লক্ষ্যটা একটু বড়ই ছিল। জিততে হলে গড়তে হতো রেকর্ড। কিন্তু দলটা যখন পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া, উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না কোনো সম্ভাবনাই। তবে শেষ পর্যন্ত ভারতের চেয়ে ৩৬ রান পেছনে থেমেছে অ্যারন ফিঞ্চের দল। ভারতের করা ৩৫২ রানের জবাবে ৫০ ওভার খেলে অস্ট্রেলিয়া শেষপর্যন্ত অলআউট হয়েছে ৩১৬ রানে।
শেষ দশ ওভারে ১১৫ তুলতে হতো অস্ট্রেলিয়াকে। নিজেদের শেষ দশ ওভারে ভারত ১১৬ রান তোলায় অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু পার্থক্য ছিল উইকেট সংখ্যায়। ভারতের হাতে ছিল ৮ উইকেট, আর অস্ট্রেলিয়ার ৫। ঠিক আগের ওভারেই উসমান খাজা ও মার্কাস স্টয়নিসকে তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বড় ধাক্কা দিয়েছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। সে ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি দলটি। শেষ দিকে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারি ৩৫ বলে ৫৫ করে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছেন কেবল।
৩৫৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গেলে কাউকে না কাউকে বড় ইনিংস খেলতেই হতো। সেটি পারেননি স্মিথরা। ৭ ব্যাটসম্যানের ৬ জনই ভালো শুরু করেছেন, কিন্তু নিজেদের ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই। ৬৯ করা স্মিথ, ৪২ করা খাজা কিংবা ২৮ করা ম্যাক্সওয়েলরা শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলে জয় পেলেও পেতে পারত অস্ট্রেলিয়া। ভারতীয় বোলাররাও দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। সবচেয়ে সফল ছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। ১০ ওভার বল করে মাত্র ৫০ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ৩ উইকেট পেয়েছেন আরেক পেসার জসপ্রীত বুমরাহও। দুজন হয়েছেন রানআউট, আর দুটি উইকেট গেছে স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহালের পকেটে।
এর আগে অস্ট্রেলিয় বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করে সাড়ে তিনশোর্ধো সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যা এর আগে করতে পারেনি কোনো দল। স্কোরবোর্ডে এই রান দেখে হয়ত খুশি ভারতীয় সমর্থকরা। তবে আক্ষেপ থাকলেও থাকতে পারে বিরাট কোহলির। শেখর ধাওয়ান দারুণ সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে ফেরার পর হার্দিক পান্ডিয়া, মাহেন্দ্র সিং ধোনি ও লোকেশ রাহুল মিলে যেখানে ৪৪ বলে করেছেন ৮৬ রান সেখানে ৩২ বল খেলে ৪২ রান করেন উইকেটে সেট হয়ে থাকা কোহলি। নইলে সংগ্রহটা বেড়ে ৩৭০ হতে পারত। সেক্ষেত্রে ভারত দলপতিও হয়ত পেতে পারতেন তিন অঙ্কের দেখা। শেষ ওভারে অফ স্টাম্পের বাইরে মার্কাস স্টয়নিসের লেন্থ বলে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৭৭ বলে ৮২ রান করেন ভারত দলপতি। শেষ পর্যন্ত ভারত দাড় করায় ৫ উইকেটে ৩৫২ রানের সংগ্রহ। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো দলের যা সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। চলতি আসরে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আগের ম্যাচেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৩৮৬ রানের পাহাড় গড়েছিল ইংল্যান্ড। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে বিশ্বকাপে আগের সর্বোচ্চ ছিল গত আসরে শ্রীলঙ্কার করা ৩১২। ভারতের আগের সেরা ছিল ১৯৮৭ আসরে ৬ উইকেটে ২৮৯।
লন্ডনের কেনিংটন ওভালে শুরুটা দেখেশুনেই করেন টসজয়ী দলের দুই ওপেনার শেখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে চওড়া হয়েছে তাদের ব্যাট। দলীয় প্রথম ফিফটি আসে ৬৯ বলে। এরপর তিন অঙ্কে যেতে তারা খেলেছেন ৪৫ বল। ২২.৩ ওভারে দলীয় ১২৭ রানে রোহিতের বিদায়ে ভাঙে ওপেনিং জুটি। ৭০ বলে ৫৭ করে কোল্টার নাইলের এক্সট্রা বাউন্সে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরিয়ান।
দ্বিতীয় উইকেটে ধাওয়ান-কোহলি জুটি ছিল ৯৩ রানের। এই জুটির পথেই ৯৫ বলে ক্যারিয়ারের ১৭তম ওয়ানডে শতক পূর্ণ করেন ধাওয়ান। শেষ পর্যন্ত এই বামহাতি আউট হন স্টার্কের বলে বদলি খেলোয়াড় নাথান লায়নের হাতে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে। এর পর হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়ে ৮১ রান যোগ করেন কোহলি। ২৭ বলে ৪৮ করে থামেন পান্ডিয়া। কোহলির সঙ্গে ধোনির ৩৭ রানের জুটিতে ২৭ রানই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের, তাও আবার ১৪ বলে! ৩ বলে ১১ করে দলীয় সংগ্রহ সাড়ে তিনশ পার করতে ভুমিকা রাখেন রাহুল। আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাটিং করার সুযোগ না পাওয়ার ক্ষোভ যেন টিকরে বেরুয় ভারতীয় মিডিল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যাট থেকে। অবধারিতভাবে ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে ধাওয়ানের হাতেই।
এই জয়ে একটি রেকর্ডও অক্ষুন্ন থাকল ভারতের। বিশ্বকাপে আগে ব্যাট করে ৩০০ করেছে এমন ম্যাচে কখনো হারেনি ভারত। গতকালও স্মিথ-ওয়ার্নাররা চোখ রাঙালেও শেষ পর্যন্ত জয়বঞ্চিত করতে পারেনি ভারতকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন