ড. এ এইচ এম মোস্তাইন বিল্লাহ
॥ চার ॥
তৎপরিপ্রেক্ষিতে উপরিক্ত আইনের সংশোধনী এনে একটি অনুচ্ছেদ ও সংযোজিত করেছে তা হ’ল: যে কোন উদ্বৃত্ত রাজস্ব যা কোম্পানির মুনাফা, বা ভূসম্পত্তি অধিগ্রহণ করে যে অর্থ আসে তা থেকে সামরিক, বেসামরিক, বাণিজ্যিক খরচাদি এবং সংশ্লিষ্ট ঋণের প্রয়োজনীয় সুদ ইত্যাদি পরিশোধের পর যা উদ্বৃত্ত থাকবে তা থেকে প্রতি বৎসর এক লক্ষ টাকার নিচে নয় এমন পরিমাণ অর্থ ভারতীয়দের শিক্ষাও সাহিত্য খাতে খরচ করা যাবে। এ অর্থ জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য ও খরচ করা যাবে। এ ধরনের সংশোধনীর তিনটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় (ক) এক লক্ষ টাকার নিচে নয় (খ) শিক্ষা ও সাহিত্য খাত এবং (গ) জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার উন্নয়ন করা। উল্লেখ্য, সে সময় ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানকে অবজ্ঞা করা হয়েছিল।
কোর্ট অব ডাইরেক্টরস জুন ১৪, ১৮১৪ সালে ভারতীয় সরকারকে দেশজ চিকিৎসা, জ্ঞান বিজ্ঞানের উদ্ভাবন, সম্প্রসারণ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়, যা ইউরোপীয় পেশাজীবী ও ব্যবহারকারীদের জন্য ও পছন্দনীয় হতে পারে। দুর্ভাগ্যক্রমে, ভারতীয় সরকার বাস্তবে ভারতের দেশজ ওষুধ নিয়ে কোন গবেষণার উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ রয়েছে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ভারতীয় সরকারকে এ দেশের জনগণের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্প্রসারণের তাড়া করেছিল। এ উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যেই দীর্ঘদিন পর্যন্ত বরাদ্দকৃত নির্ধারিত এক লক্ষ টাকা অব্যয়িত ছিল। এক সময় শিক্ষার জন্য এ অর্থ ব্যয় করা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়, অন্যথায় সরকারি কাজে চাকরিজীবী পাওয়া প্রায় অসম্ভব হবে বলে আশঙ্কা করেছিল।
তৎপরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু “ল” অফিসার্স তৈরী করার জন্য ১৭৯১ সালে বেনারাস হিন্দু কলেজ স্থাপন করে। বৃটিশরা তাদের সুবিধার্থেই ঈযধৎঃবৎ অপঃ ১৮১৩ প্রণীত/অনুমোদিত ভারতীয় সরকারি অর্থে দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে। একই উদ্দেশ্যে ১৮২১ সালে পুনাতে “ডেকান কলেজ” প্রতিষ্ঠা করা হয়। মোট কথা বৃটিশদের সরকারি কাজের সহায়তার জন্যই মূলত তারা ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। একই ভাবে উনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে বাংলায়, মাদ্রাজের এবং অন্যান্য রাজ্যের সরকার গুলি বেসামরিক কর্মচারী তৈরীর জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় শুরু করে ছিল। (ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঊফঁপধঃরড়হ রহ ওহফরধ ঁহফবৎ জঁষব ড়ভ ঊধংঃ ওহফরধ ঈড়সঢ়ধহু পৃ : ২৩) রাজনৈতিক যৌক্তিক বিবেচনায় ভারতীয় বৃটিশ সরকার শিক্ষা সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল, যদিও শিক্ষা বরাদ্দের লক্ষ টাকার বাজেট বহু অর্থ অব্যবহ্রত থাকতো। বাস্ততে সরকারি কর্মচারী তৈরি করার জন্য এ অর্থ ব্যয় করা জরুরি ছিল। তাই মুসলিম ও হিন্দু ধর্মীয় প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাছাড়া কোর্ট কাচারিতে যোগ্য আইন কর্মকর্তার বড় অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল।
সে সময় দু’টি মাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল, যেগুলো চার্টার এক্ট ১৮১৩ অনুসারে এক লাখ টাকার অনুদান গ্রহণ করতো। পুনায় ডাকান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮২১ সালে। পিস্ওয়াজ এজন্যে প্রতি বৎসর প-িত ব্রাম্মণতের মাঝে অর্থ বিতরণ করতো। ডাকান বৃটিশ ভূখ-ের হওয়ার পর চাপলিন, ডাকানের কমিশনার প্রস্তাব করেছিল তার অর্থের কতকাংশ কলেজের জন্য খরচ করতে। উপনিবেশ সরকারের পরিকল্পনা মত শিক্ষা সম্প্রসারণের ফলে তারা সস্তায় ও সহজে সরকারি কর্মচারী পাওয়া যেত, তাছাড়া শিক্ষার জন্য তাদের খরচ ও ছিল ন্যূনতম।
১৮৩৩ সালের চার্টার এ কোথাও মানবিক উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা যাবেনা এমন কথা বলা নেই। তথাপি এক লাখ রুপির গ্রান্ট ১৮১৩ সাল থেকে ১৮৩৩ সালের মধ্যে ২০ বৎসর সময়ে দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। রহস্যজনক হল, ভারত সরকার এদেশের গণমানুষের জন্য শিক্ষা সম্প্রসারণে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব না দিলেও দু’বৎসরের মধ্যে এঙ্গোসাইজেশান অব এডুকেশান এক্টে দু’বৎসরের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল । এর ফলে ওক্সিডেস্টালিস্ট ও ওরিয়েন্টালিস্ট বিরোধের অবসানের দ্বার খুলেছিল। বিশেষত; ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিকের বিখ্যাত কার্যবিবরণীতে তিনি ভারতে এঙ্গোসাইজ শিক্ষা ব্যবস্থা ঘোষণা দিয়েছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন