নরসিংদীর বাজারে মুরগির ডিমের দাম অস্বাভাবিক গতিতে বেড়ে চলছে। গত এক পক্ষকালে মুরগির ডিমের কুড়ি প্রতি দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ১৪০ টাকা কুড়ির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২শ’ টাকায়। হালিপ্রতি ডিমের মূল্য বেড়েছে ২২ টাকা। ২৮ টাকা হালির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
খুচরা বিক্রেতারা ডিমের মূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারছেন না। তারা বলছেন, পাইকারি বাজারে ডিমের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দাম বেড়েছে। পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকে বাড়তি মূল্যে কিনে এনে স্বল্প লাভে বিক্রি করছে।
ডিমের মূল্য বৃদ্ধির কারণ নিয়ে খামারিদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নরসিংদী ছিল লেয়ার মুরগির খামারের জন্য বিখ্যাত। বিগত দুই দশকে নরসিংদী জেলার শিবপুর, পলাশসহ বিভিন্ন জেলায় কয়েক হাজার মুরগি খামার গড়ে উঠেছিল। এক একটি খামারে ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত মুরগি পালন করা হতো। ডিম উৎপাদন হতো স্থানীয় চাহিদার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
বেসরকারি হিসাব মতে, নরসিংদীর খামারগুলোতে দৈনিক উৎপাদিত হতো ৮০ থেকে ৯০ লাখ ডিম। প্রতিদিনের উৎপাদিত ডিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও গাড়ি ভর্তি করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হতো। এমনিভাবে নরসিংদী জেলার ৬ টি উপজেলাই ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠে। লেয়ার মুরগির খামারে সমৃদ্ধ হয়ে যায় নরসিংদী জেলা। গত বছরের শেষ ছয় মাসে হঠাৎ বার্ড ফ্লু›র আক্রমণে সবই প্রায় শেষ হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্থ খামারিদের হিসেব মতে, বার্ড ফ্লু’র কারণে ১ কোটি মুরগি মারা যায়।
স্থানীয় প্রাণী সম্পদ বিভাগ এই সর্বনাশা বার্ড ফ্লু নিয়ন্ত্রণে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। খামারীদের অভিযোগ, হাজার হাজার সমৃদ্ধ খামারগুলির পিছনে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কোন নজরদারী ছিল না। কোন কমপ্লেইন না দিলে তারা উকিও দিত না। কোন সমস্যা হলে টাকা দিলে তারা খামারে যেত আবার দায়সারা গোছের কাজ করে চলে আসতো। টাকা না দিলে তার খামারে যেত না। এমনিভাবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের অবজ্ঞা অবহেলার কারণে খামারিরা পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি। খামারের লাখ লাখ মুরগি রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদেরকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা মুরগির মড়ক রোধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেননি। এ অবস্থায় ছোট-বড় প্রায় আড়াই হাজার খামারের ১ কোটি মুরগি মারা গেছে। সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন খামারিরা। যারা নতুন করে কিছু পূঁজি জোগাড় করতে পেরেছে তারা কোন রকমে টিকে আছে। যারা পুঁজি জোগার করতে পারেনি তারা খামার বন্ধ করে দিয়েছে।
মড়কের কারণে নরসিংদীতে কমবেশি ২ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে ডিমের উৎপাদনে ব্যাপকভাবে ধস নেমেছে। এছাড়াও ডিমের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে, বাচ্চার মূল্য বৃদ্ধি এবং খাবারের মূল্য বৃদ্ধি। মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী আমার গুলো যখন তখন বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। খাবার উৎপাদনকারীরা ও তাদের খেয়াল খুশি মতো যখন তখন খাবারের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অধিকাংশ খামারি খাদ্য উৎপাদনকারীদের নিকট থেকে থেকে বাকিতে খাবার নিয়ে থাকে।
এই সুযোগে খাদ্য বিক্রেতারা যখন তখন দাম বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া এক শ্রেণীর খামারিরাও বিভিন্ন অজুহাতে যখন তখন ডিমের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। বিদেশি ডিম আমদানি নিষিদ্ধ থাকায় খামারিরা দেশের মনোপলি ব্যবসা করছে। সামান্য অজুহাতে ডিমের মূল্য বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে কেড়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সরকার ডিমের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন