শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দ্রুততম সময় শেষ হবে কবে

আড়াই বছরেও হয়নি স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক কমিটি হয়েছে ৩১ মাস আগে। ৭ নেতার হাতে সংগঠনটির দায়িত্ব তুলে দিয়ে দ্রুততম সময়ে তা পূর্ণাঙ্গ করতে বলা হয়। ৩৬ মাস (৩ বছর) মেয়াদের কমিটি ৩১ মাস অতিক্রম করলেও এখনো সেই দ্রুততম সময় শেষ হয়নি। আংশিক কমিটির নেতারা তাদের নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারবেন এমন আশাও করতে পারছেন না সংগঠনটির পদপ্রত্যাশীরা। অথচ স্বেচ্ছাসেবক দলকে গতিশীল করতে এবং রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর ছাত্রদলের সাবেক শীর্ষ নেতাদের দিয়ে আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সময়ে ফখরুল ইসলাম রবিনকে সভাপতি ও গাজী রেজওয়ানুল হক রিয়াজকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং এসএম জিলানীকে সভাপতি ও নজরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি করা হয়। কমিটি গঠনের পরপরই দ্রুততম সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দেয়া হয় মূল্য দল থেকে এবং নেতৃত্বে আসা নেতারাও দ্রুততম সময়ে করার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ আড়াইবছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান নেতৃবৃন্দ। এই দীর্ঘ সময়েও শেষ হচ্ছে না তাদের ‘দ্রুততম’ সময়।
যদিও আবারও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল জানিয়েছেন, দ্রুততম সময়ে তারা কমিটি ঘোষণা করবেন। সবকিছুই প্রস্তুত আছে, এখন অপেক্ষা কেবল ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা। কারণ যারা ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে বিদায় নেবেন তারা স্বেচ্ছাসেবক দলে ঠাই পাবেন। স্বেচ্ছাসেবক দল সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় সংগঠনটির সাংগঠনিক কার্যক্রম ভেঙে পেড়েছে। বেড়েছে অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব এবং আধিপত্য বিস্তার। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, শীর্ষ নেতাদের গা-ছাড়া ভাবের কারণেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হচ্ছেনা। তাদের দাবি- একসময়ের তারুণ্য নির্ভর ও সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবক দলের অবস্থা এখন করুণ পর্যায়ে। সংগঠনের গতি বৃদ্ধি ও ‘চেইন অব কমান্ড’ ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় আংশিক ও ঢাকা মহানগরীর (উত্তর-দক্ষিণ) কমিটি ঘোষণা করেছিল বিএনপির হাইকমান্ড। সেসময় একমাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যা হওয়ার তাই হয়েছে। যে বা যারা আংশিক কমিটির নেতৃত্বে এসেছেন তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। পদে আসা নেতারা ব্যক্তিগত প্রয়োজন ব্যতীত সংগঠনে কারো খোঁজখবর রাখছেন না। হচ্ছেন না দলীয় কার্যালয়মুখী। কর্মসূচি পালন করছেন দায়সারাভাবে। দীর্ঘদিনেও কমিটি না হওয়ায় হতাশ হয়ে অনেকেই নিষ্ক্রিয় হচ্ছেন রাজনীতি থেকে।
পদপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা আলপাকালে বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পাবেন এমন আশায় থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি বিরক্ত। রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। শীর্ষ নেতারা নিজেরাই কর্মসূচি পালনে তেমন তৎপর নয়, আর দায়সারাভাবে যেসব কর্মসূচি পালন করে সেখানেও নেতাদের ডাকে হাতেগোনা কয়েকজন অংশ নিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা জানান, আগের কমিটিতে তাদের পদ ছিল কিন্তু বর্তমানে প‚র্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় কোনো পরিচয় দেয়া যায় না। কমিটির সিনিয়র নেতাদের ভাব এমন যেন পদ প্রত্যাশীরা প্রতিদিন তাদের কাছে গিয়ে জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করবে! তাদের আচরণ দেখলে মনে হয়, তারা স্বেচ্ছাসেবক দলের মালিক। অথচ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যাদেরকে বিশ্বস্ত মনে করে সংগঠনের দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। শীর্ষ নেতারা এমন হলে এভাবে তো রাজনীতি করা যাবেনা। সংগঠন শক্তিশালী করতে হলে যোগ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের সমন্বয়ে যত দ্রুত সম্ভব প‚র্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে দল আরো বেশি সঙ্কটে পড়বে।
জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমরা অপেক্ষা করছি ছাত্রদলের কমিটির জন্য। কারণ ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে যারা বিদায় নেবে তাদেরকে স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলে জায়গা করে দিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটি করার পরপরই ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) লন্ডনে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছিলেন। পরে স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি ও আমি দু’জনেই দীর্ঘদিন জেলে ছিলাম। এরপর ম্যাডাম জেলে গেলেন, নির্বাচনসহ নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। তবে এখন সবকিছু শেষ পর্যায়ে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন