শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

হোসেন মাহমুদ : সাহিত্যে ঐতিহ্যের কণ্ঠস্বর

প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আগামী ১৫ জুন লেখক-সাংবাদিক হোসেন মাহমুদের ৬০তম জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে ইনকিলাব সাহিত্যের পক্ষ থেকে তাকে অফুরান শুভেচ্ছা।         
মাহমুদ জামাল
বাংলাদেশের  সাহিত্যের সাম্প্রতিক ধারায় যেসব লেখক-সাহিত্যিক নানাভাবে অবদান রেখে চলেছেন তাদের মধ্যে হোসেন মাহমুদ এক পরিচিত নাম। ১৯৭৫ সালে সাহিত্যের অঙ্গনে নিজের উপস্থিতি ঘোষণার পর থেকে চল্লিশ বছর ধরে সৃষ্টিশীল রয়েছেন তিনি। মৌলিক, সম্পাদনা, সংকলন, অনুবাদ মিলিয়ে বাংলা সাহিত্যের প্রবহমান ধারায় মোট ২৪টি গ্রন্থ সংযোজন করেছেন তিনি। এসব গ্রন্থ তাকে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত করেছে।
হোসেন মাহমুদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এমন এক অঞ্চলে যা সুদীর্ঘকাল ধরে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম সূতিকাগার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মীর মশাররফ হোসেন বা লালন আর কাঙাল হরিনাথের চারণভূমিতে বেড়ে ওঠা হোসেন মাহমুদকে আমরা যেন মীর মশাররফের উত্তরসূরি হিসেবেই দেখতে পাই।  তিনি এক ঐতিহ্য অন্বেষী সাহিত্যিক হিসেবে সাহিত্যাঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার সাহিত্যকর্মের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষদের অন্বেষণে নিবেদিত হয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে বিদেশী গল্প ও ইতিহাসের অনূদিত রূপায়ণ। তবে সকল ক্ষেত্রেই তিনি তার এ অন্বেষার ভাবধারা অব্যাহত রেখেছেন।
হোসেন মাহমুদকে একজন ঐতিহ্যবাদী লেখক বলাই সমীচীন। লেখায় তিনি নিজস্ব এক ভাবধারা প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছেন। অসংখ্য গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ তিনি রচনা করেছেন; সাহিত্য আলোচনা ও সমালোচনা করেছেন তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, মূল্যায়ন করেছেন বিভিন্ন লেখকের সাহিত্যকর্মের। মৌলিক সাহিত্যকর্মের  পাশাপাশি তার এ সাহিত্য সমালোচনা তার মনন ও মেজাজের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে সম্পাদনায় ও সংকলনে তার অবদান সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত আমাদের ঐতিহ্যবাহী লেখকদের উল্লেখযোগ্য লেখা ও রচনাবলী সংকলন ও সম্পাদনার মাধ্যমে তাদের সৃষ্টিকর্ম সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী, ‘বাংলা সাহিত্যে মুসলিম জাগরণ প্রয়াস’, সৈয়দ আসাদ উদ্দৌলা শিরাজী, শেখ ফজলল করিম রচনাবলী, বাঙালি মুসলমানের আলোক বর্তিকা ও অন্যান্য প্রবন্ধ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য, প্রবন্ধ সংগ্রহ: সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী, অগ্রণী নারী সৈয়দা ফেরদৌস মহল শিরাজী প্রভৃতি গ্রন্থ তার ঐতিহ্যবাদিতার স্বাক্ষর বহন করছে।  
হোসেন মাহমুদ জন্মেছিলেন কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার ধোকড়াকোল গ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবারে, তারিখটি ছিল ১৯৫৬ সালের ১৫ জুন।  তার পিতা আমির আলী মোল্লা ছিলেন একজন সমাজসেবক। মাতা সৈয়দা নূরমহল শিরাজী ছিলেন বাঙালি মুসলিম নবজাগরণের অগ্রদূত সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর দ্বিতীয় কন্যা।  তিনিও কবিতা লিখতেন। তবে প্রতিকূল পরিবেশের কারণে বহিরাঙ্গনে তার  প্রতিভার প্রকাশ ঘটতে পারেনি। সবার অলক্ষ্যে তার জীবনাবসান ঘটে।  হোসেন মাহমুদের স্ত্রী মমতাজ মহল মুক্তাও একজন প্রতিভাময়ী মহিলা। তিনি একাধারে কবি, লেখক, গল্পকার ও গীতিকার। তার লেখা গান টিভি-বেতারে প্রচারিত হয়।
মাতামহ সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর দেখা হোসেন মাহমুদ না পেলেও তার সাহিত্যকর্মের সাথে পরিচিত হয়েছিলেন সেই ছোটবেলাতেই। শৈশবেই তিনি মাতামহ সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর বিখ্যাত কাব্য ‘অনল প্রবাহ’ ও উপন্যাস ‘রায়নন্দিনী’ পাঠ করেছিলেন। ১৯৭০-এর দিকে কবিতা রচনার প্রয়াসের মধ্য দিয়ে তার লেখালেখির সূচনা। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম কবিতা ‘জাগরণ’ প্রকাশিত হয় মাসিক ‘মদীনা’র জুন ১৯৭৫ সংখ্যায়। তার প্রথম গল্প ‘নদীর টানে’ ১৯৭৭ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তার প্রথম প্রবন্ধ ‘বিশ্বকবি : বিশ্বের পটভূমিকায়’ রাজশাহী থেকে  প্রকাশিত দৈনিক বার্তার ১৯৭৯ সালের ১৩ মে সংখ্যায় প্রকাশ লাভ করে। ১৯৭৮ সালে দৈনিক বাংলায় তার ছোটগল্প ‘অসময়ের ঝড়’ প্রকাশিত হওয়া তার  লেখক জীবনের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। দৈনিক আজাদ, দৈনিক বার্তা, দৈনিক বাংলা, দৈনিক দেশ, দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক নয়াদিগন্ত, দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক যায় যায় দিন, সাপ্তাহিক সন্ধানী, সাপ্তাহিক রোববার, মাসিক সাম্প্রতিক, মাসিক আবাহন, মাসিক ঢাকা ডাইজেস্ট, মাসিক ঐতিহ্য, মাসিক অগ্রপথিক, মাসিক অন্য এক দিগন্ত প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় তার বহু গল্প-প্রবন্ধ, অনুবাদ গল্প-ফিচার প্রকাশিত হয়। ‘আফগানিস্তান আমার ভালোবাসা’, ‘মা’, ‘রাসূল (সা.)-র শানে নিবেদিত কবিতা’,  ‘কিশোরকণ্ঠ গল্প সংকলন’, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান’, ‘বাংলা সাহিত্যে মুসলিম প্রভাব’, ‘ছোটদের জিয়াউর রহমান’, অ্যাডর্ন পাবলিশার্সে ‘ মহান একুশে ’, ‘ইসলামী বিশ^কোষ’ প্রভৃতি সংকলনে তার লেখা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন