, আপন বাড়ি, জলের নদী।
আমার ঘরে ঢুকলে পরেই এলিয়ে জীবন---
বানায় বাড়ি, ঘর-সংসার; চিরস্থায়ী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন