প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট জনগণের কোনো উপকার আসবে না দাবি করে এ বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে গণফোরাম। দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, এটি একটি অদূরদর্শী ও দুর্বলভাবে প্রনীত বাজেট যাতে দেশের প্রকৃত সমস্যা মোকাবিলায় কোনো ধরনের চেষ্টা নেই। তাই এবারের বাজেটকে আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করছি।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া।
দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশকে যারা লুটেপুটে খাচ্ছে ও যারা অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করছে, এবারের বাজেট তাদের সুবিধার জন্য করা হয়েছে। বাজেট যারা প্রণয়ন করেছে তাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।
ড. কামাল হোসেন বলেন, এই প্রতিনিধিত্বহীন অনির্বাচিত সরকারের বাজেট যে আমাদের নাগরিকদের ইচ্ছার প্রতিফলন নয় এবং এটি যে দেশের প্রয়োজনীয়তা পূরণের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়নি। এটাতে অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই।
একটি সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে দেশে একটি অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন।
আগামীতে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
লিখিত বক্তব্যে দলটির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, এ বাজেটে অর্থনীতি এখন সত্যিকারের যে বিপদে সম্মুখীন সে সম্পর্কে অজ্ঞাত প্রকাশ পেয়েছে। এটাতে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য, দারিদ্র্য ও বেকারত্বের মতো গুরুতর সমস্যা মোকাবিলায় কোনো উদ্যোগ নেই। এই বাজেটে জনগণের স্বার্থহানি ঘটিয়ে গুটি কয়েক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে গত এক দশকের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার ফলে বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে আমরা একটি আর্থিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে।
এর প্রতিফলন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং কমাচ্ছে বিভিন্ন দুর্বলতার আভাস পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মন্দ ঋণ উন্নয়নের নতুন নীতি বিভ্রান্তিকর ও বিপদজনক। বিষয়টি আগুনের ঝুঁকিতে থাকা কোনো ভবনের অগ্নিসর্তকতা সংকেত বন্ধ করে দেওয়ার মতো বলে তিনি উল্লেখ করেন। দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের এক কোটি ৮০ লাখ কৃষক বর্তমানে যে সংকট মোকাবিলা করছে তার কারণ সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতা। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনে বাস্তবসম্মত মূল্য সহায়তা দেওয়ার ব্যর্থতা আগামী বছরের কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। সরকারি সহায়তা ছিলো যৎসামান্য এবং তা এসেছে অসময়ে সরকারি মূল্যে ধান কেনা শুরু করার আগেই বেশিরভাগ কৃষক তাদের ধান বিক্রি করে দিয়েছে।
রাজস্ব সংগ্রহ সম্পর্কে ড. রেজা বলেন, চলতি অর্থবছরে দু’লাখ ৮০ হাজার ৬শ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা তুলনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব ঘাটতি চলতি বছর প্রায় ২৫ শতাংশ দাঁড়াতে পারে। ২০১৯-২০ সালের ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা বিগত সরকারের অনুপার্জিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি এটি সত্যিই দুশ্চিন্তার বিষয় কারণ এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত বাৎসরিক প্রবৃদ্ধির হার ছিলো মাত্র ৭ শতাংশ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, অপচয়, অদক্ষতা ও দুর্নীতি সবচেয়ে লজ্জাজনক চিত্রটি উঠে এসেছে বিদ্যুৎখাতে। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে সাহসী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে আমরা যা জেনেছি। তা দেশের অদক্ষতা ও দুর্নীতির জন্য অবকাঠামো সবাই জানে। এই অদক্ষতা ও দুর্নীতির দায় এখন বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে গ্রাহকদের উপর চাপানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মহসিন রশিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমেদ, আমিন আহমেদ আফসারী, সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারী হামিমপ্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন