বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

বিল্ডিং কোড মানার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

যথাযথ বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন তৈরি করায় নগরীতে প্রতিনিয়ত অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটছে। যার কারণে দুর্ঘটনাকালে বের হতে না পেরে বেশিরভাগ মানুষ মৃত্যু বা বড় ধরণের ক্ষতির শিকার হয়। প্রতিটি স্থাপনায় ‘জরুরী ফায়ার এক্সিট’ রাখার কথা থাকলেও ভবন সংশ্লিষ্টরা সেটি মানছে না। কিছু ভবনে নামকাওয়াস্তে জরুরী এক্সিট থাকলেও সেগুলো সব সময় বন্ধ থাকে। এতে এক্সিট ডোর মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অগ্নি দুর্ঘটনা লাঘবে প্রতিটি ভবনে ‘আশ্রয় কেন্দ্র’ রাখাসহ ইলেকট্রিক ও ফায়ার সেফটি থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ফায়ার ও নগর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ঐকবদ্ধ উদ্যোগ নিতে হবে।
গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অডিটোরিয়ামে ‘ফায়ার হ্যাজার্ডস ইন বিল্ডার্স-রিসেন্ট ক্রাইসিস’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে ফায়ার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা ও করণীয় নিয়ে বিশিষ্ট স্থপতি নিজামুদ্দিন আহমেদ, যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাকসুদ হেলালি ও ফায়ার সার্ভিসের সাবেক ডিজি ব্রি.জে. (অব.) আলি আহমেদ খান প্রবন্ধ উপাস্থাপন করেন। এছাড়া প্রকৌশলী ও নগরবিদ ও ফায়ার বিশেষজ্ঞরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র আতিকুল বলেন, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে তা ঠিক করার জন্য মালিক ও সংশ্লিষ্টদের সময় বেধে দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান না করলে তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে। ইতোমধ্যে বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা হাসপাতাল, মার্কেটসহ বড় স্থাপনা পরিদর্শনকালে অনেক সমস্যা পাওয়া গেছে। তিনি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার হুশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, মডেল বিল্ডিং কোড ঘোষণা করা হবে, যা দেখে অন্যরাও ভবন নির্মাণের সময় ইলেকট্রিক ও ফায়ার সেফটির বিষয়টি গুরুত্ব দেবে।
মেয়র বলেন, বড় বড় মার্কেটগুলোতেও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থা নেয়। যার কারণে এসব শিশু ও তাদের অভিভাবকরা খুব সমস্যায় পড়ে। প্রতিটি মার্কেটে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থা রেখে নকশা করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান। ফায়ার সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি পরীক্ষার জন্য বুয়েটের ল্যাব তৈরি করা দরকার।
বুয়েটের অধ্যাপক বিশিষ্ট স্থপতি নিজামুদ্দিন আহমেদ বলেন, বেশিরভাগ অগ্নি দুর্ঘটনায় মানুষ ভবন থেকে বের হতে না পেরে মৃত্যু বা বড় ধরণের ক্ষতির শিকার হয়। নগরীর ভবন ও স্থাপনাগুলোতে দ্রুত বের হওয়ার উপায় বা ‘জরুরী এক্সিট’ না থাকায় বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পরপর ফায়ার সার্ভিসের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে প্রাথমিক পর্যায়ে নিজস্ব উপায়ে অগ্নি নির্বাপনের কাজ শুরু করতে হবে। প্রতিটি কক্ষ থেকে নিরাপদে বের হওয়ার ব্যবস্থা বা রুট রাখতে হবে। সিঁড়ির গোড়ায় দোকান নির্মাণ বা নিরাপত্তারক্ষীদের থাকার জায়গা না বানিয়ে ‘ইমার্জেন্সি ফায়ার এক্সিট’ রাখতে হবে। তিনি বলেন, জরুরী এক্সিট সবসময় খোলা রাখা, প্রয়োজনে নিরাপত্তার জান্য সিকিউরিটি ব্যবস্থা উন্নত করা, অগ্নি সম্পর্কিত বিভিন্ন চিহ্ন বা প্রতীক দৃশ্যমান জায়গায় টাঙানোর মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাকসুদ হেলালি বলেন, ৪৬ শতাংশ আগুন বেখেয়ালে লাগে। যার কারণে আগুন লাগার পর দ্রুততর সময়ে মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খায়। তিনি বলেন, আগুন লাগা ও ছড়িয়ে পড়ার কারণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা, ফায়ার ইকুপমেন্টগুলোর ব্যবহার জানা, নিয়মিত তদারকি করা, ধোয়ার উপস্থিতি অ্যালার্মের ব্যবস্থা রাখা, প্রতিটি ভবনে আশ্রয় কেন্দ্র রাখা। বহুতল ভবনে প্রতি ৫ তলার পর একটি আশ্রয় কেন্দ্র রাখা। দুর্ঘটনার পর সবাই আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেবে এবং সেখান থেকে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে পরিপূর্ণভাবে নিরাপদ ভবন নেই বললেই চলে। ভবন মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা যথাযথ নিয়মের তোয়াক্কা করে এসব ভবন তৈরি করছে। তিনি বলেন, বাসা-বাড়ি ও গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোতে ভালো, প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট, প্রকৌশলী ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্লান ও নকশা করাতে হবে।
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক ডিজি ব্রি.জে. (অব.) আলি আহমেদ খান বলেন, দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন সর্বপ্রথম উদ্ধারে যাওয়ার সুযোগ পায়। তাই তাদেরকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। ফায়ার সার্ভিস প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভোলান্টিয়ার তৈরি করছে। তিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ উচ্চ শিক্ষা কারিকুলামে ফায়ার সংক্রান্ত কোর্স চালুর কথা বলেন।
সূচনা বক্তব্যে স্থপতি কাজী এম আরিফ বলেন, ২০১৮ সালে সারাদেশে ৫৩টি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। রাজধানীর ৭১ শতাংশ সড়কে ফায়ার ট্র্যাক ঢোকার ব্যবস্থা নেই। তিনি ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, রাজউক, ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে অগ্নি দুর্ঘটনা লাঘবে পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানান।
প্রফেসর জামিলুর রেজা বলেন, সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে। সরকার ও নগর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সেটি গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বিল্ডিং কোড আপডেটের পাশপাশি প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন