সাগরপাড়ের সিগ্ধতা নিয়েই শুরু হয়েছিল দিনটা। ঝকঝকে আকাশের ফাঁকে ফাঁকে টুকরো টুকরো নীল মেঘের ভেলায় নির্বিঘ্নেই কাটতে থাকে সময়। পেসারহীন বাংলাদেশের নিখাঁত অস্ত্র স্পিনেই কাঁবু হন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার। সাফল্যও ধরা দেয় রেকর্ডম্যান তাইজুল ইসলামের হাত ধরে। ব্যাস, সাগরিকায় ঐটুকুই সান্ত¡না। সময় গড়িয়ে সূর্যের তেজ যত বাড়তে থাকে তেজস্বীর ন্যায় আলো ছড়াতে থাকেন লড়াকু আফগান ব্যাটসম্যানরা। অস্বস্তির কন্টক কাঁটা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরতে থাকে বাংলাদেশকে। টস করেই কনিষ্ঠতম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে রেকর্ড গড়া রশিদ খানকে ৯৬ ওভারের দিন শেষে ঝলমলে এক স্মৃতি উপহার দেন রহমত শাহ। ইতিহাসে নাম লেখান দেশটির হয়ে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হয়ে। আর তাতে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনেই বাংলাদেশের কাঁধে ৫ উইকেটে ২৭১ রানের বোঝা। আর সাকিব আল হাসানের দলের জন্য রেখে যান আরো বড় হতাশা, ৮৮ রানে অপরাজিত থাকা অভিজ্ঞ আসগর আফগান!
গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরুর দুই ঘণ্টায় টার্ন আর বাউন্সে আফগানিস্তানকে অস্থির করে ফেলেছিলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। কিন্তু পরের দুই সেশনে উল্টো তাদেরই অস্থির বানিয়ে ছেড়েছেন রহমত আর আসগর। দারুণ ব্যাটিংয়ে প্রথম দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে সফরকারীরা। দেশের ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে রহমত শাহ করেন ১০২, আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আসগরও আছেন সে পথে। ৩৫ রানে অপরাজিত সঙ্গী আসার জাজাইকে নিয়ে আজ দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন তিনি। টার্নে ভরা উইকেট হওয়ায় প্রথম দিন শেষে এত রান হয়ে যাওয়ায় বেশ শক্ত অবস্থানে চলে গেছে আফগানরা।
পেসার ছাড়া বাংলাদেশের একাদশ নামানোয় আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল উইকেটের ধরনেই। প্রথম সেশনে বাস্তবেও দেখা মিলল তা। বাংলাদেশের স্পিনারদের ঘূর্ণিতে শুরুতেই কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল আফগানিস্তান। অথচ দিনের বাকি দুই সেশন দেখে কে মনে রাখবে প্রথম দুই ঘণ্টার কথা! কৃতিত্ব দিতে হবে সফরকারীদেরই। উইকেটের বাও বুঝে নিয়ে ব্যাট চালিয়ে যায় তারা। তাইজুল, সাকিবদের হতদম্য করে দিয়ে শুধু টিকেই থাকেনি, সচল রেখেছে রানের চাকাও।
ইনিংসের ত্রয়োদশ ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন তাইজুল। দুই আফগান ওপেনারের অতি সাবধানী শুরুর পর অভিজ্ঞ এই স্পিনার হানেন আঘাত। তার মিডল স্টাম্প বরাবর পড়া বল টার্ন করে খানিকটা বেরিয়ে গেলে তাতে পরাস্ত হয়ে স্ট্যাম্প খোয়ান ইসহানুল্লাহ জানাত। রানের চাকায় লাগাম পড়ায় প্রথম ২০ ওভারে অতি রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে মাত্র ৩০ রান তুলেছিল আফগানিস্তান। সেই জড়তা থেকে বেরুতে আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান অ্যাপ্রোচ বদলে হয়ে যান আগ্রাসী। কিন্তু শট নির্বাচনে ভুল করে তাইজুলকেই মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরত যান তিনি।
তিনে নামা রহমত শাহ শুরু থেকেই ছিলেন ইতিবাচক। প্রতিটি স্কোরিং শটের সুযোগ কাজে লাগানোর তাগিদ নিয়ে নেমেছিলেন। হাসমুতউল্লাহ শহিদীর সঙ্গে জুটি জমে উঠতেই পারত। এই সময়ে দুই অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ আর নাঈম হাসানও ছিলেন বেশ মলিন। সাকিব তাই অনিয়মিত মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে আসেন আক্রমণে। তাতেই হয় কাজ। মাহমুদউল্লাহর বলে হাসমতউল্লাহ স্লিপে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিলে প্রথম সেশনটা বাংলাদেশেরই হয়ে যায়।
আসগরকে নিয়ে দ্বিতীয় সেশনে নেমে সেই হিসেব পুরো ঘুরিয়ে দেন রহমত। বাংলাদেশের স্পিনারদের ধারহীন করে দিয়ে এই জুটি বাড়াতে থাকে রান। তাইজুল শুরু থেকেই ছিলেন লাইন-লেন্থে নিখুঁত। কিন্তু সাকিব রাখতে পারেননি তাল। বেশ কিছু আলগা বল বেরিয়ে যায় তার হাত থেকে। আলগা বল দেন নাঈমও। মিরাজ অতটা খরুচে না থাকলেও ব্যাটসম্যানদের সমস্যা ফেলবার মতো বল করতে পারেননি। সুযোগে থিতু হতে সময় লাগেনি আসগরের।
দ্বিতীয় সেশনের পুরোটাই ব্যাট করে এই সময়ে ১১৪ রান তুলে নেন তারা। চা বিরতির পর এসে রহমত আফগান ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরিও করে ফেলেন অনায়াসে। কিন্তু পরের বলেই হয়েছেন কুপোকাত। নাঈমের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে দেন ক্যাচ। ঐ ওভারেই নাঈম পান আরেক উইকেট। প্রথম দুই সেশনের বিবর্ণ হাল কাটিয়ে স্কিড করা বলে বোল্ড করে দেন মোহাম্মদ নবীকে। কিন্তু এরপর ভেঙে না পড়ে ফের ঘুরে দাঁড়ায় লড়াকু আফগানিস্তান। ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসার জাজাইকে নিয়ে ৭৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিন পার করেন অভিজ্ঞ আসগর। এই জুটিতে শেষ সেশনও নিজেদের করে নেয় আফগানিস্তান। আর ৮ বোলারের হাত পাকা করা পথে বিছিয়ে যায় একরাশ অস্বস্তির কাঁটা
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান, একমাত্র টেস্ট
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম
টস : আফগানিস্তান (ব্যাটিং)
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস
রান বল ৪ ৬
ইব্রাহিম ক মাহমুদউল্লাহ ব তাইজুল ২১ ৬৯ ৩ ০
ইহসানউল্লাহ বোল্ড তাইজুল ৯ ৩৬ ০ ০
রহমত শাহ ক সৌম্য ব নাঈম ১০২ ১৮৭ ১০ ২
হাশমতউল্লাহ ক সৌম্য ব মাহমুদউল্লাহ ১৪ ৩২ ২ ০
আসগর আফগান ব্যাটিং ৮৮ ১৬০ ৩ ২
মোহাম্মদ নবী বোল্ড নাঈম ০ ৩ ০ ০
আফসার জাজাই ব্যাটিং ৩৫ ৯০ ৪ ১
অতিরিক্ত (লেবা ১, নো ১) ২
মোট (৫ উইকেট, ৯৬ ওভারে) ২৭১
উইকেট পতন : ১-১৯ (ইহসানউল্লাহ), ২-৪৮ (ইব্রাহিম), ৩-৭৭ (হাশমতউল্লাহ), ৪-১৯৭ (রহমত শাহ), ৫-১৯৭ (মোহাম্মদ নবী)।
বোলিং : তাইজুল ৩১-৪-৭৩-২, সাকিব ১৭-১-৫০-০, মিরাজ ২২-৪-৫৯-০, নাঈম ১৩-০-৪৩-২, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-৯-১, সৌম্য ৪-০-২৬-০, মুমিনুল ৪-০-৯-০, মোসাদ্দেক ১-০-১-০।
* প্রথম দিন শেষে
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন