শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

বিপুল অংকের কর ফাঁকি দিচ্ছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো

প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ঃ বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে বিদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছর প্রায় ৭০০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিচ্ছে। ১৮টি দ্বি-পাক্ষিক ‘অপচুক্তি’র মাধ্যমে বিশ্বের ১৫টি দেশের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে এ টাকা নিয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে গত শনিবার একশন এইড আয়োজিত ‘দুর্বিণীত কর-আঘাত, অসমর্থিত বাজেট’বিষয়ক আলোচনা সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জাতিসংঘের বা বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার যে নীতিমালা আছে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, সেটি যদি আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে ফাঁকির পরিমাণ কমিয়ে আনা যাবে। একটি আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে করতে হবে। সেটি না হলে অন্য দেশ সুযোগ বেশি দিয়ে বিনিয়োগকারীদের নিয়ে যাবে। তাই আন্তর্জাতিক মানদÐ থাকলে এবং সবাই সেটি মানলে আমরা কর আদায় বেশি করতে পারব।
সভায় একশন এইড’র পক্ষ থেকে ‘অপচুক্তি’ নামের একটি প্রতিবেদনের ফলাফল তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, মূলত রাজনৈতিক ও সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো নিয়ন্ত্রণমূলক ‘অপচুক্তি’ করিয়ে এই আর্থিক সুবিধা নিচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পুনরায় বিনিয়োগের কথা থাকলেও কর্পোরেটরা লাভকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। এ দেশ থেকে মুনাফা নেয়ার পাশাপাশি ফাঁকি দেয়া করের টাকাও নিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
অনুষ্ঠানে ‘অপচুক্তি’ নামের গবেষণাটি তুলে ধরেন একশন এইড বাংলাদেশের ডিরেক্টর আজগর আলী সাবরি। গবেষণার ফলফলে বাংলাদেশে বাজেট, উন্নয়ন ও নীতিতে কি প্রভাব ফেলছে সেটি তুলে ধরা হয়। গবেষণাটিতে ৫শ’র বেশি আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ নিয়ে সমীক্ষা করা হয়। যেখানে দেখা যায়, বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই সর্বোচ্চসংখ্যক ১৮টি অপচুক্তি আছে এবং বেশি কর ফাঁকি হচ্ছে। এই চুক্তিগুলোর একটি ধারার কারণে বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের টাকার উপর করের লভ্যাংশ নিতেও বাংলাদেশের ক্ষমতা সীমিত হয়েছে। কর ফাঁকির এই টাকা দিয়ে প্রতি বছর বাংলাদেশে ৩৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যেত, বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আশির দশকে আমাদের বেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দরকার ছিল। তাই বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডেকে আনতে হয়েছে। সেই সুযোগে তারা তাদের মতো করে চুক্তি করেছে এদেশের নীতি-নির্ধারকদের দিয়ে। আমাদের দেশে কর ফাঁকি দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এটা হতে পারে না।’
তিনি আরো বলেন, একটি বড় টেলিফোন প্রতিষ্ঠান মাত্র ৪৫০ জন লোক নিয়ে কাজ করছে। তারা আমাদের মানুষের জন্য কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারেনি। আমি যদি জামাই আদর না করি তবে সে আসবে না, এটা ভাবার সময় এখন আর নেই। এখন চুক্তিগুলো পূর্ণ মূল্যায়ন বা বাতিল করা উচিত, বলেন আব্দুল মজিদ।
বাংলাদেশের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, যে দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে, সে দেশে যদি আমাদের বিনিয়োগ করা যেত তবে আমরা চুক্তির আলোকে কথা বলতে পারতাম। চুক্তি থেকে কীভাবে সুবিধা নিতে হবে সে বিষয়ে সচেতনতা দরকার। আমরা অনেক ক্ষেত্রে সচেতন ছিলাম না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন