দৈনিক ইনকিলাব আন্দোলিত করল, উদ্বেলিত করল এর পাঠককুলকে। একটি দৈনিক পত্রিকা ৩৩ বছর থেকে ৩৪ বছরে পদার্পণ করল। সচেষ্টায় উজ্জীবিত এ পূর্ণতা। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। রাজধানী ঢাকাতেই এর গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৯৮৬ সালের ৬ জুন তারিখে আলোকিত মানুষ সৃষ্টির প্রত্যাশায় মাওলানা এম এ মান্নানের হাতেই। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক-সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সরকারের একজন মন্ত্রী। দৈনিক ইনকিলাব এখনো সরবে সে দায়িত্ব পালন করে চলেছে, যার সুদৃঢ় নেতৃত্বে রয়েছেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী, শিল্পপতি, শিক্ষানুরাগী ও সাংবাদিক এবং মাওলানা মন্নানের সুযোগ্য পুত্র এ এম এম বাহাউদ্দীন।
নিয়মিত প্রকাশিত দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকাকে পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় করার পেছনে কাজ করে চলেছেন ইনকিলাব পরিবারের নিবেদিতপ্রাণ ও প্রতিভাবান সাংবাদিক সদস্যবৃন্দ। তাদের এ প্রচেষ্টাকে মূল্যায়ন করতে হবে আরো ব্যাপকভাবে, আরো গভীরভাবে। দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকে তাঁরা এ দায়িত্ব পালন করে চলেছেন অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও। তাঁরা অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে একজন নিয়মিত লেখক ও পাঠক হিসেবে অভিনন্দন দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সম্পাদক, নির্বাহী, ব্যবস্থাপনা, সাংবাদিক, লেখক তথা পত্রিকার সঙ্গে জড়িত সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে।
সংবাদপত্র আমাদের দেশ, জাতি ও সমাজ উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে থাকে। এটি কোনো নতুন কথা নয়। সকল পন্ডিত ব্যক্তিই এ কথা উচ্চারণ করে থাকেন। সমাজের দর্পণ সংবাদপত্র। ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, উন্নয়ন-অগ্রগতি, আনন্দ-বেদনা, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সব চিত্রই ফুটে ওঠে সংবাদপত্রের পাতায়। পাঠক তথ্য পান, নিজেকে তথ্যময় আলোকিত করে তোলেন। এসব তথ্য ব্যবহার করে অন্যকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। এটাই স্বাভাবিক।
আজকাল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রায়ই হইচই হয়ে থাকে। পত্রিকার স¤পাদকরা তুখোড় শব্দচয়নে লা-জবাব স¤পাদকীয় লিখেন, কিছু সময় জুড়ে আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক চলে বিদগ্ধ মহলে, তারপর এক সময় আবার গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়া বেলুনের মতো সব চুপসে যায়। ঘুরেফিরে চক্রাবর্তে দাবিটা উঠে, আকাশ-বাতাস স্লোগানে শোভিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে তাবৎ সাংবাদিকরা সমবেত বক্তৃতার ঝড় তোলেন এবং তারপর সব ঠান্ডা হয়ে গেলে যথারীতি একে অপরের পেছনে লেগে যান। অবস্থাটা মোটামুটি এ রকম। অথচ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার যে প্রশ্নটি বাস্তবে খুব জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে তা নিয়ে সবিশেষ চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে বলে মনে হয় না, যদিও এর সঙ্গে সাংবাদিকদের জীবন ও জীবিকা এবং জনমত গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো জড়িয়ে আছে। চিন্তা-ভাবনা যে হচ্ছে না তার কারণ বোধহয় এই যে, এ জাতীয় দাবি উত্থাপনের আড়ালে যে ধাপ্পাবাজিটা রয়েছে, সে বিষয় ওয়াকিবহাল হওয়া সত্তে¡ও অধিকাংশ সাংবাদিক নিজেদেরকে এক কাল্পনিক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ দেখতে ভালোবাসেন এবং এতেই ছদ¥ সন্তুষ্টি লাভ করেন। ফলে প্রসঙ্গটিকে ইতিহাসগতভাবে এবং স্বদেশ ও স্বকালের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখার প্রয়োজন অনুভব করেন না।
সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি মূলত ব্যক্তি স্বাধীনতার আদর্শের অন্তর্ভুক্ত। ধারণাটি আমাদের পশ্চিম থেকে পাওয়া। ইউরোপে এর উদ্ভব শিল্প বিপ্লবোত্তর কালে। ভ‚মিকেন্দ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত সামন্ততান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তির কোনো ভ‚মিকা নেই, ব্যক্তি সেখানে সমষ্টির অঙ্গমাত্র। সমাজ বিবর্তনের জটিল প্রক্রিয়ায় একটা পর্যায়ে পুরনো উৎপাদন ব্যবস্থাকে হটিয়ে পুঁজিবাদ তার জায়গা নেয় এবং বিকাশের আবশ্যিক শর্ত হিসেবেই এ নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যক্তিকে জমি ও জমিদার থেকে ক্রমে বিছিন্ন ও মুক্ত করে।
ইউরোপে রেনেসাঁর পর থেকে ব্যক্তি স্বতন্ত্রভাবে স্বীকৃতি পায়। শিল্প বিপ্লবের ফলে সমাজে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে তার অবশ্যম্ভাবী চাপ পড়ে ব্যক্তি মননে, চিন্তা ও চেতনায়- গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রসার ঘটে এবং বহু দার্শনিক চিন্তাবিদকে ব্যক্তিস্বাধীনতার পক্ষে সরব হতে দেখা যায়। ‘তুমি যা বলছ তার সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করতে পারি- কিন্তু তোমার এ কথা বলার অধিকার রক্ষার জন্য আমি জীবনপাত করতে পারি।’ ইউরোপে ব্যক্তিস্বাধীনতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছিল তা এ উদ্ধৃতি থেকে সহজেই অনুমান করা যায়।
আমাদের দেশে যদিও অনুরূপ শিল্প বিল্পব ঘটেনি, তারপরও ব্রিটিশ শাসন ও ইংরেজি শিক্ষার বদৌলতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় চিন্তা-চেতনার কিছু বিক্ষিপ্ত ঢেউ এ দেশের মাটিতেও আছড়ে পড়েছিল- উনিশ শতকের তথাকথিত নবজাগরণ তারই চিহ্নস্বরূপ। কিন্তু পুঁজিবাদের স্বাধীন ও সক্ষম বিকাশ সম্ভব না হওয়ায় এ দেশের চিত্র অন্য রকম। আমাদের দেশের আধা সামন্ততান্ত্রিক, আধা ঔপনিবেশিক সমাজ কাঠামোয় ব্যক্তি বিকাশ পূর্ণতর হয়ে ওঠার সুযোগ পায়নি, যার কারণে ব্যক্তিগত চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে অদ্ভুত স্ববিরোধিতা, উনিশ শতকের বহু স্মরণীয় ব্যক্তিত্বও যা থেকে মুক্ত হতে পারেননি। মধ্যযুগীয় রক্ষণশীলতা এবং পশ্চিমের উদার মানবতাবাদ এ দুয়ের অদ্ভুত জটিল সহাবস্থান ও সংমিশ্রণেই গড়ে উঠেছে আমাদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধ।
মনে রাখা দরকার, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের স্বাধীনতার জরুরি প্রশ্নটিকে এ ইতিহাসগত দেশীয় চালচিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে বিচার-বিবেচনা করতে হবে, অন্যথায় আমরা আত্মঘাতী ভুলের শিকার হতে বাধ্য।
এও স্মরণ রাখা আবশ্যক যে, এ আলোচনায় ব্যক্তিস্বাধীনতা বলতে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও বুর্জোয়া গণতন্ত্রের প্রারম্ভিক বিকাশলগ্নের আদর্শের কথাই বোঝানো হচ্ছে, যে পর্যায়ে আদর্শটি বৈপ্লবিক, যেহেতু তা প্রথমবারের জন্য ব্যক্তিকে মর্যাদাস¤পন্ন করে এবং এ কাজটা সামন্ত সমাজে অসম্ভব ছিল। কিন্তু যে শিখরে আজ পুঁজিবাদের অধিষ্ঠান, সেখানে ব্যক্তির স্বরূপ ও ভ‚মিকা ভিন্ন।
যে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো ব্যক্তি স্বাধীনতার সামাজিক ভিত্তি, তা যে বাজারকেন্দ্রিক তুমুল প্রতিযোগিতা ও মূল উৎস এটা আজ দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ স্বাধীনতার চূড়ান্ত ব্যবহার ক্রমে ব্যক্তিকে সমাজ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের জায়গা নেয় ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা এবং এর ফলে পারিবারিক ও মানবিক স¤পর্কগুলো ভেঙে পড়ে, যাবতীয় মূল্যবোধ বাতিল বলে গণ্য হয়। অর্থনৈতিক দিক থেকে বিবেচনা করলে এ নির্মম প্রতিযোগিতার ফল আরো মারাত্মক। নিরঙ্কুশ স্বাধীনতার শেষ ফল হিসাবে জন্ম হলো সাম্রাজ্যবাদের। পুঁজিবাদী রাষ্ট্র সংগঠন ফুলে উঠতে উঠতে বাজার দখলের জন্য বিশ্বজুড়ে যে জাল বিস্তার করেছে এবং যে দানবীয় রূপ পেয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিস্বাধীনতা যে আত্মপ্রবঞ্চনা মাত্র তা আর ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না।
বিজ্ঞান তথা প্রযুক্তিবিদ্যায় চরম উৎকর্ষের ফলে পশ্চিমা দেশে অতিকায় যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার উদরে ক্রমে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিমানস। ব্যক্তিস্বাধীনতার চরম ও চূড়ান্ত প্রয়োগ একটা পর্যায়ে যেসব দেশে সংশয়াতীতভাবে হয়ে গেছে বা হচ্ছে, আজ সেসব দেশে এ তথাকথিত স্বাধীনতা-পরবর্তী যে চেহারা আমরা দেখতে পাই তা দিয়ে অহঙ্কার যে আত্মরতির নামান্তর মাত্র তা সহজেই অনুমেয়। এসব দেখেশুনেও কেউ যদি অহঙ্কারে ফীত হতে চায় তবে তার পক্ষে মূর্খের স্বর্গে বসবাস করাই শ্রেয়। চিৎকার-চেঁচামেচির লোক দেখানো স্বাধীনতার যা আছে, সেও একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই।
বাংলাদেশের মতো একটা দেশেও, যেখানে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর যোগসাজশে দেশীয় শাসকরা শাসন-শোষণ-দমন-পীড়ন অবাধে চালিয়ে যান; সেখানে সংবাদপত্র বা সাংবাদিকের স্বাধীনতা ছেলের হাতের মোয়া ছাড়া আর কিছু নয়। সরকারি-বেসরকারি যেকোনো মালিকানার নিয়ন্ত্রণাধীন সংবাদপত্রের সাংবাদিক তার নিজস্ব মতামত বা কণ্ঠস্বর প্রত্যক্ষভাবে তুলে ধরতে পারেন না যতক্ষণ তা অনুমোদন পায় পরোক্ষভাবে হলেও।
অন্য দশটা পেশার মতো সাংবাদিকতাও আসলে একটি পেশা মাত্র, প্রাথমিকভাবে জীবিকার স্বার্থেই একজন সাংবাদিক যা গ্রহণ করেন, অন্যান্য পেশার মানুষের মতো তাকেও আপস-সমঝোতার প্রতিষ্ঠিত নীতিতেই চলতে হয়। বিবেকের কামড় সত্তে¡ও এখানে তার হাত-পা বাঁধা।
ইদানীং আবার নয়া এক শোর উঠেছে। নয়া অর্থনীতিতে বিদেশি পুঁজির কাছে স্বদেশের বাজার উন্মুক্ত হওয়ার ফলে কিছু কিছু দেশি শিল্পোদ্যোগ যেমন এক অসম প্রতিযোগিতার কবলে পড়বে বলে যথার্থ আশঙ্কা করা হচ্ছে, তেমনি দেশি সংবাদ সংস্থাগুলো ও বিদেশি জুজুর ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাতে সংবাদমাধ্যমকে নিরাপদ রাখা হয়, আর এতে সাংবাদিকরাও শামিল হচ্ছেন, যদিও এ দাবি-দাওয়ার মূলে সাংবাদিকরা দাবার ঘুঁটিমাত্র।
সাংবাদিকের স্বাধীনতা বস্তুত কল্পনাবিলাস ছাড়া কিছু নয়, এবং এটাও পরিষ্কার যে স্বাধীনতা যেখানে নেই সেখানে নিরপেক্ষতার প্রসঙ্গ অবান্তর। আসলে বিশুদ্ধ নিরপেক্ষতা বলে কিছু নেই, হয় না। ব্যতিক্রম হিসেবে যে সাংবাদিক জীবনে সত্য ছাড়া কিছুই লেখেননি, তিনিও কিন্তু সত্যের দোহাই পেড়ে নিরপেক্ষতার দাবি করতে পারেন না, যেহেতু তিনিও প্রকৃতার্থে একটি পক্ষ অবলম্বন করেছেন স্বীয় ধারণা অনুযায়ী।
রাষ্ট্রক্ষমতা জনগণের হাতে না আসা পর্যন্ত, একমাত্র আমলাতন্ত্রকে বাদ দিয়ে, শেষ বিচারে রাষ্ট্রের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক দ্ব›দ্বমূলক থেকেই যায়। সাংবাদিককেও তাই শাসকশ্রেণী, রাজনৈতিক গোষ্ঠী কিংবা বেসরকারি মালিক যেকোনো একটা পক্ষ অবলম্বন করতেই হয়। নিরপেক্ষতার প্রশ্ন এখানে অবান্তর। এক কথাই মধ্যশ্রেণীর সব মানুষের মতো সাংবাদিকদের ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় মালিকপক্ষের স্বার্থেই কাজ করতে হয়। মধ্য শ্রেণীর যেকোনো পেশার মানুষের মতো তাকেও দ্ব›দ্ব-যন্ত্রণায় রক্তাত্ত ক্ষতবিক্ষত হতে হয় অহর্নিশ। তবে একজন সাংবাদিকের ক্ষেত্রে এ যন্ত্রণা আরো তীব্র ও তীক্ষœ। কেননা পেশাগত কারণেই বাস্তবকে সম্পূর্ণ ও যথার্থরূপে তুলে ধরার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার প্রয়োজন ও অভাব তিনি সরাসরি অনুভব করেন। যার ফলে তাকে এক ধরনের প্রত্যাহারের মোকাবেলাও করতে হয়। তার প্রতি মুহূর্তের কাজে তাই অব্যক্ত যন্ত্রণা থাকে এবং এ যন্ত্রণা সময়সাপেক্ষে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে, মানুষের হয়ে লড়াই করার ক্ষেত্রে তাকে শক্তি জোগাতেও পারে।
এ বিষয়ে যদি তীব্র ও তীক্ষœভাবে সচেতন হওয়া যায়, তাহলেই স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা সংক্রান্ত দাবিটির প্রসারতা স্পষ্ট হবে এবং প্রকৃত বাকস্বাধীনতার জন্য সমাজভিত্তিটাকেই বদলে ফেলার জরুরি প্রশ্নটিও যথেষ্ট গুরুত্ব পাবে আর তখনই একজন সাংবাদিকের কাজেও যুক্ত হবে ভিন্নমাত্রা। বলা বাহুল্য জনসাধারণের পক্ষেই হবে সে অবস্থান এবং অবশ্যই তা নিরপেক্ষ নয়, বরং মহৎ পক্ষপাতদুষ্ট।
কিন্তু চারদিকে এখন ‘হলুদ সাংবাদিকতার’ যে অশুভ প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে হতাশ না হয়ে থাকা যায় না। এ ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ দেশ, জাতি ও সমাজকে কিভাবে আলোর পথ দেখাবে? কিভাবে সংস্কার করবে সুন্দরের পথ? অবাক হতে হয় সংবাদপত্রের বিভ্রান্তকর চরিত্র উন্মোচনে। এ অবস্থা সুস্থ সাংবাদিকতা বলে বিবেচিত হতে পারে না। এর ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব? এ জন্য মালিকদের তাঁদের সংবাদপত্রের পলিসি বা নীতি নির্ণয়ে উদার হতে হবে। নিজস্ব স্বার্থের গন্ডি থেকে বেরিয়ে এসে দেশ, জাতি ও সমাজের স্বার্থের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিকরা তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আজো তাদের ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছে। ৩৩ বছর আগে যে আলো জ্বালিয়েছিলেন শ্রদ্ধাভাজন উদ্যোক্তারা, তাদের এই উত্তরসূরিরা পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন অক্লান্ত গতিতে। এ যাত্রা অব্যাহত থাকুক, দৈনিক ইনকিলাব বেঁচে থাকুক আলোকিত পাঠকের হৃদয়ে। আজ ৩৪ বছর পদার্পণে এ আমার নির্ভেজাল প্রত্যাশা।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন