তরুণ জনগোষ্ঠী সচরাচর কী ধরনের হতাশা ও দুর্দশার মুখোমুখি হয়? মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে তারা নিজেরা কী ভাবছে? তাদের মানসিক চাপ কাটাতে পরিবার-পরিজনের করণীয় কী? এসব জানতে এবং জানাতেই ‘তারুণ্যের দুর্দশায় কিভাবে বাড়িয়ে দেবে হাত?’ এই বিষয়ে বাংলাদেশের নয়জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাদের মতামত তুলে ধরলেন।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘পাবলিক স্পিকিং কম্পিটিশন ও সেলফ কেয়ার ওয়ার্কশপ’ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তাদের এই মতামত তুলে ধরেন। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষ্যে ‘ওদের যতেœ তুমিও শামিল’ স্লোগান নিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (ব্র্যাক আইইডি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর কারিগরি সহায়তায় ছিল বাংলাদেশ ডিবেটিং কাউন্সিল।
আয়োজকেরা জানান, সুস্থভাবে জীবনযাপনের জন্য প্রত্যেক মানুষেরই প্রয়োজন যত্ন, পরিচর্যা আর আস্থা। এই বিষয়ে তরুণদের মনের কথাগুলো, তাদের অনুভূতিগুলো জানার ও জানানোর প্রচেষ্টাই ছিল এই অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্দেশ্য। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এর মধ্যে সেরা বক্তা হিসেবে নির্বাচিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাশাদ রিয়াজ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত সামাজিক ন্যায়বিচারবিষয়ক বক্তা, সাংবাদিক এবং বর্তমানে ব্র্যাকের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কর্মসূচির পরিচালক নবনীতা চৌধুরী এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
আলোচনায় উঠে আসে তরুণদের নানা ভাবনা। তারা মনে করেন, মানসিক চাপের মূল কারণগুলো হচ্ছেÑ তাদের মতামতকে বয়োজ্যোষ্ঠদের গুরুত্ব না দেওয়া, নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা কাউকে মন খুলে বলতে না পারা, প্রত্যেকেই আলাদা, তাদের সমস্যাগুলোও আলাদা এই বিষয়টা না বুঝে অন্য কারো সঙ্গে তুলনা করা, তাদের আবেগ-স্বস্তির কাজগুলোর অযথা সমালোচনা করা, পরিবার ও সমাজ তরুণদের শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিলেও মানসিক আবেগ-অনূভূতির মূল্যায়ন না করা প্রভৃতি।
ব্র্যাকের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী তরুণদের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে বলেন, আমাদের নির্লিপ্ত থাকলে চলবে না। অন্যের হতাশা-উদ্বেগে আমাদেরও কিছু আসে যায় এই বোধটা সবার আগে তৈরি করতে হবে। আমাদের কান এতোটা সজাগ রাখতে হবে, যাতে কেউ মন খুলে তার কথা বলার সুযোগ পায়।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানসিক সমস্যাগুলোর ৫০ ভাগ ১৪ বছরের আগেই শুরু হয়ে যায়, আর ৭৫ ভাগ দেখা দেয় ২৫ বছরের আগেই। তাই অন্যদের চেয়ে তরুণদের যতœ বেশি নিতে হবে। বর্তমান বাস্তবতাও তাই বলে। তারা নিজেরাও যতœ নেবে ; পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও যতœ নেবে।
উল্লেখ্য, ব্র্যাক আইইডি ২০০৪ সাল থেকে নিজস্ব গবেষণা, কর্মসূচি ও প্রকল্প পরিচালনার অভিজ্ঞতার আলোকে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগের সমাধান ও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নেতৃত্ব প্রদান করে আসছে। পাশপাশি এটি একটি সম্ভাবনাময়, সহানুভূতিশীল ও স্বনির্ভর প্রজন্ম গড়ে তুলতে তারুণ্যের সার্বিক সুস্থতা নিয়ে কাজ করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন