শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

তিস্তা চরে কৃষকের হাসি

প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনামুল হক মাজেদী, গঙ্গাচড়া (রংপুর) থেকে : রংপুর জেলার গঙ্গাচড়ায় উপজেলা তিস্তারচরে যেদিকে চোখ যায় কেবল দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ আর সবুজ। মাঠের পর মাঠ আর ফসল। এক সময়ে ধু ধু বালুচর আজ অর্থকরী ফসলের সম্ভার। এ দৃশ্য গঙ্গাচড়া উপজেলার অনাবাদী তিস্তার চরে। এই চরে রবিশস্য চাষ করে বিপুল সাফল্য পেয়েছেন এখানকার চাষিরা। অর্থকরী এসব ফসলের আবাদ করে সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে চরবাসীর। তবে সহজ শর্তে ঋণ আর কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেয়ে উপজেলার ১৮টি চরে ফসল-বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে মনে করেন কৃষকরা।
প্রায় দুই যুগ আগে গঙ্গাচড়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বেশিভাগ গ্রাম তিস্তার করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যায়। এতে ঘর-বাড়ি, আবাদি জমি, ভিটামাটি হারিয়ে পথে বসে হাজারো কৃষক। কাজ না থাকায় অভাব অনটনে জর্জরিত হয়ে পড়ে মানুষ। একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটত তাদের। পেটের তাগিদে অনেক পরিবার বিভিন্ন শহরে গিয়ে মজুরির কাজ করে। কয়েক বছর পর তিস্তা নদীর বুকজুড়ে বিশাল চর জেগে উঠে। প্রথমদিকে এসব জমি চাষিদের কোনো কাজেই আসত না। বালুচরে কোনো ফসল হতো না। তবে তিন-চার বছরে পলি জমে উর্বর হয়ে ওঠা এসব জমিতে সোনার ফসল ফলিয়েছে কৃষকরা। রবি মৌসুমে গম, ভুট্টা, সরিষা, আলু, চিনা বাদাম, শাকসবজিসহ নানান ফসলে ভরে উঠেছে চরাঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর জমি।
এতে দারিদ্র-পীড়িত কৃষকের জীবনে সুদিন ফিরেছে। উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের চর নোহালী গ্রামের সাইদুল ইসলাম জানান, তিস্তার ভাঙনে এক সময় ২০ বিঘা জমিসহ সহায়সম্বল সব হারিয়েছিল।
তবে দিন এখন বদলে গেছে, নদী আবার আমার অনেক জমি ফিরিয়ে দিয়েছে। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে আলু, গম ও ভুট্টা চাষ করেছি। ভাল ফলনও পেয়েছি। ল²ীটারী ইউনিয়নের আব্দুল জব্বার বলেন, একদিন সব হারালেও আমরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। নদী ভাঙনে ১৫ বিঘা জমি হারিয়েছিলাম। এর মধ্যে ১০ বিঘা জমি আবার জেগে উঠেছে। পলি পড়ে দিন দিন জমিগুলো উর্বর হয়ে উঠছে। এসব জমিতে ভালো ফসল ফলিয়েছি। তবে কৃষকদের অভিযোগ যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক। কৃষকরা বলেন, স্থানীয় কৃষি বিভাগ তাদের সহায়তা দিলেও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তেমন খোঁজ-খবর রাখে না। অনেক সময় পোকার আক্রমণে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারেও তাদের তেমন অভিজ্ঞতা নেই। কৃষি বিভাগ সহযোগিতার হাত বাড়ালে কৃষকদের প্রচেষ্টা আরো একধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন কৃষকরা।
তবে কৃষি বিভাগ তাদের সাধ্যমতো কৃষকদের সহায়তা দিয়ে আসছে বলে দাবি করছেন কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার চরের অনেক জমি আবাদের বাইরে রয়েছে। এসব জমি চাষের আওতায় আনা হলে চরের হতদরিদ্র কৃষকের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা নদী ভাঙন পীড়িত নিরন্নকৃষকদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন