বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মঙ্গোলিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো লাল-সবুজরা। বিজয়ী দলের মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা, মার্জিয়া ও ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুন একটি করে গোল করেন। আগামী শুক্রবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখী হবে লাওসের। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে টুর্নামেন্টকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এমনটাই বলেছিলেন লাল-সবুজের কোচ গোলম রব্বানী ছোটন ও অধিনায়ক মিশরাত জাহান মৌসুমী। লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশের আর মাত্র একটি ম্যাচ বাকি। সবকিছু ঠিক থাকলে ফাইনালে লাওসকে হারিয়ে ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশের মেয়েরা।
তবে সেমিফাইনালেও বাংলাদেশের খেলায় দেখা গেছে গ্রুপ পর্বের ম্যাচের মতই ফিনিশিংয়ের অভাব। এই অভাব যেন আরো ঘনিভূত হচ্ছে। ফিনিশিং নিয়ে বেশ ক’দিন ধরে কাজ করলেও তা ঘুচাতে পারছেন না কোচ ছোটন। কাল ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে খেলে বাংলাদেশ অন্তত প্রায় ডজনখানেক গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু তা থেকে হয়েছে মাত্র তিনটি।
ম্যাচে দেখা গেছে মারিয়া-মনিকারা বার বার বল নিয়ে প্রতিপক্ষের বিপদ সীমানায় গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন গোল করতে। তা না হলে বাংলাদেশের জয়ের ব্যবধানটা আরো বড় হতো।
মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলে দু’টি পরিবর্তন আনেন কোচ ছোটন। ইনজুরির কারনে গ্রুপ পর্বের দু’ম্যাচের স্কোরার কৃষ্ণা রানী সরকার ও সিরাত জাহান স্বপ্না সেমিফাইনালে মাঠে নামতে পারেননি। তাদের পরিবর্তে একাদশে জায়গা করে নেন মিডফিল্ডার মার্জিয়া ও ফরোয়ার্ড সাজেদা খাতুন।
ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয় স্বাগতিকরা। প্রথম মিনিটে বল নিয়ে মঙ্গোলিয়ার বক্সে ঢুকে পড়েন সাজেদা। কিন্তু বক্সে জটলার মধ্যে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি তিনি। বল ক্লিয়ার করে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ। মিনিট ছয়েক পর ডানপ্রান্ত থেকে মিডফিল্ডার সানজিদার বাড়িয়ে দেয়া বল বক্সে পেয়েও সুযোগ হাতছাড়া করেন ডিফেন্ডার সামসুন্নাহার। ৩৮ মিনিটে কর্ণার কিক থেকে বল পেয়ে মনিকার হালকা টাচে বক্সে বল পান মৌসুমী। কিন্তু লক্ষ্যে স্থির থাকতে পারেননি তিনি। ৪২ মিনিটে ডানপ্রান্তে বল পান মৌসুমি। কিন্তু এবারো সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। অবশেষে গোল পায় লাল-সবুজরা। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে (৪৫+১ মিনিট) এগিয়ে যায় তারা। এসময় সাজেদার পাসে পাওয়া বলে হেড নিয়ে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে মনিকা চাকমা ডি-বক্সের মাথা থেকে বাঁ পায়ের দূর্দান্ত শটে মঙ্গোলিয়ার গোলরক্ষক সেনজাভের মাথার উপর দিয়ে নিশানা ভেদ করেন (১-০)।
দ্বিতীয়ার্ধেও মঙ্গোলিয়ার ১০ ফুটবলার ব্যস্ত ছিলেন বাংলাদেশের আক্রমণ ঠেকাতে। ম্যাচের ৫৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মারিয়া মান্ডার জোড়ালো শট গোলরক্ষক সেনজাভের হাতে লেগে বাইরে চলে যাওয়ায় হতাশার গল্পটা আরো বড় হয় বাংলাদেশের। বিরতির পরও বারবার সুযোগ হাতছাড়া হলেও ৬৯ মিনিটে আর ভুল করেননি স্বপ্নার পরিবর্তে একাদশে ঠাঁই পাওয়া মার্জিয়া। প্রথম গোলদাতা মনিকা চাকমার ছোট পাস ধরে ডান পায়ের দারুন শটে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুন করেন তিনি (২-০)। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে আরো একবার গোলের আনন্দের মেতে ওঠে বাংলাদেশ শিবির। এসময় মনিকা চাকমার পাসে বল পান সামসুন্নাহার। তিনি নিজে শট না নিয়ে বলটা বাড়িয়ে দেন সতীর্থের উদ্দেশ্যে। বক্স লাইন থেকে ডান পায়ের কোনাকোনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন বদলি ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুন (৩-০)। তার এ গোলেই সহজ জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন