বাংলাদেশ বলতেই মনের কোনে ভেসে ওঠে লাল-সবুজের চিরচেনা এক ক্যানভাস। আমাদের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বের প্রতীক এই লাল-সবুজ ধারণ করে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও। সেই সঙ্গে হাতে হাত ধরে শক্তির প্রতীক হিসেবে জার্সিতে ঠাঁই মিলেছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের প্রতিচ্ছ¡বিও। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ জার্সি কি সত্যিই বাংলাদেশ দলকে চিত্রায়িত করে? নেই শহীদের রক্ত লালের ছিঁটেফোঁটাও, নেই গগন কাঁপানো গর্জনরত জাতীয় পশু বাঘের মুখাবয়ব!
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ জার্সি উন্মোচন করা হয় গতপরশু বিকেলে, মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এর পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরব হয়ে ওঠে জার্সি নিয়ে আলোচনায়। জার্সির রং ও ডিজাইন সন্তুষ্ট করতে পারেনি বেশির ভাগ টাইগার সমর্থককেই। বিশ্বকাপের মূল জার্সিতে লাল রঙ না থাকায় উন্মোচনের পরই সমালোচনা মুখর হয়ে উঠেছিলেন ভক্ত-সমর্থকরা। এবার মানুষের আবেগের কথা ভেবে সেই জার্সির ডিজাইনে বদল আনতে যাচ্ছে বিসিবি। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী এই খবর নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুটি জার্সির ডিজাইন করা হয়। অ্যাওয়ে জার্সি পুরোটাই লাল। তবে সামনে বাংলাদেশ লেখায় ও বাহুতে আছে সবুজের মিশেল।কিন্তু হোম জার্সিতে আছে কেবলই সবুজ, নেই লাল রঙের মিশেল। ওই জার্সি পরেই গতপরশু অফিসিয়াল ফটোসেশনে অংশ নেন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ সমালোচনা মুখর হয়ে উঠেন। পাকিস্তানের জার্সির সঙ্গে মিল খুঁজে চলতে থাকে জার্সি বদলের দাবি।
সেই সমালোচনার পর ঐ দিন মধ্যরাতেই একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে সবুজ জার্সি বদলে ফেলার কথা জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। জার্সি উন্মোচন ও ফটোসেশনের পর বিসিবি প্রধান জানিয়েছিলেন, এই জার্সি তিনি আগে দেখেননি, তবে ডিজাইন তার ভালোই লেগেছে। তবে রাতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে তিনি বলেন, ‘জার্সি উন্মোচনের সময় আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমি তখনই বলেছিলাম এটা আমি আগে দেখিনি। এই প্রথম দেখছি। আমাকে যখন প্রশ্ন করা হয় তখনই সন্দেহ জাগে এই প্রশ্ন কেন, পরে গিয়ে আমি দেখলাম যে সবুজের মধ্যে কোথাও লাল নেই। আরেকটা জার্সি যেটাতে লাল-সবুজ আছে। আমি বলেছি লালটা রেখে সবুজটা এক্ষুনি বদলাতে হবে। যাইহোক ভুল করেছে ওরা। বিকেলেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে জার্সিটা আমরা বদলে দেব।’
সভাপতির এই সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছেন বিসিবি সিইও। গতকাল সকালে তিনি জানান সবুজ জার্সিতে আসছে লাল রঙের মিশেল, ‘সবুজ জার্সির নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হবে। সেখানে লাল রঙ নেই, এখন লাল রঙ কোথাও জুড়ে দেওয়া হবে।’
তিনি জানান শুরুতে বাংলাদেশ লেখা অংশে লাল রঙেই রেখেছিলেন তারা, কিন্তু আইসিসির গাইডলাইনের কারণে সেটা বদলাতে হয়েছিল, ‘আসলে শুরুতে লাল রঙ ছিল। বাংলাদেশ লেখার মধ্যেই লাল রঙ ছিল। কিন্তু এটা যখন আইসিসির কাছে পাঠানো হয় অ্যাপ্রুভালের জন্য তখন একটা আপত্তি আসে। সম্ভবত আইসিসির একটা গাইডলাইন আছে যে লেখার মধ্যে সাদা থাকতে হবে। এখন লেখা ছাড়া অন্য কোথাও লাল রঙ দিয়ে সেটা বদলে ফেলা হবে।’
আমি নিশ্চিত ছিলাম না। আমি তখন সবাইকে নিয়ে ঘরে গেলাম এবং সব পরিচালকদের বললাম যে জার্সি দুটি নিয়ে আসতে। এরপর লালটি দেখলো এবং সবাই পছন্দ করলো আর এটি (সবুজ জার্সি) দেখে শেখ সোহেল প্রথম আমাকে বললো যে এটির মধ্যে তো লাল নেই। দ্রুতই আমরা আইসিসির সাথে যোগাযোগ করলাম। দুটো ব্যাপারে। যেটি আমরা আগে পাঠিয়েছি এবং যেটার লেখার মধ্যে লাল লেখা ছিল সেটি কোনোভাবে অনুমোদন দেয়া যায় কিনা। আর যদি অনুমোদন না দেয়া হয় তাহলে তো আমাদের বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। আজকে (গতকাল) আমাদের বলেছে যে উই ক্যান চেঞ্জ এবং আমরা ঠিক করেছি যেহেতু আইসিসির একটি বাধ্যবাধকতা আছে সেহেতু আমরা ইচ্ছা করলে আইসিসি যেটি বলেছে সেটিও করতে পারি। আগেরটাতেও যেতে পারি। কিন্তু আমরা কোনো জটিলতায় যেতে চাচ্ছি না।’
কেমন হতে পারে নতুন জার্সিটি তারও একটি আভাস দিয়েছেন নাজমুল হাসান। গতকাল বিকেলে ধানমণ্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি বস জানান, ‘কালকেই আকরামের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল যে আমরা নতুন ডিজাইন চাই। তখন আমাদের এটি (নতুন জার্সি) ডিজাইন করা হয়। আগের যে লালটি ছিল তার রিভার্স। নতুন জার্সিতে সবুজ রঙের ওপর থাকবে লালের ছোঁয়া। দুই হাতায় থাকছে লাল রঙ। বুকে লাল রঙের একটি শেড থাকবে। সেখানে সাদা রঙে লেখা থাকবে বাংলাদেশ। আর ট্রাউজারেও লাল স্ট্রাইপ থাকবে। এটি হলো বেসিক। সুতরাং এখানে কোনও দ্বিধান্বিত হওয়ার সুযোগ নেই।’
সিইও সুজন এটিও জানিয়েছেন, বাজারে ছড়িয়ে পড়া অফিসিয়াল সবুজ রঙের জার্সিগুলোও বদলে ফেলা হবে। এ ব্যাপারে জার্সি বিক্রয়ের সত্ত¡ পাওয়া স্পোর্টস এন্ড স্পোর্টজের সত্ত¡াধিকারী মেহতাবউদ্দিন সেন্টু জানান, জার্সি বদলের ব্যাপারে তারা এখনো কোন নির্দেশনা বিসিবি থেকে পাননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন