সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নগর পরিবহনে অরাজকতা

১১১ দফা সুপারিশে চাঁদাবাজি বন্ধের কথা নেই

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

রাজধানীতে চলাচলকারী এ বাসগুলোর বাহ্যিক চেহারাই বলে দেয় এগুলো ফিটনেস সার্টিফিকেটের যোগ্য নয়। এ দায় বিআরটিএ- নাকি পুলিশের? শাহবাগ এলাকা থেকে তোলা ছবি -মতিউর সেন্টু


ফিটনেসবিহীন গাড়ির বেপরোয়া গতি দুর্ঘটনায় ঘটায় : অধ্যাপক ড. মাহবুল আলম

এখন ভয়াবহ আতঙ্ক ও নৈরাজ্যের নাম রাজধানী ঢাকার সড়ক। পরিবহন সেক্টরে বিশৃঙ্খলার কারণে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঝড়ে পড়ছে প্রাণ। সড়কের নৈরাজ্য রোধে এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে কোন আইন বা সুপারিশই যেন কাজে আসছে না। শত উদ্যোগেও সড়কে ফিটনেসবিহীন লক্কর-ঝক্কর বাস, বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালক এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সারা দেশে সাড়ে ৪ লাখের বেশি ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অন্তত ৯ লাখ লাইসেন্সবিহীন চালক রয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বাংলামোটরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের সহকারী ব্যবস্থাপক কৃষ্ণা রানী রায়ের ওপর ট্রাস্ট পরিবহনের একটি বাস উঠে যায়। এতে ওই নারীর একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনা রোধ ও সড়কের নৈরাজ্য দূর করার পাশাপাশি শৃঙ্খলা ফেরাতে সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট সাবেক নৌ পরিবহণ মন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ১১১ দফা সুপারিশসহ একটি খসড়া উপাস্থাপন করা হয়। ওই খসড়া প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর তত্ত¡াবধানে ‘সড়ক নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিলের আগেই এ সুপারিশমালা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার কথা। মজার বিষয় হলো ১১১ সুপারিশে চাঁদাবাজী বন্ধের কোনো সুপারিশ নেই।

এর আগে গত বছর রাজধানীতে দুই শিক্ষার্থীদের মৃত্যুকে কেন্দ্র কের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছর ২৭ ফেব্রæয়ারি পরিবহন মালিক, শ্রমিক, পুলিশ, গবেষক ও বিআরটিএ’সহ বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে ২২ সদস্যের এ কমিটি করা হয়।

শাজাহান খানের তত্ত¡াবধানে গঠিত কমিটির সুপারিশমালার খসড়া প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনারোধে ও নৈরাজ্য দূরীকরণে ‘রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মনে করা হয়েছে। এছাড়া সড়কের নিরাপত্তায় জোর দেয়া, সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, প্রশিক্ষিত চালক তৈরি, চালকদের সচেতনতা বাড়ানোসহ নানা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত এসব সুপারিশের মধ্যে আশু করণীয় সুপারিশগুলো এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে, স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো ২০২১ সালের মধ্যে এবং দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশগুলো ২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা উচিৎ বলে কমিটি মত ব্যক্ত করে। এছাড়া একটি ভাগের সুপারিশগুলো চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে থাকবে বলে মত দেওয়া হয়। এত সব প্রস্তাবনা ও সুপারিশ দেওয়ার পরেও আগের মতোই নৈরাজ্যকর অবস্থায় রয়ে গেছে সড়ক।

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (এআরআই) এক গবেষণা বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বেশি দায়ী বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো। একইসাথে ত্রæটিপূর্ণ (ফিটনেসবিহীন ও লক্কর-ঝক্কর) যানবাহনকেও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ফিটনেসবিহীন ও নিবন্ধনহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকের সরকারি পরিসংখ্যান দেখলে রীতিমতো আতকে ওঠার অবস্থা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩৬৯টি। শুধু ঢাকা শহরে রয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩০৮টি। যদিও বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি। আর নিবন্ধিত গাড়ির চেয়ে চালকের সংখ্যাও কম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে ৪১ লাখ গাড়ি রয়েছে। এর বিপরীতে চালক রয়েছেন প্রায় ৩২ লাখ। এর মধ্যে পেশাদার চালক রয়েছে মাত্র ১২ লাখ। মোটরসাইকেল বা হালকা যান চালানোর চালক রয়েছেন ১১ লাখ। এছাড়া বর্তমানে ভারি যানবাহনের মধ্যে বাস, কার্গো ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান, বিশেষ কাজে ব্যবহৃত গাড়ি, ট্যাংকার ও ট্রাক রয়েছে আড়াই লাখের বেশি। এসবের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার। এ হিসাবে অন্তত লাইসেন্সবিহীন ৯ লাখ চালক দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি চালাচ্ছেন। দুর্ঘটনা ও নৈরাজ্যের প্রধান কারণ হিসেবে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নিবন্ধনহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকদের দায়ী করা হলেও এতদিনেও এসব অসংগতি দূর করা সম্ভব হয়নি।

যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্যের জন্য অন্যান্য কারণের সাথে মালিক ও শ্রমিকদের বেপরোয়া আচরণকে দায়ী করেছেন। তাদের ভাষ্য, বেপরোয়া গতির কারণে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় অধিকাংশ অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। এছাড়া ক্ষমতাসীন ও প্রভাদের নেতৃত্বে পরিবহন দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিটির প্রতিবেদনেও বেপরোয়া গতি ও অদক্ষ চালক এবং ত্রæটিপূর্ণ যানবাহনকে দুর্ঘটনার জন্য অন্যতম দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মালিক-শ্রমিকদের মনোভাবের কারণে পরিবহন সেক্টর অরাজকতার মধ্যে রয়েছে। কেউ কাউকে তোয়াক্কা করে না। সবাই নিজের মতো নিজে চলতে চায়। তারা আরও বলেন, পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য প্রতিরোধেÑ রাস্তায় গাড়ি না ধরে টার্মিনালে নজরদারি বাড়াতে হবে। এতে টার্মিনালে আনফিট গাড়ি পাওয়া গেলে সেগুলো আগে থেকেই রাস্তায় নামতে বাধা দেওয়া যাবে। একইভাবে লাইসেন্স ছাড়া কোন চালক গাড়ি নিয়ে নামলে তাদেরও প্রতিহত করা সম্ভব হবে।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরৈ বিআরটিএ কর্তৃক লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া বন্ধ রয়েছে। এরপরেও পুরনো ফিটনেস ছাড়া বাসগুলো রাস্তায় চলাচল বন্ধ করা যায়নি।

এ বিষয়ে অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. মাহবুল আলম তালুকদার বলেন, দুর্ঘটনা সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান ও মূল কারণ হচ্ছে বেপরোয়া মনোভাব ও অতিরিক্ত গতি। ধারণা করা হয়, এ দুটি কারণে ৮৫-৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়ির জন্যও দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঈদের পরপরই ফাঁকা রাস্তায় বেশি গতিতে গাড়ি চলার কারণে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Eman Ali ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
ট্রাফিক আইন না মানলে বড় ধরনে জরিমানার সিস্টেম করেন এক্সডেন্ট অনেক কমে যাবে
Total Reply(0)
Md Abul Khair ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
নিন্দনীয় কাজ, কর্তৃপক্ষ নিরবতা পালন করছে ।
Total Reply(0)
Kazi Abuhanif ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
পরিবহন শ্রমিকদেন অতি বাড়াবাড়ি কঠোর ভাবে দমন করা হোক
Total Reply(0)
Mohammad Reaz Uddin ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
এটা হল, দেশের শাসন ব্যবস্থা
Total Reply(0)
Salim Ahmed ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
ডিজীটাল বাংলাদেশ।পৃথিবির মাজে একমাএ দেশ বাংলাদেশ।আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি ......
Total Reply(0)
Shakil Hasan ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
লোকাল বাসে ১২ বা ১৫ টাকার ভাড়া এখন ২০ টাকা নেয়!!!আর সিটিং সার্ভিসের কথা কি বলব ; ওরাতো অলওয়েজ চিটিং...!!!
Total Reply(0)
Abdul Motin Jakir ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
সরকারের জনগণের নাগরিক অধিকার দেখার কোন প্রয়োজন নাই, অবৈধ খমতা টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন পুলিশ শ্রমিক সরকারি কর্ম চারি দের, জনগণের কোন নাগরিক অধিকার বলেও কিছু নাই?
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
দেশটা বাজিকরের হাতে পরে গেছে। কিচ্ছু করার নাই মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন