নগরীতে হঠাৎ বেড়ে গেছে ভিক্ষুক। ঈদকে সামনে রেখে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাও ছুটে এসেছে নগরীতে। রোহিঙ্গা ভিক্ষুকে সয়লাব পুরো নগরী। পরিবার নিয়ে তারা ভিক্ষা করছে নগরীর সড়ক, ফুটপাত, মসজিদের গেইট থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত। মার্কেট, বিপণি কেন্দ্রের সামনে রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল সর্বত্রই ভিক্ষুকের উৎপাত। লোকজন দেখলেই তারা ছুটে যাচ্ছে। একজনকে ঝেঁকে ধরছে কয়েকজন মিলে। পথচারীদের রীতিমত তাড়া করে ভিক্ষা আদায় করছে কেউ কেউ। মার্কেটের গেইটে এবং বাস টার্মিনালের প্রবেশমুখে ভিক্ষুকদের টানা-হেঁচড়ায় রীতিমতো নাজেহাল হতে হচ্ছে লোকজনকে। ব্যস্ততম ট্রাফিক মোড়ে গাড়ি থামতেই তাকে ঘিরে ধরে ভিক্ষা চাওয়া হচ্ছে। টাকা-পয়সা দিতে দেরি হলে আঘাত করা হচ্ছে গাড়ির দরজা ও গ্রাসে। বাসাবাড়িতেও যাকাত-ফিতরার টাকা চেয়ে হানা দিচ্ছে ভিক্ষুকের দল। এতে লোকজন ত্যক্ত-বিরক্ত।
চট্টগ্রামের মানুষ রোজা এবং ঈদে উদার হস্তে দান-খয়রাত করেন। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা আয়োজন করে দেন যাকাত-ফিতরা। নগরীতে প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের আগে ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ে। তবে এবার এ সংখ্যা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। নারী-পুরুষ ও শিশুরা দলবেঁধে পরিবার নিয়ে নগরীর মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিচ্ছে। পথচারীদের দেখলে তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। একজনকে ভিক্ষা দিতেই অন্যজন পোশাক ধরে টানাটানি শুরু করে। রীতিমত ভিক্ষা কেড়ে নেয়ার মতো অবস্থা। দলবেঁধে দিনে-রাতে ভিক্ষার পর ফুটপাতেই ঘুমিয়ে পড়ছে তারা। কয়েকদিন আগে নগরীর সার্কিট হাউস ও কাজির দেউড়ি এলাকা থেকে এমন ৪৫ জনকে আটক করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। তবে শবে কদরকে সামনে রেখে কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবির থেকে ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম নগরে ঢুকে পড়েছে।
নগরীর কাজির দেউড়ি, স্টেডিয়াম এলাকা, ইস্পাহানি মোড়, জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ, জিইসি মোড়, দামপাড়া, নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ মোড়সহ বড় বড় মসজিদ ও মাজারের আশপাশে এমনকি আবাসিক এলাকাগুলোতেও বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি চোখে পড়ছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক পয়েন্টগুলোতে এদের ব্যাপক উপস্থিতি ও ভিক্ষাবৃত্তির কারণে সড়কে রীতিমত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নগরীতে ভিক্ষা করতে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুর আগমনের বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে লিকেজ হয়ে তারা এ নগরীতে এসেছে। ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি থাকলে এমন অবস্থা হতো না। এর আগে অনেক রোহিঙ্গাকে আটক করে কক্সবাজার ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি পুলিশের জন্য ব্যয় সাপেক্ষ। তবে নগরবাসীকে বিড়ম্বনা থেকে রক্ষায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা যাতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যেতে না পারে সেজন্য সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে প্রশাসনের তরফ থেকে দাবি করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন