শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আমিরাতি শাহজাদার শক্তিশালী অবস্থান ট্রাম্প প্রশাসনে বহাল

নিউ ইয়র্ক টাইমস | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

আমেরিকান কূটনীতিক ও ওয়াশিংটনে আমিরাতি দূতাবাস থেকে ফাঁস হওয়া ইমেইল থেকে জানা যায়, শাহজাদা মোহাম্মদ কেন ট্রাম্প বলয়ের সাথে রাশিয়াকে যুক্ত করতে চাইবেন। এটি একটি বিতর্কের বিষয় হয়ে আছে। তবে তিনি কয়েক বছর ধরে পুতিনকে ইরানের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করতে কাজ করেছেন। তবে কৌসুলিরা অন্যান্য অন্যান্য অপারেটিভ এবং ট্রাম্পের চারপাশে নিয়োজিত থাকার চেষ্টা চালানো শাহাজাদার পক্ষে কাজ করা ব্যক্তিদের কর্মকান্ড তদন্ত করছেন।
তদন্তকারীরা এখনো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী একজন ইসরাইলি বিশেষজ্ঞের নির্বাচনী প্রচারণা সংযোগ পরীক্ষা করে দেখছেন যিনি শাহজাদা মোহাম্মদ এবং তার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা একজন লেবাননী-আমেরিকান ব্যবসায়ীর পক্ষে কাজ করেছেন। অন্য কৌসুলিরা তদন্ত করছেন যে আরেকজন শীর্ষ রিপাবলিকান ডোনার যার নিরাপত্তা কোম্পানি শাহজাদার পক্ষে কাজ করেছে। তারা বৈধ ভাবে তার এজেন্ট হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে কিনা।
বিশেষ কৌসুলির অফিস লসএঞ্জেলেস ভিত্তিক আমিরাতি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী শাহজাদা মোহাম্মদ ও তার ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ আমিরাতি গোয়েন্দা প্রধান রশিদ আল মালিককেও প্রশ্ন করেছে। আল মালিক ট্রাম্পের বন্ধু টম বারাকেরও ঘনিষ্ঠ। তদন্তকারীরা খোঁজ করছেন যে আল মালিক অবৈধ প্রভাব পরিকল্পনার অংশ ছিলেন কিনা।
আরেকটি তদন্তে এ সম্ভাবনা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে যে সংযুক্ত আরব আমিরাত আমেরিকান নাগরিকদের উপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অপারেটিভদের কাছ থেকে সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল কিনা। এখনো ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে শাহজাদার দহরম-মহরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কুশনারের সাথে তার প্রথম বৈঠকের পর গত আড়াই বছরে শাহজাদা মোহাম্মদ হোয়াইট হাউসের কাছ থেকে যা চেয়েছেন তার প্রায় সবই পেয়েছেন।
প্রতি শীতে শাহজাদা মোহাম্মদ অর্থদাতা ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিনোদনের জন্য আবুধাবিতে আমন্ত্রণ করেন যা তার বিশ্বব্যাপী প্রভাবের পরিচায় বহন করে। গতবছরের ডিসেম্বরে আসা এ অতিথিদের তালিকায় ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইস, বুশ আমলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হ্যাডলি, আমেরিকান বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ এ.এল-এরিয়ান, ডেভিড এম. রুবেনস্টাইন এবং চীনা কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও বিনিয়োগকারী কাই-ফু লি।
তাদের সাথে শাহজাদা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পুতিনের সাথে সংযোগ থাকা রুশ ব্যবসায়ী দিমিত্রিয়েভকে। শাহজাদার আরব বসন্ত উত্তরকালীন হস্তক্ষেপগুলো এ অঞ্চলে সামান্যই স্থিতিশীলতা আনে। তিনি মিসরের মুমূর্ষু অর্থনীতির অবস্থা ফেরাতে যে সহযোগীকে কায়রো প্রেরণ করেন তিনি হতাশ হৃদয়ে ফিরে আসেন।
মিসরের সামরিক বাহিনী সমর্থিত সরকার এখনো সংযুক্ত আরব আমিরাত ও উপসাগরীয় মিত্রদের কাছ থেকে প্রতি বছর শত শত কোটি ডলার সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। আমিরাতি সাহায্য ও ইসরাইলি বিমান হামলা সত্তে¡ও কায়রো এখনো উত্তর সিনাইয়ে অনাকাক্সিক্ষত সামরিক তৎপরতা দমন করতে পারেনি। কাতারের বিচ্ছিন্নতা তার নীতি পরিবর্তন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ওদিকে লিবিয়ায় খলিফা হিফতার রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে আটকে আছেন।
আফ্রিকার শৃঙ্গে শাহজাদা মোহাম্মদের উপস্থিতির ফলে তুরস্ক ও কাতারের মত প্রতিদ্ব›দ্বীদের সাথে সেখানে প্রবেশ ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সোমালিয়ায় দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের পর আমিরাতি সৈন্যদের পুন্টল্যান্ড ও সোমালিল্যান্ড অঞ্চলে স্থানান্তর করা হয়েছে। জিবুতি অবহেলার অভিযোগ এনে গত বছর আমিরাতি বন্দর ম্যানেজারদের সরিয়ে চীনা প্রতিদ্ব›দ্বীদের বসিয়েছে।
ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের স্কলার ও সিআইএ-র সাবেক কর্মকর্তা ব্রুস রিডেল বলেন, শাহজাদা মোহাম্মদ নিজেকে ম্যাকিয়াভেলি ভাবেন, কিন্তু কাজে তিনি মুসোলিনিরও বাড়া। তার সউদী মিত্র যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ভিন্ন মতাবলম্বী ও ওয়াশিংটন পোস্টের কলমিস্ট সউদী সাংবাদিক আদনান খাশোগিকে নৃশংস হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন বলে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থার সিদ্ধান্তে শাহজাদা মোহাম্মদ বিব্রত। ইয়েমেনে তাদের চার বছরের যৌথ সামরিক অভিযান এখন ব্যাপক বেসামরিক প্রাণহানির মধ্য দিয়ে এক জলাভূমিতে রূপ নিয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি রো খান্না বলেন, ইউএই বর্তমানে সভ্য বিশ্বের প্রতিটি রীতিনীতি যে ভাবে লঙ্ঘন করছে তাতে দেশটি বিশ্ব বিবেকের কলঙ্ক হয়ে উঠেছে। তা সত্তে¡ও ট্রাম্প প্রশাসনে শাহজাদার শক্তিশালী অবস্থান এখনো বহাল রয়েছে। ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তির জন্য ওবামার অনুমোদিত ‘ভিতর-বাইরে’ প্রস্তাব এখন কুশনারের উদীয়মান পরিকল্পনার কেন্দ্রমূলে রয়েছে।
ট্রাম্প বিভিন্নভাবে আমিরাতি শাহজাদার অবস্থানকে সমর্থন করেছেন। এর মধ্যে আছে খাশোগি হত্যার পর সউদী যুবরাজের প্রতি সমর্থন, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বিরোধিতা করার পরও কাতারের বিচ্ছিন্ন করাকে সমর্থন, ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল, মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী গ্রুপ বলে আখ্যায়িত করতে চাওয়া এবং ইয়েমেনে সউদী ও আমিরাতি বাহিনীকে সামরিক সমর্থন বন্ধ করতে প্রণীত আইনে ভেটো প্রদান।
এপ্রিলে শাহজাদা মোহাম্মদের সাথে ফোনে কথা বলার পর ট্রাম্প প্রকাশ্যে লিবিয়ার আমিরাতি সমর্থনপুষ্ট মিলিশিয়া নেতাকে সমর্থন করেন। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ওই মিলিশিয়া নেতাকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ম্যাটিস গত মাসে আবুধাবিতে শাহজাদা মোহাম্মদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
তিনি যখন ট্রাম্প প্রশাসনে যোদান করেন তখন ম্যাটিস বলেছিলেন, প্রতিরক্ষা ঠিকাদার জেনারেল ডায়নামিক্সে বোর্ড সদস্য হিসেবে তিনি বছরে দুই লাখ ৪২ হাজার ডলারসহ মূল্যবান শেয়ার সুবিধা পান। আবুধাবিতে জেনারেল ডায়নামিক্সের বিরাট ব্যবসা আছে। তিনি শাহজাদার একজন আবৈতনিক উপদেষ্টা। ম্যাটিস প্রশ্ন করেন, এটা সহনশীলতার বছর। বিশে^র কয়টি দেশ এ মুহূর্তে সহনশীলতার বছর পালন করছে? আমি এমন কাউকে জানি না। আপনারা তার একটি উদাহরণ। (শেষ)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
alim ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩১ এএম says : 0
সৌদি আর ইরান দুইটাই শইতান।একটা এহুদি/আমেরিকার দালাল অন্নটা রাশিয়ার দালাল। ইরান আমেরিকার সাপোর্ট নিয়া ইরাকে চরম নির্যাতন চালাইসে সুন্নিদের ওপর।
Total Reply(0)
সাখাওয়াত হোসেন উজ্জ্বল ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩১ এএম says : 0
সৌদি আরবের দিন শেষ...
Total Reply(0)
কালাম ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩১ এএম says : 0
লেখাটি পড়ে অকে কিছু জানতে পারলাম, ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Mohammed Khan ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩১ এএম says : 0
বাংলাদেশের উচিত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াকে নিয়ে মুসলিম বিশ্বে গণতন্ত্র বিকাশে কাজ করে যাওয়া।
Total Reply(0)
তাইজুল ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩২ এএম says : 0
ঠিক
Total Reply(0)
nurul alam ১১ জুন, ২০১৯, ৭:৩০ এএম says : 0
সামনে শুধু ধ্বংসই অপেক্ষা করছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন