সিলেট অফিস ঃ মাঠ পর্যায়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা ভ্যাট আহরণের নামে অহেতুক হয়রানি করেন বলে অভিযোগ করেছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পরিদর্শনের নামে কর কর্মকর্তারা যখন-তখন যে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হানা দিচ্ছেন। নিরীক্ষার নামে জোর করে জব্দ করছেন নথিপত্র। এসব কর্মকর্তার জোর-জবরদস্তি থেকে ব্যক্তি করদাতাও রেহাই পাচ্ছেন না। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে উল্টো সিলেটের ব্যবসায়ীদের চোর বলে গালিও দিচ্ছেন কর কর্মকর্তারা। এমন অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি’র পরিচালকরা সিলেটের ব্যবসায়ীদের সমস্যা নিয়ে একটি যৌথ সভার আয়োজন করেন। ওই সভা চলাকালে এক ব্যবসায়ী নেতার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করেন সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনের যুগ্ম কমিশনার নেয়ামুল ইসলাম। ফোন দিয়েই তিনি জানতে চান আপনি কি মিটিংয়ে। তখন ওই পরিচালক হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। এ সময় নেয়ামূল ইসলাম নামের ওই কর কর্মকর্তা সিলেটের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘মিটিং ছাড়েন, ওই প্রতিষ্ঠান চোর, তাদের সঙ্গ ছাড়েন।’ ওই কর কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠান তো সিলেটের নয়, তারপরও কেন তার প্রতি আপনারা দরদ দেখান।’ কর কর্মকর্তার এমন বক্তব্যের পর সিলেটের ব্যসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশে এখন গণতান্ত্রিক সরকার। কিন্তু রাজস্ব কর্মকর্তারা ওয়ান-ইলেভেনের মতো আচরণ করছেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এদের (রাজস্ব কর্মকর্তাদের) ব্যবহার চোর-পুলিশের মতো। এসব কর্মকর্তার জব্দ করা নথিপত্র উদ্ধার করতে গিয়ে করদাতাদের রাজস্ব অফিসে ধরনা দিতে হচ্ছে।’ সর্বশেষ গত বুধবার সকালে সিলেটের মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেলে অভিযান চালায় সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনের কর্মকর্তারা। সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনের যুগ্ম কমিশনার নেয়ামুল ইসলামের নেতৃত্বে চলা ওই অভিযানের সময় ওই হোটেল থেকে সকল ধরনের নথিপত্র ও একটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনের যুগ্ম কমিশনার নেয়ামুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তের স্বাথে সিলেট মেট্রো ইন্টারন্যাল হোটেলের নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাবে না। বিষয়টি বুঝতে হলে অফিসে আসবেন।’ ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে নেয়ামুল ইসলাম বলেন, ‘এটা মিথ্যা।’ তিনি নিজেকে সৎ অফিসার দাবি করে বলেন, ‘ভালো করতে গেলেই কিছুটা ঝামেলা হয়।’ এদিকে সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনের কর্মকর্তাদের এমন আচরণে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপরই বারবার এনবিআর এ ধরনের খড়গ চাপিয়ে দিচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে কর দিলেই বিপদ। আর নিবন্ধনের বাইরে থাকলেই তারা নিরাপদ। সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি’র প্রথম সিনিয়র সহ-সভাপতি হাসিন আহমদ বলেন, নিয়মিত যারা কর আদায় করে তাদের উপর প্রতি বছর দ্বিগুণ হারে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়াও নতুন কোন করদাতা সংগ্রহ হচ্ছে না। এতে অনেক ব্যবসায়ী কর ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমারা চাই সবার কাছ থেকে কর আদায় করা হউক। কিন্তু কর কর্মকর্তারা আমাদের কাছে আসেনা। আসলে কর আদায়ে আমরাও সহযোগিতা করব।’
তবে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি মো. সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করে রাজি হননি। তবে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি’র পরিচালক মো. খন্দখার শিপার আহমদ কর কর্মকর্তাদের হয়রানির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কর কর্মকর্তারা ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে যোগাযোগ না করেই কর আদায়ের চেষ্টা করে। এতে ব্যবসায়ীদের বিপাকে পড়তে হয়।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন