শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ফুলবাড়ীতে সরকারী খাদ্য গুদামে ধান ক্রয়ে লটারীর মাধ্যমে কৃষকের ভাগ্য নির্ধারণ

সরকারী খাদ্যগুদামে ধান দিতে পারবেননা প্রায় ৩১ হাজার কৃষক

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৯, ৪:২০ পিএম

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সরকারী ভাবে সরাসরি কৃষকের কাছে ধান ক্রয়ের সরকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তরের আয়োজনে কৃষি কার্ডভূক্ত কৃষকদের মাঝে লটারীর মাধ্যমে প্রথম ধাপে ৪১২জন কৃষক নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুস সালাম চৌধুরী।
গত (২১মে) মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলা চত্ত্বরে চলতি বোরো ধান সংগ্রহ ২০১৯ইং আওতায় সরাসরি প্রকৃত কৃষকদের নিকট হতে ধান সংগ্রহ উপলক্ষে ৩২২৫৫জন কৃষককের মধ্যে আগ্রহী ৪ হাজার ৫শত ৫৯জন কৃষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৮৩০ জনের কাছ থেকে বোরো ধান সংগ্রহের জন্য উম্মুক্ত লটারির মাধ্যমে প্রথম ধাপে ৪১২জন কৃষককে নির্বাচিত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জু রায় চৌধুরী ,উপজেলা কৃষি অফিসার এটিএম হামিম আশরাফ,উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ নাসিম আল আকতার,উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রুম্মান আখতার,উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোছাঃ হাসিনা ভুইয়া,উপজেলা প্রকৌশলী শাহিদুজ্জামান,সমবায় অফিসার হাফিজুল ইসলাম,সহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ।
এবারে উপজেলার ৩২২৫৫ জন কৃষকের মধ্যে সরকারের নিকট ধান বিক্রি করতে সুযোগ পেয়েছে মাত্র ৮২২ জন কৃষক। এতে সরকারের নিকট ধান বিক্রি থেকে বঞ্চিত হয়েছে ৩১৪৩৩ জন কৃষক। অনেক শ্রম আর ঘামের গন্ধে মোড়ানো বোরো ধানের অব্যাহত দরপতনে খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক এখন দিশেহারা। আসছে আমন রোপনের খরচ যোগাতে তাদেরকে আবারও দাদন ব্যবসায়ীদের নিকট চড়া সুদে টাকা নিতে হবে ।
কৃষকের অভিযোগ প্রতিবারেই সরকার ন্যায্য মূল্যে ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কৃষকের নিকট থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের নামে,খাদ্য গুদামের কতিপয় কর্মকর্তাগণ ফড়িয়া ও মজুদ দারের নিকট থেকে ধান ক্রয় করার কারণে বেশীরভাগ সময় প্রকৃত কৃষকদের হয়রাণী হতে হয়। এতে করে কৃষি কার্ডভূক্ত সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক যে অল্প সংখ্যক কৃষক খাদ্য গুদামে ধান বিক্রির তালিকাভূক্ত হয় তারাও সরকারের নিকট ধান বিক্রি থেকে বঞ্চিত হয়।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোঃ নাসিম আল আকতার বলেন, সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয় করার জন্য উপজেলার দুটি খাদ্য গুদামে মোট ৪৩৩ মে.টন ধান ক্রয়ের বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। ধান ক্রয়ের নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিজন কৃষকের নিকট থেকে ১৩মণ(৫২০কেজি)ধান কিনতে হবে। সে অনুযায়ী পৌরসভার ৪৩জন কৃষকের মধ্যে ২১ জন,উপজেলার ১নং এলুয়াড়ী ইউপির ১৫৯জন কৃষকের মধ্যে মোট ৭৯জন,২নং আলাদীপুর ইউপির ১০৫ জন কৃষকের মধ্যে ৫২জন,৩নং কাজিহাল ইউপির ১৬৫জন কৃষকের মধ্যে ৮২জন,৪নং বেতদিঘী ইউপির ১১৭জন কৃষকের মধ্যে ৫৮জন,৫নং খয়েরবাড়ী ইউপির ৪৬জন কৃষকের মধ্যে ২৩জন,৬নং দৌলতপুর ইউপির ৭৭জন কৃষকের মধ্যে ৩৮জন ও ৭নং শিবনগর ইউপির ১১৮ জন কৃষকের মধ্যে ৫৯জন মোট ৪১২জন কৃষককে প্রথম ধাপে লটারীর মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে। ২য় ধাপে বাকী ৪২৮ জন কৃষকের কাজ থেকে বোরা ধান সংগ্রহ করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এটিএম হামিম আশরাফ জানান,এবারে উপজেলার ১৪৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ১৪৭০০হেক্টর জমিতে। কৃষি বিভাগের সার্বক্ষণিক তদারকি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সচেতনতা তৈরীর মাধ্যমে এবারে হেক্টর প্রতি ৬.৫টন ধান উৎপাদন করেছে এই এলাকার কৃষক। তিনি আরও জানান, এবারে উপজেলায় প্রায় ৯০হাজার মেঃটন থেকে ৯৮হাজার মেঃটন ধান উৎপাদনের সম্ভাবণা রয়েছে। পূর্বের হিসেব অনুযায়ী এখানে বছরে ১লাখ ৬০ হাজার ৭৩১ মে,টন ধান উৎপাদন হয়। তার মধ্যে স্থানীয় ভাবে খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে ৪৭ হাজার ৬৩৩ টন ধান প্রয়োজন হয়। কিন্তু এবার বোরো মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৯৮ হাজার মে.টন ধান।
এদিকে কৃষকের কাছে গিয়ে সরেজমিনে জানা যায়,সরকার সরাসরি ৮৩০ জন কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয় করছে মাত্র ৪৩৩মে.টন । এতগুলো প্রান্তিক কৃষক ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রি থেকে বঞ্চিত হলে,ধীরে ধীরে কৃষক তার কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাবে এমনটিই আশংকা উপজেলার বেশীরভাগ কৃষকের। ফলে কৃষকের কথা চিন্তা করে বরাদ্ধ বাড়াতে সরকারী সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছেন এই এলাকার বাকী ৩১৪৩৩ জন কৃষক ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন