রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

স্থাপত্য নির্মাণে ইসলাম ও বিজ্ঞানের নির্দেশনা

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ছয়
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নিবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দিবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। অত:পর যদি তোমরা সেখানে কাউকে না পাও তাহলে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও’ তাহলে ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য অধিক পবিত্র। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত। যে ঘরে কেউ বাস করে না, তাতে তোমাদের কোন ভোগসামগ্রী থাকলে, সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোন পাপ হবে না। আর আল্লাহ জানেন যা তোমরা প্রকাশ কর আর যা তোমরা গোপন কর। ‘‘আল-কুরআন, ২৪ : ২৭-২৯।’’ বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যদি কেউ তোমার বাড়ির অভ্যন্তরে তোমার অনুমতি বিহীন চোখ দেয়; আর তুমি তাকে পাথর নিক্ষেপ করে তার চোখ কানা করে দাও; তাহলে তোমার কোন দোষ হবে না। ‘‘ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায় : আদ-দিয়াত, পরিচ্ছেদ : মান আখাযা হাক্কাহু আও ইকতসসা দূনাস সুলতানি, প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ৬৪৯৩।’’ এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, অন্যের বাড়ির অভ্যন্তরে তার অনুমতি ছাড়া দৃষ্টি দেয়া অপরাধ। তেমনিভাবে এ হাদীস থেকে এটাও বুঝা যায়যে, বাড়ি-ঘর এমনভাবে তৈরি করা যে, বাহির থেকেই তার অভ্যন্তরের সব কিছু এমনিতেই দেখা যায়, তাও অপরাধ।
প্রশস্ত করে তৈরি করা ঃ বাড়ি ঘর নির্মাণের সময় তৃতীয় যে বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে তা হচ্ছে প্রশস্ত করে তৈরি করা। কারণ রাসূলুল্লাহ স. চাইতেন তার বাড়ি ঘর প্রশস্ত হোক। তিনি বাড়ি-ঘর প্রশস্ত হওয়াকে সৌভাগ্য বলেও মনে করতেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চারটি জিনিস সৌভাগ্যের প্রতীক, সতী-সাধ্বী স্ত্রীলোকম, প্রশস্ত বাড়ি-ঘর, সৎ প্রতিবেশী এবং ধৈর্যশীল বাহন। ‘‘ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ, অধ্যায় : আন-নিকাহ, বৈরূত : মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ১৪১৪ হি./ ১৯৯৩ খ্রি., হাদীস নং- ৪০৩২। হাদীসটি সাহীহ। দ্র. আল-আলবানী, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ, হাদীস নং- ২৮২।’’] তিনি প্রায় সময় এ দু’আটি পড়তেন, হে আল্লাহ আমার পাপ ক্ষমা করে দিন, আমার বাড়ি-ঘর প্রশস্ত করে দিন, আর আমার রিযকে বরকত দিন।
এ দু‘আ শুনে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি এ দু‘আটি কত বেশিই না করেন? তখন তিনি বললেন, কল্যাণের আর কিছু চাইতে বাকি আছে কি? ‘‘ইমাম নাসায়ী, আস-সুনান, তাহকীক : আবুল ফাতাহ আবূ গুদ্দাহ, অধ্যায় : ‘আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ, পরিচ্ছেদ : মা ইয়াকূলু ইযা তাওয়ায্যাআ, হালব : মাকতাবুল মাতবূআতিল ইসলামিয়্যাহ, ১৪০৬ হি./ ১৯৮৬ খ্রি., হাদীস নং- ৯৯০৮। মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী হাদীসটি দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। আল-আলবানী, গায়াতুল মারামি ফী তাখরীজি আহাদীছিল হালালি ওয়াল হারাম, বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৫ হি./ ১৯৮৫ খ্রি., পৃ. ৮৭, হাদীস নং- ১১২।’’
বসবাসকারীর মনস্তুষ্টি ঃ স্থাপত্য শিল্পের প্রতি ইসলাম যে সব নির্দেশনা দেয়, তার মধ্যে আর একটি হলো বসবাসকারীর মনস্তুষ্টি অর্জিত হওয়া। অর্থাৎ বাড়ি-ঘর এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে বসবাসকারী সেখানে মানসিক প্রশাস্তি লাভ করে বাস করতে পারে। সে সেখানে সামাজিক নানা বাধা অতিক্রম করে মুক্ত হয়ে তার একান্ততা (ঢ়ৎরাধপু) ও স্বাধীনতা রক্ষা করে বসবাস করতে পারে, শান্তি পায় এবং আরামে জীবন যাপন করতে পারে। আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের প্রতি তার করুণা ও দয়ার আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, আর আল্লাহ তোমাদের ঘরগুলোকে তোমাদের জন্য শান্তির আবাস বানিয়েছেন। ‘‘আল-কুরআন, ১৬ : ৮০।’’
উপর্যুক্ত আয়াতের ‘সাকান’ শব্দটি ‘সাকুনা’ থেকে এসেছে, যার অর্থ সান্ত¡না ও প্রশান্তি অর্থাৎ বাড়ি-ঘরকে আল্লাহ তা’আলা আমাদের শান্তির নীড় হিসেবে বানিয়েছেন। যাতে আমরা সেখানে শান্তিতে বসবাস করতে পারি। সুতরাং বাড়ি-ঘর এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে সেখানে শান্তির সাথে বসবাস করা যায়।
সাদাসিধে ও বিলাসিতামুক্ত ভাবে তৈরি করা ঃ বাড়ি-ঘর এমনভাবে তৈরি হতে হবে, যাতে তা সাদাসিধে ও বিলাসিতামুক্ত হয়। কারণ ইসলাম মুসলিমদেরকে সকল ক্ষেত্রে সাদাসিধে বিলাসিতাহীন জীবনযাপন করতে উৎসাহিত করে। এই সিলাসিতা মুক্ত জীবনযাপনের মধ্যে আছে বাড়ি-ঘর বিলাসিতা মুক্ত সাদাসিধেভাবে তৈরি করা।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে বনী আদম, তোমরা প্রতি সালাতে তোমাদের সুজর পরিচ্ছেদ পরিধান কর এবং খাও, পান কর কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। ‘‘আল-কুরআন, ৭ : ৩১।’’

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন