নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে
দামুড়হুদার একমাত্র পৌরসভা দর্শনা পৌরসভা এলাকায় স্থাপনা নির্মাণে মানা হচ্ছে না বিল্ডিং কোড। রাস্তা, ড্রেন, পানির লাইন, বিদ্যুৎ লাইন ও পোল বসানোর জায়গা না রেখে জমির সীমানা ঘেঁষে নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়ি-ঘর দোকান-পাটসহ নানা স্থাপনা। ফলে একদিকে পৌরসভা হারাচ্ছে রাজস্ব অপরদিকে ভোগান্তিতে পড়ছে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী। সংশ্লিষ্টদের স্বজনপ্রীতি, তদারকির অভাব ও অনিয়মের কারণে বিভিন্ন স্থানে অনুমোদন ছাড়াই স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ। জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী দর্শনা ইউনিয়ন পরিষদটি পুনর্বিন্যাস করে ১৯৯১ সালে বারোটি গ্রাম/মহল্লা নিয়ে গঠিত হয় দর্শনা পৌরসভা। শুরুতেই এটি একটি তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর ২০১১সালের দিকে পৌরসভাটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হয়। দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা নানা অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। তার মধ্যে পৌর এলাকায় স্থাপনা নির্মাণে ঠিকমতো নিয়ম না মেনে বিভিন্ন স্থানে চলছে স্থাপনা নির্মাণ। মানা হচ্ছে না বিল্ডিং কোড। রাস্তা, ড্রেন, পানির লাইন, বিদ্যুৎ লাইন ও পোল বসানোর জায়গা না রেখে জমির সীমানা ঘেঁষে নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়ি-ঘর দোকান-পাটসহ নানা স্থাপনা যার ফলে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আশপাশে বসবাসকারীসহ এলাকার সাধারণ মানুষকে। রাস্তার জায়গা না রেখে একবারে জমির সীমানা ঘেঁষে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করায় বিভিন্ন স্থানের রাস্তাগুলো এত সরু যেখান দিয়ে স্বাভাবিকভাবে অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, ফায়ার সার্ভিসের একটি ছোট গাড়ি চলা তো দূরের কথা সে রাস্তা দিয়ে রিক্সা/ভ্যানও ভালভাবে চলাচল করতে পারে না। ফলে ওই এলাকার কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে বহনেরও কোন সুযোগ নেই। এছাড়া এসব এলাকায় কোথাও অগ্নিকা- বা অন্য কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের একটি ছোট গাড়িও ঢোকার কায়দা নেই। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাড়িঘর নির্মাণ করায় আবাসিক এলাকাগুলোতে ক্রমশই ঘিঞ্জি পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া বর্ষাকালে রাস্তা ও অন্যের জমির কিনারা ঘেঁষে নির্মিত ঘরের ছাদ ও টিনের চালার পানি অন্যের বাড়ি/জমি ও রাস্তার উপর পড়ায় একদিকে যেমন পাশের বাড়ি/জমিওয়ালাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় অপরদিকে বিঘœ ঘটে পথচারীদের চলাচলে। আর অনবরত পানি পড়ার ফলে রাস্তাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে সম্প্রতি রেলবাজারে কিছু বাণিজ্যিক ভবন নির্মিত হয়েছে পুরো বর্ষাকাল জুড়ে যার ছাদের পানি নালা দিয়ে রাস্তার উপর পড়ে। তাতে বাজারের রাস্তা দিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতরাসহ সাধারণ মানুষের চলাচলের অসুবিধা হয়। এছাড়া অনেক উপর থেকে রাস্তায় গড়া পানি ছিটকে নিচের দোকানে প্রবেশ করে বিনষ্ট হয় দোকানের মালামাল। পৌর এলাকায় বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণের সময় গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রাখার নিয়ম থাকলেও তা না মেনেই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের দর্শনা বাসস্ট্যান্ড থেকে পুরাতনবাজার পর্যন্ত রাস্তার ধার ঘেঁষে বেশ কিছু বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মিত হয়েছে। যেখানে যানবাহন পার্কিংয়ের কোন জায়গা নেই। ফলে এসব স্থানে অবস্থিত বিভিন্ন অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসা মানুষেরা পার্কিংয়ের জায়গার অভাবে তাদের যানবাহনগুলো রাস্তার উপর রাখতে বাধ্য হয়। তাতে রাস্তায় চলাচলকারীসহ এসব প্রতিষ্ঠানে আসা মানুষেরা দুর্ভোগে পড়ে। নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় অনেক সময় বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ইত্যাদি চুরির ঘটনাও ঘটে। এমনই একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে দর্শনা রেলবাজারে। যে ভবনের উপরতলায় রাষ্ট্রায়ত্ব তিনটি ব্যাংক ও নিচতলায় কয়েক ডজন দোকানের অবস্থান হলেও নেই গাড়ি পার্কিংয়ের কোন জায়গা। পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিল্ডিংয়েরও একই অবস্থা। কাজে আসা মানুষেরা তাদের যানবাহন রাস্তার উভয় পাশে রাখার ফলে এ স্থানটিতে প্রায়ই যানজট লেগেই থাকে। ফলে এ স্থানটি পার হতে যানবাহন ও পথচারীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। জায়গার অভাবে রাস্তার উপর বিভিন্ন যানবাহন পার্কিংয়ের ফলে দিনের বেশিরভাগ সময়ই চলাচলের রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। রাস্তার সংকীর্ণতার কারণে গত বছর গাড়ি চাপায় এই স্থানে এক সাইকেল আরোহী স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও সারা বছরই ছোটখাটো দুর্ঘটনা তো ঘটেই। পৌরসভা এলাকায় স্থাপনা নির্মাণে নির্দিষ্ট ফি প্রদান সাপেক্ষে স্থাপনার নকশা অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়মের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেতেই তা মানা হয় না। এতে একদিকে যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর অপর দিকে বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দর্শনা পৌরসভা। এ ব্যাপারে জানতে দর্শনা পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুস সামাদের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় কিছু জানা সম্ভব হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন