শামীম চৌধুরী, কক্সবাজার থেকে : মাত্র ১০ দিন আগে ১৭ পূর্ণ হয়েছে, পিনাক ঘোষকে দেখে তা বোঝার উপায় নেই। নেত্রোকোনার ছেলেটি দ.আফ্রিকার পেস বোলার মুলডারের শর্ট বলে যেভাবে পুল শটে স্কোয়ার লেগের উপর দিয়ে ছক্কা মেরেছেন, ওই শটটি দেখে বিসিবি’র গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হানিফ ভুঁইয়া রীতিমতো বিস্মিতÑ ‘এই পিচ্চির কনফিডেন্স লেভেল অসাধারণ। দেখলেন কেমন শট খেললো।’ দ.আফ্রিকার বিপক্ষে ৪৩ রানের ইনিংসে ২টি ছক্কার ২টিই দর্শনীয় পুল শটে। এমন শটে পারদর্শী করে তুলতে অবশ্য পিনাক ঘোষকে নিয়ে বিশেষ কাজ করতে হয়েছে কোচ মিজানুর রহমান বাবুলকে। গতকাল সে তথ্যই দিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই ওপেনারÑ ‘অনূর্ধ্ব-১৯ দলে যখন প্রথম আসি তখন পুল শট একদমই খেলতে পারতাম না। বাবুল স্যার (কোচ) আমার পুল শট নিয়ে কাজ করেছে। এখন আমি ৮০ তেও পুল শট খেলতে পারি। এটা আমার এখন ইমপ্রæভ হয়েছে। আমার রেডি পজিশন একটু পিছনে ভালো খেলার জন্যে। সামনের থেকে পিছনের বলগুলো ভালো পিক করতে পারি। বিশেষ করে শর্ট বলগুলো। পুল ছাড়া ফ্লিক, কভার ড্রাইভ এগুলো ইমপ্রæভ করেছি।’
অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসটি পিনাক ঘোষের। গত বছরের জুলাইয়ে দ.আফ্রিকা সফরে ১৪১ বলে ২১ চার ১ ছক্কায় ১৫০ রানের সেই ইনিংসটি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা। যে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ডাররানে অতো বড় ইনিংস খেলেছে, সেই চেনা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে চট্টগ্রামে সেট হয়ে রান আউটে কাঁটা পড়ায় তাই নিজের উপর বিরক্ত পিনাক ঘোষÑ ‘ভালো একটা শুরু করেছিলাম। কিন্তু একটা ভুলের কারণে আউট হয়ে গিয়েছি। টিমটা এক জায়গায় গিয়ে ফেঁসে গিয়েছিল আমার ভুলের কারনে। সামনের ম্যাচগুলোতে যদি ওই জায়গায় থাকি তাহলে আর ভুলটা আর করবো না।’
দ.আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম রানের জন্য বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯তম বল মোকাবেলা পর্যন্ত। সে কারনেই ২৪০’র বেশি স্কোর টেনে নেয়া যায়নি। প্রথম ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়কে ৪৩ রানে হারিয়েও তাই পুরোপুরি সন্তুস্ট নন পিনাক ঘোষ। অবশিস্ট ম্যাচগুলোতে সিঙ্গল খেলার দিকে মনোযোগ দিতে চান এই ওপেনারÑ ‘সিঙ্গেলস থাকলে প্রেসার থাকবে না। এটাই স্বাভাবিক। সিঙ্গেল যদি আটকিয়ে যায় তাহলে প্রেসার আসবেই। তখন বিগ শটসের চিন্তা করব। স্যার আমাকে সব সময় বলেন সিঙ্গেল খুঁজতে। সিঙ্গেল খুঁজলে প্রেসার আসবে না, তখন ইচ্ছেমতো শট খেলতে পারব।’
দ.আফ্রিকার বাধা পেরিয়ে গ্রæপ রাউন্ডে বাংলাদেশের অবশিষ্ট ২ প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড এবং নামিবিয়া। পিনাক ঘোষ নিজের সেরা ইনিংস টপকে নুতন রেকর্ড করতে চানÑ ‘ভালো করার ইচ্ছে তো প্রত্যেক মানুষেরই থাকে। একটা রেকর্ড গড়লে আরেকটা রেকর্ড ভাঙ্গার ইচ্ছে তো থাকেই।’ শৈশবে শচীনকে আদর্শ মেনে ক্রিকেটে হাতে-খড়ি, কৈশরে আদর্শ তার তামীম,সৌম্য, রোহিত শর্মাÑ ‘শচীন টেন্ডুলকারকে ফলো করতাম আগে। এখন তামিম ভাই, সৌম্য ভাই, রোহিত শর্মা। তামিম ও সৌম্য ভাইকে ভালো লাগে। আর রোহিত শর্মাকে অনেক ভালো লাগে।’
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আইসিসি’র সহযোগী সদস্য দেশ নেপালের কাছে হেরে গেছে পূর্ণ সদস্য দেশ নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের গ্রæপে থাকা স্কটল্যান্ডকে গতকাল ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে নামিবিয়ার মতো অজানা প্রতিপক্ষ। এসব অঘটন সতর্ক করেছে বাংলাদেশ দলকে। গ্রæপ রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে দ.আফ্রিকাকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে গ্রæপ চ্যাম্পিয়নশিপের লক্ষ্য যখন বাংলাদেশের, তখন সতর্কতার সাথে পা ফেলতে চান পিনাক ঘোষÑ ‘নিউজিল্যান্ড নেপালের কাছে হারল, তাই কাউকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। যতোক্ষণ পর্যন্ত ম্যাচ বাই ম্যাচ আমরা না জিতব ততোক্ষণ পর্যন্ত এসব নিয়ে ভাববো না। সামনে স্কটল্যান্ড, তাই আপাতত ওদেরকে নিয়ে নিয়ে চিন্তা করছি। এরপর নামিবিয়াকে নিয়ে চিন্তা করব। ম্যাচ বাই ম্যাচ পার করলে আমরা কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে চিন্তা করব।’
প্রথম ম্যাচটিই ছিল ভাইটাল, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে সেই ম্যাচ জিতে এখন এতোটাই চাঙ্গা বাংলাদেশ যে, পিনাক ঘোষের কাছে ভারত, পাকিস্তানের মতো প্রতিপক্ষকেও তেমন আহামরি মনে হচ্ছে নাÑ ‘আমরা যদি আমাদের অনুযায়ী খেলি, যেটা সবাই খেলছে.. কোনো দলই আহামরি না। ভারত ও পাকিস্তানের দলটি ভালো আছে। তবে আহামরি কিছু না। আমরা নিজেদের খেলাটা ভালো করে খেলতে পারি তাহলে কোনো দলই আমাদের কাছে কঠিন প্রতিপক্ষ হবে বলে মনে হচ্ছে না।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন