শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভয়ঙ্কর অপরাধে তরুণরা

চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর ৪ খুনের রহস্য উদঘাটন

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

প্রকাশ্যে রাস্তায় স্কুল ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা। স্ত্রীর দিকে কথিত কুনজর দেওয়ার অজুহাতে বন্ধুকে ডেকে নিয়ে গলা কেটে খুন। দ্বিতীয় শ্রেণির শিশুকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা। তুচ্ছ ঘটনায় রুম মেটকে খুন। মাত্র ৭২ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম নগরীতে চাঞ্চল্যকর এই চারটি হত্যাকাÐে জড়িতরা কিশোর ও উঠতি যুবক।
কিশোর যুবকদের এমন ভয়ঙ্কর অপরাধী হয়ে উঠার ঘটনায় উদ্বিগ্ন খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাও। আলোচিত চারটি মামলার রহস্য দ্রæত সময়ে উদঘাটন করেছে পুলিশ। এসব মামলায় যারা গ্রেফতার হয়েছে তারাও অবলীলায় স্বীকার করছে খুনের দায়। জীবনের প্রথম অপরাধ শুরু খুন দিয়ে। অথচ তাদের মধ্যে কোন অনুশোচনা নেই। স্বাভাবিকভাবেই তাদের কয়েকজন খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে নির্মম খুনের বর্ণনাও দিয়েছে।

পুলিশ বলছে দিনে দিনে বেপরোয়া হচ্ছে কিশোর অপরাধী চক্র। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খুনোখুনিতে লিপ্ত হচ্ছে কিশোরের দল। গত কয়েক বছরে নগরীতে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে যাতে কিশোররা জড়িত। কিশোর গ্যাঙয়ের তৎপরতারোধে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তাদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং বড়ভাইদের প্রশ্রয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাঙয়ের সদস্যরা। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে বিপদগামী হচ্ছে উঠতি তরুণ ও কিশোরেরা।

গত সোমাবার দুপুরে নগরীর ওমর গণি এম ই এস কলেজের সামনে স্কুল ছাত্র জাকির হোসেন সানিকে (১৮) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পর দিন সানির বোন মাহমুদা আক্তার বাদী হয়ে খুলশী থানায় হত্যা মামলা করেন। তাদের মধ্যে সৌরভ ও সাফাত কায়সার ও ফয়সালসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার ফয়সাল আদালতে জবানবন্দি দেয়। তাতে সানিকে খুনে সে নিজেও জড়িত বলে স্বীকার করে। সে জানায়, সানিকে প্রথম ছুরিকাঘাত করে আয়াতুল হক। তার ছুরিকাঘাতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সানি।

খুলশি থানার ওসি প্রণব চৌধুরী বলেন, কিশোর প্রেমের দ্ব›েদ্ব এ হত্যাকাÐ। সানিকে খুনে আয়াতের সঙ্গি হয়েছিলো যারা তারাও তার সমবয়সী। কিশোর গ্রæপের বিরোধ মেটাতে তারা আগের দিন বৈঠক করে। তবে তাতে কোন সমাধান না হওয়ায় সানিকে পরদিন হত্যা করা হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে। সানি তার বড় বোন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দীনের স্ত্রী। তিনি থাকেন নগরীর খুলশী আবাসিক এলাকার এক নম্বর সড়কে। বোনের বাসায় থেকে পড়া লেখা করছিলো সানি। তবে কিশোর গ্রæপে জড়িয়ে পড়ায় তাকে গেল বছর ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রামে বেড়াতে এসেই দ্ব›েদ্ব খুন হয় সানি।

নগরী ডিসি রোডের কলেজ ছাত্র শাখাওয়াত হোসেন ফাহিম খুনের ঘটনায় তার বন্ধু মো. আরিফকে (২২) পাকড়াও করে পুলিশ। আরিফ খুনের দায় স্বীকার করে। তার দাবি তার স্ত্রীকে নিয়ে বাজে কথা বলতো ফাহিম। আর এতে ক্ষুদ্ধ হয়েই ফাহিমকে গলা কেটে খুন করে সে। খুনের দিন বন্ধুকে ফোনে ডেকে আনে আরিফ। গলা কেটে হত্যার পর লাশ পরিত্যক্ত ট্যাঙ্কে ফেলে দেওয়া হয়। চকবাজার থানার ওসি নিজাম উদ্দিন জানান, ঠাÐা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে ফাহিমকে খুন করে আরিফ। খুনের পর সে ভোলায় খালার বাসায় পালিয়ে যায়। গ্রেফতারের পর অবলীলায় খুনের দায় স্বীকার করে। আরিফ এবং ফাহিম দুজনেই ইয়াবা সেবন করতো। ফাহিম নগরীর দেওয়ান হাট সিটি কর্পোরেশন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। একসময় ফাহিমের সাথে পড়তো আরিফ।

নগরীর বন্দর থানার ব্যাংক কলোনী এলাকায় দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিশুকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে এক কিশোর। নবম শ্রেণির ছাত্র রমজান আলী ছোটন আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে। বন্দর থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্ত্তী জানান, ছোটন কিশোরী নিপুর প্রতিবেশী। নিপুর বাবা-মা বাসায় না থাকার সুযোগে ওই কিশোর তাকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা বাবা-মাকে জানিয়ে দেয়ার কথা বলতেই তাকে গলা টিপে হত্যা করে ছোটন। এরপর লাশ ওড়না পেচিয়ে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্দেহজনকভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সে অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু স্বীকার করে। ইতোমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়ে দায় স্বীকার করেছে সে। সম্পূর্ণ ঠাÐা মাথায় ধর্ষণের পর খুন ও লাশ ঝুলিয়ে রেখে নিজের বাসাতেই ছিল সে। গ্রেফতারের পর তার চোখেমুখে ভীতির কোন ছাপ দেখা যায়নি বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

গত সোমবার রুমমেট সুজন মুন্সিকে (২০) হত্যার দায় স্বীকার করে মো. সুমন শেখ (২৩)। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তারা। নগরীর বন্দর টিলার বাহাদুর কলোনীর একই বাসায় থাকতেন। রান্না নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে সুজন মুন্সির মাথায় আঘাত করে সুমন শেখ। তাতেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ইপিজেড থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। জবানবন্দিতে সুমন শেখ জানিয়েছে- বাসায় রান্না করা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সুজন মুন্সিকে গøাস দিয়ে আঘাত করলে সে মারা যায়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন