শিল্পসচিব মো. আব্দুল হালিম বলেছেন, ২০২০ সালের জুনের মধ্যে সাভারে অবস্থিত চামড়া শিল্পনগরির কাজ সম্পূর্ণভাবে সমাপ্ত হবে। তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবন মজুদ আছে, কোথাও লবণের ঘাটতি নেই। তাই আসন্ন ঈদুল আযহায় লবণের মূল্য বৃদ্ধি পাবেনা। শিল্পসচিব বুধবার (৩১ জুলাই) সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত চামড়া শিল্পনগরির প্রকল্প কার্যালয়ে চামড়া শিল্প নগরীর সর্বশেষ অবস্থা এবং দেশে লবণ মজুদ পরিস্থিতি বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।
শিল্পসচিব বলেন, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের তথ্যানুযায়ী এবছর ১ লাখ ১৭ হাজার পশু কোরবানি হতে পারে। বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী চামড়া সংরক্ষণের জন্য কোরবানির সময় তাৎক্ষণিকভাবে ৮২ হাজার টন লবণপ্রয়োজন হবে এবং বছরে বাকি সময় মোট ১ লাখ টন লবণ প্রয়োজন হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ২০১৮-’১৯ লবণ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রেকর্ড পরিমাণ মোট ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে উল্লেখ করে শিল্পসচিব বলেন, চাষী, মিলমালিক ও সরবরাহকারীদের নিকট বর্তমান নয় লাখ টন লবণ মজুদ আছে যা দিয়ে সহজেই নভেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত লবণের সকল চাহিদা পূরণ করা যাবে। নভেম্বর ২০১৯ হতে চাষীরা লবণ উৎপাদন শুরু করবেন। তাই লবণের কোন ঘাটতি হবেনা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিল্পসচিব বলেন, ২০০ একর জায়গার ওপর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য সংশ্লিষ্ট লিঙ্কেজ ইন্ডাস্ট্রি স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের অধীনে একটি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান। অপর এক প্রশ্নের জবাবে শিল্পসচিব বলেন, লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের মানদন্ডে ১৬০০টি প্যারামিটার রয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি প্যারামিটার কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার প্ল্যান্ট সংক্রান্ত। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বাড়াতে অবশিষ্ট ১৫০০ প্যারামিটার অনুযায়ী চামড়া শিল্প নগরীতে স্থাপিত ট্যানারিসমূহের উৎপাদন প্রক্রিয়ার মান উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার প্ল্যান্টে ক্রোম সেপারেশন ও সেডিমেন্টেশনের মান ক্রমশঃ উন্নত হচ্ছে বলে শিল্পসচিব উল্লেখ করেন।
চামড়া শিল্পনগরির কঠিন বর্জ্য ৩টি স্থানে ডাম্পিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে শিল্পসচিব বলেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় উৎপাদিত সকল বর্জ্যই ক্ষতিকর নয়। ক্রোমিয়াম ব্যাবহারের পূর্ব পর্যন্ত উৎপাদিত বর্জ্য নিরাপদ এবং এসকল বর্জ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পণ্য উৎপাদনে ব্যাবহার করা যায়। এসকল ব্যাবহারযোগ্য ট্যানারি বর্জ্যকে কিভাবে উৎপাদনশীল খাতে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা যায়, সেবিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান শিল্প সচিব।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বুয়েটের বিআরটিসি’র টিম লিডার প্রফেসর ড. মো. দেলোয়ার হোসেন, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগেরপ্রফেসর ড. মো. আবদুল জলিল, বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত উল্লাহ, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মো. দিলজাহান ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ, শিল্প মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সেলিম, চামড়া শিল্পনগরির প্রকল্প পরিচালক জিতেন্দ্র নাথ পাল, বিসিকের পরিচালক (বিপনন ও নকশা) মো. মাহবুবুর রহমান, পরিচালক (অর্থ) স্বপন কুমার ঘোষ, পরিচালক (প্রকল্প) মোহাম্মদ আতাউর রহমান সিদ্দিকী ও বিসিকের সচিব মোস্তাক আহমেদ। এর আগে শিল্পসচিব চামড়া শিল্পনগরিতে স্থাপিত কয়েকটি ট্যানারির উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন