কূটনৈতিক সংবাদদাতা : ‘সহিংসতার চক্র’ ভেঙে সাম্প্রতিক হামলাগুলোর নেপথ্যের পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় এনে সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গত রোববার রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশে ইইউ মিশনের প্রধানরা এ আহ্বান জানান। সূত্র জানায়, বৈঠকের সময় ইইউ মিশনের প্রধানরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
পরে এক বিবৃতিতে ইইউ মিশনের প্রধানরা বলেন, এ ধরনের হামলা মানবাধিকার, মতপ্রকাশ ও বিশ্বাসের ওপর হুমকিস্বরূপ। তাঁরা মনে করেন, এ ধরনের হামলার কারণে একটি মুক্ত, সহনশীল সমাজ, স্থিতিশীল ও সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের খ্যাতি বিনষ্ট হবে।
বিবৃতিতে কূটনীতিকরা সাম্প্রতিক নৃশংস হামলাগুলোর কথা উল্লেখ করে বলেন, ব্লগার, সংখ্যালঘু, মানবাধিকারকর্মী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিদেশিসহ নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনা ক্রমবর্ধমান। কূটনীতিকরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপের অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা আরো জোরদারের প্রস্তাব দিয়েছেন।
ইইউ মিশনের প্রধানরা আবারও মনে করিয়ে দেন, যেকোনো ক্ষেত্রে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে ইইউ মৃত্যুদ-ের বিরোধী। তাঁদের বিশ্বাস, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, স্বাধীন গণমাধ্যম, সহনশীলতা ও নাগরিক সমাজের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের মোকাবিলা করা সম্ভব।
এদিকে ইইউ রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকা-গুলো জামায়াত করেছে। আর এই কাজে আশ্রয় (শেল্টার) ও সহযোগিতা করছে বিএনপি।
রোববার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকের বিষয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকা-ের বিষয়ে আলাদা আলাদা করে রাষ্ট্রদূতদের বর্ণনা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী রাষ্ট্রদূতদের বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গিয়েছে সাম্প্রতিক সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকা-ের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনগুলো যেমন, জমায়াতুল মুজাহীদিন (জেএমবি), আনসার-আল-ইসলাম, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল জিহাদ-আল-ইসলাম (হুজি-বি), হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশ এবং আল-মুজাহিদ এই হত্যাকা-গুলোর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে বিএনপি এ দলগুলোকে আশ্রয় (শেল্টার) ও সহযোগিতা করছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়াতে বিএনপিকে এই দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য আমরা অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু বিএনপি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাতে বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপি দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের (সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িতদের) সহযোগিতা করছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পাস হওয়া প্রস্তাবে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার যে আহ্বান জানানো হয় তাতেও দলটি কান দেয়নি।
এসময় মন্ত্রী রাষ্ট্রদূতদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরের উগ্রপন্থীদের সঙ্গে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা তাদের নেটওয়ার্কের যোগাযোগ আছে কি-না তা জানতে সজাগ রয়েছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী।
বৈঠকে ইউরোপিয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরো মায়েদুনের নেতৃত্বে বৃটিশ, ফ্রান্স, জার্মানী, নেদারল্যান্ড, ইতালির রাষ্ট্রদূতগণ এবং অন্যান্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে আরও দুই সপ্তাহ আগে ইইউ’র প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ব্রিফিং এর সময় চাওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেশের বাইরে থাকায় বিলম্বে এ ব্রিফিং করা হয়। এতে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। সাম্প্রতিক কয়েকটি হত্যাকা- নিয়ে ইইউভুক্ত দেশগুলো আগে থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন