বর্তমান শতাব্দীটা মানসিক চাপ আর ঝঞ্ঝায় সঙ্কুল। এই মানসিক চাপকে কব্জা করার একমাত্র উপায় মনকে নিয়ন্ত্রণ করা। আর এ মনকে সঠিকভাবে চালিত করতে না-জানলে সার্থক জীবনযাপন সম্ভব নয়
মানসিক চাপ, মানসিক- পীড়ন, যে মনোবিকার বা অস্থিরতার সৃষ্টি করে তা থেকেই উদ্ভূত হয় আমাদের বড় বড় স্বাস্থ্য-বিপর্যয়গুলো। আমাদের মনের ভিতরে বাসা-বাঁধা শতেক পরস্পর বিরোধী আশা-আকাঙ্খাগুলোকে- কার আগে পূর্ণ হতে পারে যেন তারই প্রতিযোগিতায় শামিল হয়। লড়াই বাঁধে দেহজ কামনার সাথে মনোলোকে থাকা অভীপ্সা, বাসনার। কিন্তু, একটা প্রচলিত কথা আছে- ‘সাধ আছে সাধ্য নেই’। ‘মন উন্মুখ কিন্তু দেহ অপারঙ্গম’। ফলত জন্ম নেয় তীব্র মানসিক চাপ, তুমুল অস্থিরতা।
মাত্রাতিরিক্ত উচ্চভিলাষ, পান্ডিত্যের অসুস্থ লড়াই, অত্যধিক পরিশ্রম বহির্মুখীনতা ও অন্তর্মুখীনতা উভয় দিকেই অন্তরের অভিলাষ, পরস্পরের সাথে দুঃখজনক দ্ব›দ্ব, প্রতিযোগিতা এ সবকিছুই মানসিক শান্তির পথে প্রবল অন্তরায়। যদি আমরা আমাদের ভিতরের আস্থাকে, বিশ্বাসকে ফিরে পেতে চাই, তবে সার্থক জীবনধারণ বলতে কী বোঝায় সে সম্পর্কে আমাদের সঠিক, সুসমঞ্জস ধারণার মালিক হতে হবে। অতীতটা কী সুন্দর ছিল তা ভেবে হায় হায় না-করে, ভবিষ্যতে না জানি কী হবে তা ভেবে উদ্বিগ্ন না-হয়ে, আমাদের উচিত বর্তমানকে সর্বৈব গুরুত্ব দেওয়া, বর্তমানের হাত ধরে চলা। ইচ্ছাশক্তিকে বাড়িয়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর এজন্য আমাদের পরিহার করতে হবে অনর্থক বাক্যব্যয়, উদ্দেশ্যবিহীন কাজ-কর্ম, তুচ্ছ, বাক-বিতÐা, অপরের দোষ ধরার বাতিক, পরনিন্দা-পরচর্চা আর বিশ্রী চিন্তা-ভাবনাগুলো। পরিহার করতে হবে সেই সমস্ত বিক্ষেপগুলো যা আমাদের সঞ্জীবনী মানসিক শক্তির মূলে কুঠারাঘাত হানে। জানবেন, সু-চিন্তা যেমন পুরস্কারের বরমাল্য বয়ে আনে, তেমনি কু-চিন্তা আনে শান্তির কঠোর কুঠার।
আমাদের মানসিক প্রত্রিয়াগুলোকে মন যা কিছু করে সে সব কিছুরই সময়ে সময়ে পর্যালোচনা করতে শেখা উচিত । দু’দিনের পার্থিব ধনের জন্য নয়, আমরা প্রার্থনা করব মহান আল্লাহর দরবারে এক মহাসম্পদের জন্য যার নাম ইচ্ছাশক্তি। সবকিছু ত্যাগ করে যদি এই ব্যাপারেই মনোনিবেশ করি, দেখতে পাবো মানসিক চাপ অস্থিরতা কোথায় উধাও হয়ে যাচ্ছে।
চূড়ান্ত প্রতিকূলতার মুখে দাঁড়িয়ে আমরা যেন আশা না- হারাই। মনে রাখতে হবে হতাশা, বিষণœতারও একটা ভালো দিক আছে- তা আমাদের উচ্চতর পথে নিয়ে চলে। হতাশা, বিষণœতায় আমাদের যাবতীয় দোষত্রæটি, ভয়, ক্রোধ সবকিছু এসে দাঁড়ায় মনের সম্মুখভাগে। আমরা তাদের মুখোমুখি হই ও তারপর তৎপর হতে পারি তাদের নিয়স্ত্রণ করার প্রচেষ্টায়।
মেনে চলা, মানিয়ে চলা আর সেই সঙ্গে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ-এর অনুশীলনের মধ্যেই রয়েছে প্রশান্তি লাভের চাবিকাঠি। ভাবলে চলবেনা, এই দৃষ্টিভঙ্গি অসার, নিষ্ক্রিয়। এর জন্ম-গভীর ধ্যান, অন্তদৃষ্টি ও আত্মবিশ্লেষণের প্রচেষ্টার ভিতর থেকে। এই উচ্চ মনোভাব অর্জনের শ্রেষ্টপথ হল আল্লাহর উপর ভরসা, আল্লাহর কৃপার প্রতি অসীম বিশ্বাস আর সেই আল্লাহর দয়াকে আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ। আর এভাবে করতে পারলেই মানসিক চাপ কমে মানসিক শান্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে।
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন