আটদিন ধরে নিখোঁজ ভাগ্নের সন্ধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে গতকাল দুপুরে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ ভাগ্নে সৈয়দ ইফতেখার আলম ওরফে সৌরভের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান ও বাবা মো. ইদ্রিস আলমসহ অন্যান্য স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। তারা হারানো ছেলেকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানান। সোহেল তাজ বলেন, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। কোনোভাবেই এ অবস্থা আমরা আশা করতে পারি না- কোনো নাগরিক গুম কিংবা অপহৃত হোক। কার কী পরিচয় তা মুখ্য বিষয় নয়। আইনের শাসন বা সুবিচারের রাষ্ট্রে এ ধরনের ঘটনা কারও জন্য কাম্য নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। আশা করছি ভাগ্নেকে ফিরে পাব।
তিনি বলেন, আমি বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিকে অবহিত করেছি। তারা যথাযথভাবে সৌরভকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। সিএমপি, পাঁচলাইশ থানাসহ তদন্ত সংশ্লিষ্টরা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। ৮ দিন হলো ভাগ্নে নিখোঁজ হয়েছে। এই মুহুর্তে আমাদের চাওয়া ভাগ্নেকে জীবিত ও অক্ষত ফিরে পাওয়া।
এর আগে গত ৯ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে ভাগ্নে সৈয়দ ইফতেখার আলম ওরফে সৌরভ অপহৃত হয়। ওইদিন রাতে সৌরভের বাবা পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর আগে গত শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে তার ভাগ্নেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সোহেল তাজ।
লিখিত বক্তব্যে সৌরভের মা বলেন,২০১৭ সালে সৌরভের তৈরি সিনেমা ‘বেঙ্গলি বিউটি’ দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করে। সে সময় সওদা নামে এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় ও যোগাযোগ শুরু হয়। পর্দানশীল পরিবারের সদস্য সওদা মোবাইল ফোনেই বিবাহ সম্পন্ন করার প্রস্তাব দেয় এবং তাতে রাজি না হলে নিজের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এর মধ্যে সওদার অমতে পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়। তবে সে বিয়ে ২০১৮ সালেই ভেঙে যায়। এরপর থেকে সওদার বাবা আজাদ চৌধুরী আমার ছেলেকে দোষারোপ করে এবং আমার ছেলেকে ও আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এরই জেরে চলতি বছরের ৭ ফেব্রæয়ারি সৌরভকে উত্তরা র্যাব সদর দফতরে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। মোবাইলের সব ডাটা ডিলেট করে সেখানেও সওদার ব্যাপারে তথ্য জানতে চাওয়া হয়।
সৌরভের মা আরো বলেন, ১২ ফেব্রæয়ারি বনানী থানার ওসি সৌরভকে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। এক সপ্তাহ পর এনএসআইয়ের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে এক রেস্টুরেন্টে বৈঠক হয়। সেখানে সৌরভের ঘটনা তদন্ত করার কথা জানানো হয়। সেখানেও সওদার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। কোন কোন দেশ ঘুরেছে সৌরভ তা জানতে চায়। পরে তারা প্রাপ্ত তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর কথা বলে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের ১৬ মে বনানীর বন্ধুর বাসা থেকে ডিজিএফআই ও র্যাব পরিচয়ে একদল লোক সৌরভকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর গত ১৭ মে রাত পৌনে ১২টায় একই কায়দায় ফেরত দিয়ে যায়। এ দীর্ঘ সময় তারা সওদা সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে র্যাব তার ছেলেকে চাকরির প্রলোভন দেখায় এবং কাগজপত্র চায়। এরপর গত ৮ জুন দুপুরে ১১-১২টার দিকে র্যাব ফোন করে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে বলে। বিকেল ৩টার দিকে সৌরভকে চট্টগ্রাম মিমি সুপার মার্কেটের আগোরার সামনে থেকে তুলে নেয়া হয়। এরপর আর ফিরে আসেনি। আমরা আমাদের সন্তানকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
-যার মামা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তার ক্ষেত্রে যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে অন্য সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রে কী হতে পারে- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা আশা করব না অন্য কোনো নাগরিকের ক্ষেত্রে এমন কিছু হোক। আজকে আমার ভাগ্নে, কালকে হয় তো আপনার ভাই হতে পারে। আরেক দিন হয়তো আপনার সন্তান হতে পারে। এটা আমাদের কারও কাম্য নয়। কার কী পরিচয় সেটা মুখ্য বিষয় নয়- আমার কী পরিচয় তাও মুখ্য বিষয় নয়। এখানে আইনের শাসনে রাষ্ট্র চলবে। ন্যায়বিচার সুবিচারের রাষ্ট্রে এ রকমটা হওয়া বা এমন পরিণতির শিকার হওয়া কাম্য নয়।
অপহরণকারীরা কী প্রভাবশালী, তাদের পরিচয় কি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন- এমন প্রশ্নে সোহেল তাজ বলেন, আমাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও লোকাল পুলিশ যোগাযোগ করছে। রাষ্ট্রীয় সংস্থার কর্মকর্তার নম্বর থেকে কল গেছে সৌরভের ফোনে। সেটা আমরা জানতে পেরেছি। এ অবস্থায় আমাদের একটাই লক্ষ্য আমাদের ছেলেকে ফিরে পাওয়া। তিনি বলেন, এরমধ্যে ৮ দিন পার হয়ে গেছে। আমরা সৌরভকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় আছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন