শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

বিতর্কিত বেস্টিনেটের তৎপরতা শুরু

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

শিগগিরই উন্মুক্ত হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। দীর্ঘ দিন যাবত সোর্স কান্ট্রি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ থাকায় দেশটির কয়েকটি খাতে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব শিল্পখাতের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় গতি বাড়াতে নতুন প্রক্রিয়ায় আগামী দুই/এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার পর্দা উঠবে। দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলা সেগারান গত সোমবার কুয়ালালামপুরে এ ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটিতে অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকায় হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মীর মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রেফতার আতঙ্কে হাজার হাজার অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী গোপনে থেকে কাজ করছে।

দশ সিন্ডিকেটের দুর্নীতির কারণে মালয়েশিয়ার নতুন সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ রেখেছে। দুদেশের সরকার অনেক দেন-দরবার করে যখন শ্রমবাজারটি ফের চালুর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তখনই নতুন আদলে সিন্ডিকেট তৈরির অপতৎপরতা শুরু করেছে ৩ দেশে (নেপাল, মালদ্বীপ ও মালয়েশিয়া) কালোতালিকাভুক্ত কোম্পানি বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডি। তাদের অনলাইন পদ্ধতি ফের বাংলাদেশে কার্যকর করতে এরইমধ্যে রাজধানীর বনানীতে অফিস খুলে বসেছে। আগে ২৬টি মেডিক্যাল সেন্টার কর্মীদের মেডিকেল করার অনুমোদন পেলেও বেস্টিনেট কোম্পানির অধীন নতুন সিন্ডিকেট ১৬টি মেডিক্যাল সেন্টার নির্বাচিত করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকারের রি-হায়ারিং প্রকল্লের অধীনে মাইজির মাধ্যমে এসব অবৈধ কর্মী বৈধতা লাভের জন্য ৫ হাজার রিংগিট থেকে ৬ হাজার রিংগিট দিয়ে রেজিস্ট্র্রেশন করে প্রতারণার শিকার হয়েছে। কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে এ অবৈধ কর্মীদের পুনরায় বৈধতা লাভের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ভেস্ট মার্কেটিং এসডিএন বিএইচডির ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুহুল আমিন এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধতা লাভের উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

গত রোববার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ কোতোয়ারা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মালয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের অভিযানে ১৮০ জন বাংলাদেশি কর্মী আটক হয়েছে। এদের মধ্যে একটি গেস্ট হাউজ থেকে ১১ জন বাংলাদেশি নারীও গ্রেফতার হয়েছে। এক শ্রেণির মানবপাচারকারী চক্র হাউজ মেইড-এর ভিসা দিয়ে নারীদের মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন নাইট ক্লাবে নিয়ে নৃত্যের নামে নানা অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের মানবপাচারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ কুমিল্লা জেলার একজনকে কালোতালিকা করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশি কর্মীদের মাঝে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। কুয়ালালামপুরের কোতোয়ারাস্থ রাজধানী রেস্টুরেন্টের সত্ত্বাধিকারী কাজী সালাহ উদ্দিন গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে।

২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ দশ সিন্ডিকেটের কর্মী নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি রোধে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের আগের পদ্ধতি (এসপিপিএ) বাতিল করে দেন। এসপিপিএ পদ্ধতিতে পূর্ববর্তী সরকার অনুমোদিত বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনসহ শুধুমাত্র ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি তিন লাখ টাকা থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা ব্যয়ে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতো। দশ সিন্ডিকেটের মধ্যে হাবের সাবেক মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহর সনজরি ট্রাভেলসও ছিল। এসপিপিএ পদ্ধতিতে দশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ সম্পর্কে ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করেন প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির। সিন্ডিকেটের অধীনের মেডিক্যাল সেন্টারগুলোও লাখ লাখ কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় নতুন করে কর্মী নিয়োগের যে স্থগিতাদেশ ছিল তা খুব শিগগিরই প্রত্যাহার করা হবে। পুনরায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য নতুন পদ্ধতি চালু করবে মালয়েশিয়া। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বার্নামা ও দ্য স্টার অনলাইনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দিয়েছেন মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলা সেগারান। মানবসম্পদ মন্ত্রী বলেন, আশা করি, আমরা এক অথবা দুই মাসের মধ্যে পর্যালোচনাটি (কর্মী নিয়োগের বিষয়টি) শেষ করতে পারব, যা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মানবসম্পদ মন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের স্থগিতাদেশের ফলে মালয়েশিয়ার বেশ কয়েকটি প্রধান শিল্পখাত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি (রোপণ) ও নির্মাণ শিল্প। এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার প্রত্যাশা করছেন তিনি।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ গত সপ্তাহে কুয়ালালামপুরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় চার লাখ বৈধ বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছে। আগামী মাসে মালয়েশিয়ার সঙ্গে নতুন নিয়োগ পদ্ধতিতে চুক্তিতে পৌঁছানোর আশা করছে বাংলাদেশ। মন্ত্রী আশ্বাস দেন, কর্মী প্রেরণের নতুন পদ্ধতিটি সিন্ডিকেটবিহীন স্বচ্ছ হবে। প্রবাসী মন্ত্রী বলেন, যেহেতু কর্মী নিয়োগের আগের পদ্ধতিটি বাতিল করা হয়েছে তাই আমরা নতুন পদ্ধতি তৈরি করতে কাজ করছি। আগস্ট মাসেই এ বিষয়ে সমাধান আসতে পারে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, গত ২৯ জুন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ মালয়েশিয়া সরকারকে লেখা এক চিঠিতে মেডিক্যাল সেন্টার নির্বাচনে মালয়েশীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান ‘ফরেন ওয়ার্কার্স মেডিকেল এক্সামিনেশনকে (ফোমিমা) অনুমোদন ও নির্বাচনের অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্ত আমিন-স্বপন গ্রুপ ফোমিমাকে পাশ কাটিয়ে ১৬টি মেডিক্যাল সেন্টারকে তাদের কর্মকান্ডে অন্তর্ভুক্ত করেছে যার ২টির মালিক নয়া সিন্ডিকেটের হোতা স্বপন।

বাংলাদেশি জনশক্তি ব্যবসায়ী রুহুল আমীন স্বপনের নেতৃত্বে সদ্যগঠিত ওই সিন্ডিকেট এর আগে মালয়েশিয়ার সাবেক সরকারের আমলে বাংলাদেশের কর্মীদের কাছ থেকে মালয়েশিয়ায় চাকরি দেবার নামে কোটি কোটি মালয়েশিয়ান রিঙ্গিট হাতিয়ে নিয়েছে। ওই দেশের গণমাধ্যম দ্য স্টারের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। সাবেক সরকারের মদদপুষ্ট হলেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিকদের সঙ্গে এই বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সখ্য তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, মালয়েশীয় কোম্পানি বেস্টিনেট এরই মধ্যে বেস্টিনেট বিডি নামে বাংলাদেশ ইনভেসমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) অনুমোদন নিয়েছে যেখানে বেস্টিনেট (বাংলাদেশ) লিমিেিটড নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে আমিনুল ইসলাম বিন আবদুল নুর ও মোহাম্মদ রুহুল আমিনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আমিনুলের নামে ১০ হাজার ও রুহুলের ২ হাজার শেয়ার দেখানো হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন