স্পোর্টস রিপোর্টার : বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের দাবিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখালো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বুধবার শেখ জামাল তাদের চুক্তিভুক্ত জাতীয় দলের ফুটবলারদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্লাব টেন্টে ফিরিয়ে দিতে বাফুফেকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলো। তাদের দাবির গুরুত্ব না দিলেও বিষয়টি আমলে নিয়ে গতকাল বাফুফের নির্বাহী কমিটি এক সভায় মিলিত হয়। সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে বাফুফে ভবনে আয়োজিত এ সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, শেখ জামালের বিষয়গুলো আইন অনুযায়ীই নিষ্পত্তি করা হবে। এছাড়া এএফসি কাপে খেলার জন্য শেখ জামাল যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে অন্য কোনও ক্লাবকে অনুরোধ করে। সেই ব্যাপারটি বাফুফে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখবে।
সভা শেষে বাফুফের সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘শেখ জামাল তাদের প্রেস কনফারেন্সে কি বলেছে তা আমাদের বিবেচ্য নয়। বাফুফে নিজ নিয়ম অনুসারেই চলছে। আমাদের কথা হচ্ছে ট্রান্সফার উইন্ডো শুরু হওয়ার পর খেলোয়াড়রা মুক্ত। তারা তাদের যেখানে ইচ্ছা সেখানেই খেলবে এবং ক্লাবগুলোকে সেটি মাথায় রেখেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে আদান-প্রদান করতে হবে। এই উইন্ডোর বাইরে কোন ক্লাব কাকে স্বাক্ষর করিয়েছে, কত টাকা দিয়েছে বা অন্য কি করেছে সেগুলো বাফুফে দেখবে না। দেখার কথাও নয়। খেলোয়াড়রা দেশের স্বাধীন নাগরিক। তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ক্লাব বেছে নেবে। এটাই নিয়ম। যে খেলোয়াড় তার ইচ্ছে মতো ক্লাবে খেলতে ইচ্ছুক সেই ক্লাবেই তার কাগজ জমা দেবেন। এতে কারো দ্বিমত থাকলে এটি প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটি দেখবে। আর এ বিষয়ে আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।’ বাফুফে জাতীয় দলের ফুটবলারদের বিভিন্ন ক্লাবের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন কাজী নাবিল। তার কথা, ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশের পথচলা শেষ হওয়ার পর আমরা শুনেছি যে ফুটবলাররা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আমরা তাদেরকে হোটেল থেকে নিজ দায়িত্বে বাফুফে ভবনে নিয়ে আসি। সেখানে তাদের জিজ্ঞাসা করা হয় কে কোন ক্লাবে খেলবে। বাফুফে কোনও খেলোয়াড়কে কোনও নির্দিষ্ট ক্লাবের হয়ে খেলতে প্রভাব বিস্তার করেনি। খেলোয়াড়রা নিজেরাই তাদের গন্তব্য বেছে নিয়েছেন। আমরা বলেছি খেলোয়াড়দের বাফুফের গেট পর্যন্ত নিরাপত্তা দেয়া আমাদের কর্তব্য। এরপর রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরকারের। বাফুফে কোনও খেলোয়াড়কে কোনও ক্লাবের অধীনে ছেড়ে দেয়নি। শেখ জামাল যে দাবি করছে সেটিও বাফুফের কাছে অমূলক মনে হয়েছে। বাফুফে কোনও খেলোয়াড়কে ক্লাবের কাছে পৌঁছে দেয় না।’
বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জানান, গতকালের সভায় এসএ গেমসসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরে অবশ্য ব্রিফিং পর্ব পুরোটাই কেটেছে শেখ জামাল ইস্যুতে। প্রিমিয়ার লিগের নবম আসর শুরুর অপেক্ষায়। কিন্তু প্রতিবারই দলবদল আসলে সমস্যা তৈরি হয়। এবার সমস্যা হচ্ছে খেলোয়াড়দের চুক্তির মেয়াদ নিয়ে। শেখ জামাল বলছে রেজিস্ট্রেশন ফরম যেদিন ছাড়া হবে তার আগের দিন পর্যন্ত ফুটবলারদের সঙ্গে তাদের চুক্তি থাকবে। বিগত মৌসুম শেষ ও নতুন মৌসুমের ফরম দেয়ার মধ্যে বিস্তর সময় বাকি। এই সময়ে যদি খেলোয়াড়দের চুক্তি থাকে তাহলে এর জন্য খেলোয়াড়দের ক্লাবগুলো কোনো পারিশ্রমিক দেয় না। তাছাড়া নিবন্ধন ফরম বিতরণের সঙ্গে খেলোয়াড়দের তেমন সম্পর্ক নেই। এই প্রসঙ্গে সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পরবর্তী সভাগুলোতে এই সংক্রান্ত বিষয় চূড়ান্ত করব। তাছাড়া শেখ জামালের যদি কোন খেলোয়াড়ের প্রতি অভিযোগ থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটির কাছে অভিযোগ সংক্রান্ত ফাইল পাঠাবো। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।’
শেখ জামাল যদি খেলোয়াড় না পায় তাহলে ঘরোয়া ফুটবলের কার্যক্রমে অংশ না নেয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এতে বাফুফে খুব বিচলিত নয়। নাবিল আহমেদের কথায়, ‘খেলোয়াড়দের যেমন স্বাধীনতা আছে। ক্লাবেরও তেমন রয়েছে। লিগে খেলা না খেলার অধিকার ক্লাবের আছে। বাফুফে আইন অনুসরণ করবে।’ শেখ জামালের সংবাদ সম্মেলনে ক্লাবটির সভাপতি মনজুর কাদের বলেছিলেন, গত আট বছরে ১০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে ফুটবলে। এর মধ্যে এক টাকা যদি উন্নয়নে খরচ হয় তাহলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘কাদের সাহেবের মতো ক্রীড়াপাগল মানুষ আত্মহত্যা করবেন এটা মোটেই আমাদের কামনা নয়।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন