শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য

ছিন্ন বন্ধন

| প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

এমন একটা দিনের জন্য রাবেয়া মোটেও প্রস্তুত ছিল না,সাথে মাত্র ছোট একটা ট্রলি ব্যাগ আর কাধে একটা সাইড ব্যাগ, ফজলের হাত ধরে সোজা উত্তরার এক পরিচিতের বাসায়, সেখান থেকে এয়ারপোর্ট। যখন শুধু মাকে জানিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পরেছিল তখন মনের মধ্যে এক অব্যক্ত যন্ত্রণায় কুকড়ে যাচ্ছিল। বুক ভরা হাহাকারে ভিতরটা দুমরে মুচরে যাচ্ছিল। কিন্তু উপায় নেই এদেশ থেকে পালিয়ে যেতেই হবে নয়তো আর বেঁচে থাকা যাবেনা। হয় বিদেশ নয় মৃত্যু। বেঁচে থাকতে কার না ইচ্ছে হয়। অতএব রাবেয়া বিদেশকেই বেছে নিল।

বাবামার বড় মেয়ে রাবেয়া,যাচ্ছেতাই আচরণে কখনো বাধা পরেনি,গ্রামের মাতব্বর রাফিজের সচ্ছল সংসারে সুন্দরী চরিত্রহীন এক মেয়ে রাবেয়া। প্রায় যুবতী হওয়ার সাথে সাথে গ্রামের
ছেলেরা পারেতো গিলে খায় রাবেয়াকে।আজ একজন তো কাল অন্যজন। গ্রামের ৭/৮/৯জন ছেলে শুধু তার প্রেমের কাছেই বারবার পরাভূত হয়।
সবাইকে সংগ দেয়া, ফষ্টিনষ্টি করা রাবেয়ার দৈনন্দিন রুটিন হয়ে যায়।
মা খুব ধর্ম শীল মহিলা, নামাজী, সচ্চরিত্রের অধিকারী। কিন্তু বাবা রাফিজ তার উল্টো, মদ,মেয়েমানুষ রাতভর বিচার শালিস,জুয়া সবই সে সেচ্ছাচারী ভাবে করতে থাকে, স্ত্রী রমিজার
কথা কখনো শুনতেই চায়নি।রমিজা সব বাধ্য হয়ে সহ্য করে আর খারাপ সবকিছু থেকে মহান আল­াহ পাকের দরবারে পানাহ চায়।
বাবা নিজেই চরিত্রহীন মেয়েকে কি শাসন করবে আর মায়ের কথা রাবেয়া কোনদিন মানেনি, মায়ের বারণ শুনেনি,যখন যেভাবে খুশী সেভাবে চলেছে। রাবেয়ার সেচ্ছাচারী জীবন রমিজা একদম পছন্দ করে না, মা মেয়েতে এই নিয়েই প্রতিদিন লড়াই চলতে থাকে। রাবেয়া সব ছেলেদের সাথে এমন আচরণ করে সবাই ভাবে রাবেয়া শুধু তাকেই ভালো বাসে। এভাবে সত্যিটা আস্তে আস্তে সব ছেলেদের আলোচনায় জানা হয়ে যায়।ছেলেগুলো এক সাথে তৈরী হয় প্রতিশোধ নেবার জন্য। রাবেয়ার ভাগ্য ভালো খবর টা জেনে যায় সত্যিকার ভালোবাসে যে সজল তার মাধ্যমে। তখনই শুধু তড়িঘড়ি করে মাকে জানিয়ে সজলের হাত ধরে বিদেশে পাড়ি জমায়।যা তাকে নিজস্ব সংসার আর সমাজ থেকে বঞ্চিত করে।
এক সময় প্রায় তিরিশ বছর পর ফিরে আসে গ্রামে। তখন গ্রামের সব পাল্টে গেছে। চিরচেনা গ্রাম তখন অচেনা হয়ে গেছে। ভাইবোন গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছে। বাবা মার কবরে আগাছার ভীড়। রাবেয়া আস্তে আস্তে সব ঝোপঝাড় পরিস্কার করে, নূতন করে চার পাঁচটা আধপাকা ঘর তোলে,নূতন গাছ লাগায়,বাবামার কবরে ফুল গাছ বুনে দেয়,এক ছেলে এক মেয়ে শহরে থাকে নিজেদের সংসার নিয়ে,আর স্বামী সজল এখনও কুয়েতেই চাকুরী করে। মাঝে মাঝে রাবেয়ার কাছে গ্রামে বেড়াতে আসে। নিজের জন্মভূমিতে একা থেকেও রাবেয়া বেশ প্রশান্তিতে সময় কাটায়।ভাইবোন গুলো, ছেলেমেয়েরা তাদের সন্তান নিয়ে মাঝে মাঝেই বেড়াতে আসে।কিন্তু মধুমাখা সেই অতীত স্মৃতি গুলো রাবেয়া এখনও ভুলতে পারেনা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন