সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষ গমনাগমন করেছে অন্য দেশে, কখনো বাসস্থান গড়ে তুলেছে সেখানে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ফ্রান্সকে নতুন করে নির্মাণের কাজে আরব ও আফ্রিকাবাসীর একটি অংশ ছুটে এসেছিল, তাদের অনেকে থেকেও গিয়েছিল। রাজনৈতিক কারণে ও কেউ কেউ অভিবাসী হয়ে পড়েছিল।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর নানা কারণে অনেকে ইউকে, ইউএসএ কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী হতে শুরু করেছি। এক পর্যায়ে ফ্রান্সকেও তারা বেছে নিয়েছিল। ষাটের দশকে সিরাজুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন, সত্তরের দশকে শিল্পী শাহাবুদ্দিন তাঁর ভাই নাজিমুদ্দিন, আশির দশকে প্রলয় দত্তগুপ্ত, পার্থপ্রতিম মজুমদার, নুরুল আলম প্রমুখ এভাবে থেকে গেলেন। ইত্যাসরে আরো অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী হয়ে পড়লেন। পরবর্তীকালে চাঁদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব সপরিবারে আসতে থাকলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আগত মানুষদের সংখ্যা ফরাশি বা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে সঠিকভাবে সম্ভবত জানা নেই। ২০০৫ সালে সপ্তাহ খানেক প্যারিসে একটা গবেষণার কাজে এলে অভিবাসী কয়েকজন স্বদেশীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটে। অবাক হই, দু’একটা দোকানে বাংলা সাইন বোর্ড দেখে।
এবার ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর প্যারিসে অবস্থান কালে অগুনাত বাংলাদেশি মানুষের সান্নিধ্য লাভ করলাম। আমি সন্ত্রীক বিলাতে এসেছিলাম আমার কনিষ্ঠ পুত্র শাজেল ও তার স্ত্রী সাদিয়া ফারজানা চিত্রার আমন্ত্রণে আর দুই নাতি রাদ ও সাদের আকর্ষণে। তাদের বন্ধু কৌষিক রাব্বানী, মোহাম্মদ নূর ও জমা কামরুন দম্পতি আমন্ত্রণ জানালেন। এভাবে একটা অসাধারণ সফর সূচি তৈরি হয়ে গেল।
অবাক কান্ড! ‘গার দুনরের, ‘ইউরোস্টার’ ট্রেনের ইঞ্জিন যেখানে, সেখানে ফুলের তোড়া হাতে দাঁড়িয়ে এক যুবক। কাছে গিয়ে বললাম, আপনি নিশ্চয়ই কৌষিক রাব্বানী। স্মিত হাসিতে সায় দিয়ে তিনি বললেন, ‘একটু হাঁটতে হবে, গাড়িটা খুব কাছে পার্ক করতে পারিনি।’ বলে এলাম ‘জোয়াজি লসেক্’ এলাকায় জবা-কামরুনের বাসায়। বছর তিনেক আগে ওরা লন্ডন থেকে এখানে চলে এসেছে। প্যারিসে ওদের প্রথম সন্তান আদিয়াতের জন্ম। সবাই ডাল-ভাত-মাছ-গোশত সমৃদ্ধ মধ্যাহ্ন ভোজন করলাম একসাথে।
কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর সন্ধ্যায় আমরা একটা শপিং মলে গেলাম। সেখানে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে এলেন ভারতের মিথিলাবাসী গবেষক মত্যেন ঝা। আমরা দু’জন মাল্রো-ভক্ত। মাল্রো ভারতীয় দর্শনের প্রভাব বিষয়ে গবেষণারত তিনি। দু’জনে অনেক আলোচনা করলাম, ফরাশি ডিনার সামগ্রীসহ।
পরদিন সকালে প্রাচ্য বিদ্যা ইনস্টিটিউটের বাংলা বিভাগে আমার কাজ। ড. দিলিপ বনোয়া তাঁদের নতুন গেট থেকে অভ্যর্থনা করে নিয়ে গেলেন। ক্লাসে দশ-বারোজন প্রথমবর্ষের ছাত্র। তিন-চারটি মেয়ে তারা বাঙালি। এক ঘণ্টার ওপর আমাদের ক্লাস-কথোপকথন চললো। আমি গোড়ার দিকের সব তথ্য জানালাম। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী সেমিনারে এখানে বক্তৃতা করতে আমি আহত হই, পরে ১৯৬৫ সালের জানুয়ারী থেকে প্রথম বাঙালি বাংলার প্রভাষকরূপে নিয়োগ লাভ করি। আমার প্রবন্ধটি সর্বনের একটি প্রকাশনা ও ‘ইউনেস্কা কুরিয়ের’-এর ৯টি সংস্করণে ছাপা হয়। উল্লেখ্য যে, ১৯৬৮ সালের অগাস্ট মাসে প্যারিসে ২টি বই ফরাশি ভাষায় প্রকাশের ব্যবস্থা সম্পন্ন করে আমি দেশে ফিরে যাই।
বাংলা বিভাগের ক্লাসে ফিলিপের সঙ্গে হাসান জান নামে একজন বাংলাদেশি সহকর্মী ও চ্যানেল আই-এর সাংবাদিক এম.এ হাশেম ছিলেন। হাশেম সাহেব আমার দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিলেন। পরে ফিলিপ আমাদের এক ইরানী রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্ন ভোজনে নিয়ে গেলেন। সেখানে পশতু ও সিংহলী ভাষার দুই শিক্ষকের সঙ্গে পরিচয় ঘটল। অপরাহ্ন পাঁচটায় আমাদের অধ্যাপক ফ্রাঁস ভট্টাচার্যের বাসায় যাবার কথা। একটু ঘোরাফেরা করেও আমরা সাড়ে চারটায় সেখানে হাজির হয়ে গেলাম। বৌদি ভীষণ খুশি। রাজশাহীতে একবার তিনি আমার বাসায় ছিলেন, আমার ফরাশি ক্লাসেও যান। আমি তার প্রয়াত স্বামী লোকনাথ ভট্টাচার্যের বিশেষ ভক্ত। তিনি তাঁর বাংলাদেশের বন্ধু ড. আনিসুজ্জামান ও রামেন্দু মজুমদারের কথা ঘুরে ফিরে বললেন। ইদানিং তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে না বলে দুঃখ প্রকাশ করলেন। ইতোমধ্যে দেখা গেল ড. ফ্রান্সের প্রকাশনা রীতিমতো ভীতিপ্রদ। একাধিক মঙ্গল কাব্যের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে হার্ভার্ড ও কলেজ দ্য ফ্রঁস থেকে।
ছ’ তারিখ বিকেলে ‘বাংলাদেশ কম্যুনিটি ইন ফ্রঁসের’ পুরস্কার বিবরণী ও বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি রূপে যোগ দিয়েছিলাম। বিশেষ অতিথি ড. ফিলিপ বনোয়া। দু’জন মিলে কৃতি ছাত্র ও খেলোয়াড়দের ক্রেস্ট ও মেডেল দিলাম ১৫/২০টি। ‘নোয়াজিল সেক’ আমাদের নিয়ে গিয়েছিলাম হাটহাজারীর মোজাম্মেল সাহেব। প্যারিসে ও ক্রেতাইতে তাঁর ইন্টারনেট সামগ্রীর দুটি দোকান আছে। ইলে পেকার পনে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মোহাম্মদ নূর বললেন, আপনাদের জন্য একটি ‘সারপ্রাইজ’ আছে। ‘সারপ্রাইজ’! কী হতে পারে? একটু পর আমার ছেলে শাজেল এসে আমাকে ...করলো। আমার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি ঝরল। একেই বলে আনন্দাশ্রু! ওরা আমাদের না জানিয়ে আজ বিকেলে বিলাত থেকে এসেছে আমার এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। পরে আলীগড়ে ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স করা আমার পুত্রবধূ সাদিয়া ফারজানা চিত্রা বক্তৃতা করলো। বেশ সুন্দর অনুষ্ঠান হলো। অভিবাসীদের একদিকে শুদ্ধ ফরাশি কথাবার্তা আবার অন্যদিকে বিশুদ্ধ বাংলা গান শুনে মুগ্ধ হলাম।
পরদিন আরো অভাবনীয় অভিজ্ঞতা ঘটলো আমার মূল আমন্ত্রণকারী কৌষিক রাব্বানীর অনুষ্ঠানে এসে। কৌষিকের প্রতিষ্ঠানের কাজ প্রথমত নবাগতদের ফরাশি ভাষা শেখানো, দরখাস্ত লিখে দেয়া, আইনগত সহায়তা দান ইত্যাদি। সদ্য কেনা ভবনে দেখা হলো কৌষিকের অন্যতম সহকর্মী রূপে ফরাশি গবেষক জেরোমি কুদরোঁর সঙ্গে। বহু বছর আগে সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তাঁকে ভলান্টিয়াররূপে কাজ করতে দেখেছি। একবার টাঙ্গাইল যাবার জন্য অন্যদের সঙ্গে বাসের ছাদে উঠে বসতেও দেখেছি বলে মনে পড়ে। এখন থেকে শুধু বাংলাদেশিদের নয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অভিবাসীদের জন্য ও সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে যাচ্ছেন কৌষিক। তার সঙ্গে আছেন ১২ জন ফরাশি আইনজ্ঞ। খুব অল্প পারিশ্রমিকে তারা কাজ করেন। কখনো বিনা-পারিশ্রমিকে। যাহোক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, কাউন্সিলর ও প্রথম সনির এসেছিলেন। অন্য অনেকের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত ও আমি বক্তৃতা করলাম।
অনুষ্ঠান শেষে কৌষিক আমাকে আমিরুল আরহামের বাসায় নিয়ে গেলেন নোয়াজিএল এলাকায়। পুরনো বন্ধু আরহাম আমাকে ১৯৯৬ সালে আপ্যায়িত কলেছিলেন এখানে। কবি শামসুর রহমান, সুনীল বঙ্গোপাধ্যায় ও শিক্ত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখও তাঁর বাসায় থেকে গেছেন। সেখানে এক সময়ে রেস্তোরাঁর মালিক জাহাঙ্গীর ও এক ফরাশি নাট্যকার উপস্থিত ছিলেন। দুটি ঘণ্টা খুব আনন্দে কাটলো। নির্ভেজাল আড্ডা ও খাওয়া-দাওয়ায়।
পরদিন দুপুরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও মাল্রো বিশেষজ্ঞ মিকায়েল স্যাঁ কোরোঁর সঙ্গে লাঞ্চ অ্যাপয়ন্টমেন্ট। তিনিও আমার মতো লেজিওঁ দ্যনর খেতাবধারী। আমার দুটো বই ও কয়েকটি প্রবন্ধ আছে মাল্রোর ওপর। তাঁকে অপ্রকাশিত ‘অদ্রেঁ মাল্রো ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ’ শীর্ষক ফরাশি প্রবন্ধটি উপহার দিলাম।
চমৎকার মিষ্টি রোদে বাসে বসে সর্বনের (ঝড়ৎনড়হহব) দিকে ধাবিত হলাম। সেই সর্বন! কত বছর এখানে কাটিয়েছি। বিশেষ করে এর চত্বরে ১৯৬৮ সালে ছাত্র বিপ্লবের কথা মনে পড়ে। এখনও বহু ছাত্র-ছাত্রী জটলা পাকিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। ভিক্তরতগোর মূর্তির সামনে আমার একটা ছবি ওটালেন আমার স্ত্রী। পরে ভেতরে একটু ঘোরাঘুরি করলাম ....সার্ভিস অফিসের অনুসন্ধানে। সেটা এখান থেকে অন্যত্র সরে গিছেয়ে জানা গেল।
বিকেল ৫টায় সর্বনের সামনের এক ক্যাফেতে দু’জন মাল্রো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে রঁদেভু। একজন পিয়ের কুরো, ২০১৫ সালে অকুস্থলে তিনি আমাদের সঙ্গে ব্রেকফাস্টে যোগ দিয়েছিলেন। পরে আমরা বিশলিকায় ‘মাল্রো-অভিধান’ ক্রয় করেছিলাম কাছের এক বইয়ের দোকান থেকে। অন্যজন জঁ-রনে বুরেল। তাঁর মাল্রোর প্যারিস বইটি আমাকে দিলেন। আমি পূর্বোক্ত মাল্রো বিষয়ক ফরাশি প্রবন্ধ ও ফরাশি দেশে রবীন্দ্রনাথের সম্বর্ধনা শীষক ইংরেজি প্রবন্ধ (টোরেন্টোতে পঠিত ও প্রকাশিত) উপহার দিলাম। দুটি ঘণ্টা কেটে গেল আলাকে। বিষয়ের বেশির ভাগই ভিডিও করে রাখলেন।
জবা-কামরানের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশে আমরা চললাম ‘গার দু নর’ -এর দিকে। দ্রæতগামী জঊজ ট্রেনে চড়তে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা। ভয়ানক ভিড়। ধাক্কাধাক্কি। তবে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম। কামরান আমাদের ‘বেস্ট অব ইন্ডিয়া’ রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো সবাই দোশা খেলাম। তারপর কাছেই বাংলাদেশি দোকান গুলোয় বাজার করলেন তাঁরা। বহুদেশী ভাইয়ের সাক্ষাৎ ঘটল।
পরদিন কড়া মিষ্টি রোদে বসে বই পড়লাম জবাদের বাহির আঙিনায়। সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর ইউরোপীয় সংস্করনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোদ দিলাম। ছোট্ট ঘরে ২৫/৩০ জন শ্রোতার মধ্যে প্রায় সবাই বক্তা। আমি ১৯৪৮ থেকে আমার পঠিত পত্রিকার কথা বললাম বহুতায়। তারপর কেককাটা, নাস্তা বিতরণ।
১০ অক্টোবর, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর মৃত্যু দিবস। ১৯৭১ সালে এজন্য আমরা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে সভা করেছিলাম। এবার আমার একান্ত ইচ্ছা তাঁর কবর জেয়ারত। একই কবরে ওয়ালীউল্লাহ ও আমার তিন বছরের ছাত্রী আনমারী শুয়ে আছেন। মানা করা সত্তে¡ও তাঁর বোন ফ্রঁ কোয়াজ হালকা লাইদ ....তারপর আমাদের কবর স্থানে নিয়ে গেলেন। তিনি আগে একবার এসে কয়েকটা গোলাপ রেখে গেছেন। আমি ছ’টা সাদা ফুল ও চারটি বেগুনী ফুলের একটি তোড়া রাখলাম।
সময় এগিয়ে যাচ্ছে। আমার দ্রæত ভের্গাইর দিকে গেলাম। কেন জানি না, আমার.... ঘুরছে ২২ রুদে জেতা জেনেরোঁ, যেখানে ১৯৬৭ সালে ভারতীয় বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিতি ফরক স্থাপনের উদ্দেশে এসেছিলাম। কিন্তু ছবি তোলা হলে পেছন থেকে এক সুদর্শন যুবক.... বলে উঠলেন, ‘আপনারা মাইকেল মধুসূদনের বাড়ি খুঁজছেন? সেটা এখানে নয়। আরেকটু পর। ঐ যে গাছের পরের বাড়িটা ১২ নম্বর বাড়ি। সেখানে নাম ফরক আছে।’ গেলাম সেদিকে। খুঁজে পাই না। ‘একটি কুইটিম নামে একটা বইয়ের দোকান আছে। সেখানে হিসাব রক্ষকের কাঁচের গোলচত্বরে বসে আছেন এক বয়স্ক মহিলা। তাঁকে অনুরোধ করতেই তিনি বেড়িয়ে এসে দেখিয়ে দিলেন। দেখলাম, খুব উঁচুতে একটা ফলক। দেখা যায় তো পড়া যায় না। যাহোক, ছবি তুলে ফিরে আসছি গাড়ির কাছে। দেখি, সেই সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছেন ‘গোলডেন বেঙ্গল’ রেস্তোরাঁর বারান্দায়। নাম শাহাদুজ্জামান বাড়ি মানিকগঞ্জ। কিছু খাবার জন্য খুব জোর করলেন। আমরা একটু পানি খেলাম। বাসায় ফিরে আবার রওনা হতে হলো ফ্রঁকে আভেক রাব্বানী অফিসে। প্রথমে জেরোমি কুদ্রোঁ পরে কাব্য কামরুলের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতা। সবাই চলে গেলে কৌষিক রাব্বানী আমাকে দোতলা অফিস ও ক্লাসরুম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখালেন এবং তাঁর প্রত্যয়ও .... জানালেন। খুশি হলাম, নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু করণীয় প্রসঙ্গে কথা বললাম। এরপর তাঁদের আবাস স্থলে গিয়ে তাঁর বাবা-মার সঙ্গে মিলিত হলাম। মিসেস দারুণ চমৎকার রান্না করে রেখেছেন। সেখানে আরো অনেক মেহমান। গল্প গুজবে বাড়িটা মেতে উঠল। এরপর কৌষিক ‘প্যারিস বাই লাইন’ দেখিয়ে শঁজে লিজে আর তুর এফেল ঘুরিয়ে বাসায় নিয়ে এলেন রাত একটায়।
পরদিন সকাল ১০টার দিকে উবের আনিয়ে সার দু নর যাত্রা। প্যারিসে জন্ম, এক সময়ে মরক্কের কাজা (অর্থাৎ কাজাবøঁকা)র আধিবাসী আবদাল্লা ২৫ মিনিটের জায়গায় প্রায় ১ ঘণ্টায় নিয়ে এলো স্টেশনে। যানজট। রাস্তা বন্ধ। নানা সমস্যা। ভাড়া সেই ২৫ ইউরো। এরপর ২ ঘণ্টার একটু বেশি সময়ে গন্তব্য স্থলে এসে পৌঁছুলাম অর্থাৎ বিলাতে। আসার আগে বাসে ট্রেনে প্রায় পুরো দিন লেগে যেত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকার সময়ে ব্রজেন দাশ নামে এক যুবক সাঁতার কেটে যা পার হয়েছিলেন অনেক ঘণ্টায় আজ মাত্র ২০/২৫ মিনিটে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তা ট্রেনে অতিক্রম করলাম। ‘লা মঁশ’ থেকে ইংলিশ চ্যানেল’।
ভাবছি, আমার স্বদেশবাসী বন্ধুদের কথা। কষ্টকর অভিবাসী জীবন পার হয়ে নাগরিকত্ব অর্জন একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এর মধ্যে অনেকে তা অতিক্রম করেছেন। আল্লাহ্ মেহেরবান।
এক মেয়েসহ আমাদের দুই ছেলে। ছোট শামের ৮ বছর ধরে বিলেতে। স্বপরিবারে ব্রিটিশ নাগরিক, একটি ছোট সুন্দর অ্যাপার্টমেন্টের অধিকারী। বড় ছেলে নাবিল বছর দুয়েক হলো জর্মন কোম্পানীর চাকরি ছেড়ে টরন্টো অভিবাসী। বন্ধুদের দৃষ্টান্ত, উন্নত জীবনের লক্ষ্য তাদের দেশ ছাড়া করেছে। আমরা বাধা দেইনি। পৃথিবীর সব দেশে এরকম অনেকে করছে। ফরাশিদের অনেকে তা মেনে নিয়েছে। বাংলা-ইংরেজি ভাষা ঐতিহ্য ঢেকে ফরাশি ভাষা-সংস্কৃতিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা যথেষ্ট শক্ত ব্যাপার। আমি দেখে খুশি হয়েছি যে, অনেকে তা করতে পেরেছেন। তাঁরা সফল! ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনীতিতে আপন অধিকার রক্ষায় কেউ কেউ এগিয়ে এসেছেন দেখে আশ্বস্ত হয়েছি। বাকি খোদার মর্জি!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন