শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

তথ্য-প্রযুক্তি খাত উন্নয়নে সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের অঙ্গীকার

প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপান্তরের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেখানে দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি জানান, গত ৭ বছরে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে রপ্তানির পরিমাণ ২৬ মিলিয়ন ডলার থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। একই সঙ্গে এ খাতের সুষ্ঠু বিকাশের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে শীঘ্রই একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, বর্তমান সরকার দেশে ই-গভার্নেন্স চালুর জন্য বদ্ধপরিকর। ই-কমার্স ব্যবস্থা চালুর জন্য ভোক্তা ও ক্রেতার মধ্যকার আস্থা অর্জনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবস্থা জনপ্রিয় করার জন্য প্রচলিত ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে এর আওতায় নিয়ে আসার আহŸান জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পুরান ঢাকায় শতবছর যাবত পরিচালিত ব্যবসায়িক কর্মকাÐকে যদি ই-কমার্সের আওতায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে কর্মঘণ্টা বাঁচানোর পাশাপাশি ব্যবসায় ব্যয় হ্রাস পাবে। প্রতিমন্ত্রী দেশে স্থানীয়ভাবে উৎপদিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য পণ্য সামগ্রীর সকল তথ্য-সম্বলিত একটি ই-কমার্স পোর্র্টাল তৈরির জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহŸান জানান।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘পাইকারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ই-কমার্স ব্যবসায় সম্ভাবনা ও সচেতনতা তৈরি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার প্রদান করার ফলে তথ্য-প্রযুক্তি খাতভিত্তিক বিভিন্ন সেবাসমূহ যেমন মোবাইল মানি ট্রান্সফার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য ইত্যাদি কার্যকারিতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, এখাত হতে আগামী ২০২১ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জনের সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ২০১০ সালে ই-কমার্স চালু হলেও ২০১৬ সাল নাগাদ এ খাতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে যা এবছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার বাজার ও ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং ভবিষ্যতে বিলিয়ন ডলারের দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র পুরান ঢাকা বর্তমানে অপরিকল্পিত শহরায়ন, সরু রাস্তা, নিয়মিত যানজট ও অপ্রতুল যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে ব্যবসায়ীক ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এমতাবস্থায়, ই-কমার্সের মাধ্যমে পুরান ঢাকার পাইকারী ও খুচরা ব্যবসা কার্যক্রম সম্পাদন হলে তা ব্যবসায়ীদের খরচ হ্রাস, কর্মঘণ্টা সঞ্চয় ও যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধিসহ ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে একটি নতুন সেতুবন্ধন সৃষ্টি করতে পারে। তিনি ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের উৎসাহীত করতে এটুআই প্রকল্প ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এলক্ষে তিনি ব্যবসায়ীদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রণোদনা প্রদান, সহজ শর্তে আর্থিক সুবিধা প্রদান, পাইকারী ও খুচরা মার্কেটে দ্রæত ও ফ্রি ওয়াইফাই চালু করার প্রস্তাব করেন। তিনি ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এ খাতের জন্য যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন, আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়ন, ই-কমার্সের মাধ্যমে সকল লেনদেন আগামী ৫ বছর পর্যন্ত ভ্যাট-এর আওতা মুক্ত রাখা, বিদেশী ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত সব ভিসা, মাস্টারকার্ড ও এ্যামেক্স কার্ড পেমেন্ট গেটওয়ে উন্মুক্তকরণ, সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণসহ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নিরবিচ্ছিন্ন পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
ডিসিসিআই টেলিকম ও আইসিটি স্ট্যান্ডিং কমিটির আহŸায়ক সৈয়দ আলমাস কবির সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতার কারণে পুরোনো ঢাকার ব্যবসায়ীবৃন্দ নতুন নতুন ক্রেতা আকর্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে ই-কমার্স কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি আরোও বলেন, ই-কমার্স মাত্র ১টি পোর্টালের মাধ্যমে হাজার হাজার এমনকি কয়েক লাখ পণ্য ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী প্রদর্শনের সুযোগ করে দেয়।
নির্ধারিত আলোচনায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লি.-এর ডিএমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন, ই-ক্যাব’র সভাপতি রাজিব আহমেদ, বেসিস’র সভাপতি শামিম আহসান এবং ডিসিসিআই টেলিকম ও আইসিটি স্ট্যান্ডিং কমিটির সমন্বয়কারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে বেসিস’র সভাপতি শামিম আহসান বলেন, ই-কমার্স-এর মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতা দু’জনই অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হতে পারেন। ডিসিসিআই পরিচালক রিয়াদ হোসেন বলেন, ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কর্মকাÐ পরিচালনা করা হলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের তথ্য সম্বলিত ডাটাবেইজ তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার কার্যক্রম সম্প্রসারণে ঢাকা চেম্বার এবং সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ একযোগে কাজ করবে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিঃ-এর ডিএমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ই-কমার্স ব্যবসায় লেনদেন হয়ে থাকে। তবে এর বেশিরভাগই অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় না, তাই এক্ষেত্রে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের আরো সহজতর করতে পারলে সরকার আরো বেশি হারে রাজস্ব আহরণ করতে পারবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি হোসেন খালেদ মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করেন। মুক্ত আলোচনায় ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশিদ, সহ-সভাপতি খন্দকার আতিক-ই-রাব্বানী, এফসিএ, আহŸায়ক শাহজাদা এ হামিদ, ডিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি এম এ মোমেন, প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আলহাজ আব্দুস সালাম প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন