আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে পালিয়ে যাবার ২০ দিন পর ধরা পড়েছে নরসিংদীর চাঞ্চল্যকর জান্নাতি হত্যা মামলার ৪ আসামী। নরসিংদী সদর থানা পুলিশ তাদেরকে নাটোরের নারায়নপুর থেকে গ্রেফতার করেছে।
গতকাল বুধবার সকালে নরসিংদী পুলিশ সুপার মো. মিরাজ উদ্দিন আহম্মদ তার সম্মেলন কক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হচ্ছে জান্নাতির স্বামী সাব্বির আহমেদ শীপলু, শশুর হুমায়ুন মিয়া, শাশুড়ি শান্তি বেগম এবং ননদ ফালগুনী বেগম।
পুলিশ সুপার জানান, প্রায় ৮-৯ মাস পূর্বে সদর থানার হাজীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের মো. শরীফুল ইসলাম খানের কন্যা জান্নাতীকে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই সাব্বির আহম্মেদ ও তার পরিবারের লোকেরা জান্নাতুল ফেরদৌসীর নিকট ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে এবং তাকে মাদক ব্যবসায় জড়িত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। জান্নাতুল ফেরদৌসী এতে অপারগতা প্রকাশ করলে তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে।
গত ২১ এপ্রিল ভোরে জান্নাতুল ফেরদৌসী তার স্বামীর বাড়ীতে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকাকালে সাব্বির আহম্মেদ তার পরিবারের লোকদের যোগসাজসে জান্নাতির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এতে জান্নাতুল ফেরদৌসী দহন যন্ত্রণায় ডাক চিৎকার শুরু করলে স্বামী সাব্বির ও তার আত্মীয়-স্বজনরা ঘর থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। আগুনে জান্নাতুল ফেরদৌসীর দুই পা ও দুই হাতসহ সমস্ত শরীর পুড়ে যায়। মারাত্মক দগ্ধাবস্থায় প্রথমে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে জান্নাতিকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় জান্নাতি গত ৩০ মে রাতে মারা যায়। এ ব্যাপারে গত ১৫ জুন জান্নাতীর পিতা শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে তার স্বামী সাব্বির আহম্মেদ ওরফে শিপলু (২৩), তার পিতা হুমায়ুন মিয়া (৫০), মাতা শান্তি বেগম (৪৫) ও বোন ফাল্গুনী বেগম (২০) কে আসামী করে নরসিংদী সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলার পর আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করতে থাকে পুলিশ। অতঃপর গত ১৮ জুন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে নাটোর জেলা পুলিশের সহায়তায় নাটোরের নারায়নপুর থেকে ৪ আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার আরো জানান, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথযাথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ সময় সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. জাকির হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার মো. শফিউর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার সদর মো. বেলাল হোসেন, এএসপি সার্কেল নরসিংদী সদর মো. শাহেদ আলম, নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দুজ্জামান ওজেলা গোয়েন্দা বিভাগের ওসি গোলাম মোস্তফা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন