শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বিব্রত সিসিডিএম আম্পায়ার্স এসোসিয়েশন!

প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : হাতে গোনা যে ৬ জন আম্পায়ারকে নির্ধারিত ম্যাচ ফি ছাড়াও বেতনের আওতায় এনেছে বিসিবি, সেই ৬ জনের মধ্যে আছেন আম্পায়ার গাজী সোহেল, তানভীর হায়দার। বিসিবি’র এলিট প্যানেলের এই দুই আম্পায়ার ম্যাচ ফি খাত থেকে প্রতিদিন পান ৬ হাজার ৬শ’ টাকা, সঙ্গে মাসে ৩৩ হাজার টাকা সম্মানী। ম্যাচ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার দেয়া হয় এই দুই আম্পায়ারকে। অথচ, গত পরশু বিকেএসপিতে আবাহনী-প্রাইম দোলেশ্বরের ম্যাচের এতোকিছু হয়ে গেল তার বিস্তারিত নেই ম্যাচ রেফারির রিপোর্টে! সাকলায়েন সজীবের বলে রকিবুলের বিপক্ষে স্ট্যাম্পিংয়ের আপীলে আঙুল না তোলায় প্রকাশ্যে আম্পায়ার গাজী সোহেলের দিকে তেড়ে গেলেন আবাহনী অধিনায়ক তামীম, কাছে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য আম্পায়ার তানভীর হায়দারকে নিরুপায় দর্শকের ভুমিকায় থাকতে দেখা গেলো, ম্যাচ চালানো অনিরাপদ ভেবে ২ দফায় মাঠ ত্যাগ করলেন তারা। তার কিছুই নেই ম্যাচ রেফারির রিপোর্টে। তামীম এবং আবাহনী সমর্থকদের গালিবর্ষণে বেলস ফেলে দিয়ে ২ আম্পায়ার হয়ে পড়লেন ম্যাচ রেফারির ভাষায় অসুস্থ, অসুস্থতার মাত্রা এতোই বেশি যে, আজ রিজার্ভ ডে’তে পর্যন্ত ম্যাচ পরিচালনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে একদিন আগেই সেই অপরাগতার কথা ম্যাচ রেফারিকে দিলেন জানিয়ে। তাদের সেই কথাই গত পরশু মিডিয়াকে এবং সিসিডিএমকে জানিয়েছেন ম্যাচ রেফারি মন্টু দত্ত।
গত পরশু ম্যাচে এতো কিছু ঘটেছে, সেই রিপোর্ট নাকি গতকাল পর্যন্ত পায়নি সিসিডিএম এমনকি আম্পায়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। রিপোর্ট না পাঠিয়ে উল্টো নাকি ম্যাচ রেফারি মন্টু দত্ত সিসিডিএমকে দিয়েছেন চিঠি। যে চিঠিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতিতে করণীয় কি, সেই নির্দেশনা নাকি জানতে চেয়েছেন ম্যাচ রেফারি সিসিডিএম’র কাছে। প্রিমিয়ার ডিভিশনের কো-অর্ডিনেটর আমিন খান সে তথ্যই দিয়েছেনÑ ‘চিঠিয়ে উনি লিখেছেন, দুই আম্পায়ার অসুস্থ। ম্যাচ পরিচালনা করার মত অবস্থায় ছিলেন না সেদিন। আজ রিজার্ভ ডে’তে (গতকাল) তারা ম্যাচ চালাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে ম্যাচ রেফারি সন্দেহ পোষণ করেছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এর আগে তিনি কখনো পড়েননি বলে উল্লেখ করেছেন। চিঠিতে কোথাও গÐগোল, কিংবা তামীমের অসদচারণ নিয়ে কিছুই লেখেননি তিনি। যেহেতু আম্পায়ার এবং ম্যাচ রেফারি বরাদ্দ দেয়ার এখতিয়ার সিসিডিএম’র নেই, তাই ওনার চিঠিটি বিসিবিকে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন এই ম্যাচটির ভাগ্য বিসিবি’র ডিসিপ্লিনারি কমিটির হাতে।’
পÐ হওয়া ম্যাচের রিপোর্ট কেন পাঠাননি ম্যাচ রেফারি, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রিমিয়ার ডিভিশনের কো-অর্ডিনেটর এবং আম্পায়ার্স অ্যাসোসিশন সম্পাদক। প্রিমিয়ার ডিভিশনের কো-অর্ডিনেটর আমিন খানের মতেÑ ‘মাঠে যা যা ঘটেছে, তা লিখতে পারতো উনি।’ আম্পায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সায়লাব হোসেন টুটুল ও ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেনÑ ‘আমরা একটা ফরমেট করে দিয়েছি। সে ফরমেটে দর্শক, পরিবেশ, কিউরেটর, মাঠ নিয়ে পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট ম্যাচ রেফারির লেখা বাধ্যতামূলক। তা ছাড়া ম্যাচ রেফারির ভয় পাবার কিইবা আছে। আজ (গতকাল) পত্র-পত্রিকায় যে সব খবর ছাপা হয়েছে, সেই সব পেপার ক্লিপিংস যুক্ত করেও তো তিনি একটা রিপোর্ট পাঠাতে পারতেন।’
আবাহনী-প্রাইম দোলেশ্বরের ম্যাচে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর বিস্তারিত ম্যাচ রেফারি মন্টু দত্ত না লেখায় তাকে নয়, দুষছেন ২ আম্পায়ারকেÑ ‘প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে আম্পায়ারিং নিয়ে আমি নিজেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি। সুপার লীগে এলিট প্যানেল আম্পায়ার দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করা হবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েও তো তার সুফল পেলাম না। গাজী সোহেল, তানভীর দু’জনই তো আমাদের এলিট প্যানেল আম্পায়ার। দর্শক, সাংবাদিকদের মতো ম্যাচ রেফারিও দূর থেকে তামীমের সঙ্গে আম্পায়ারের বাকবিতÐা দেখেছেন। কিন্তু মাঠে কি ঘটেছে, অনুমান করে তো তিনি সেই রিপোর্ট দিতে পারেন না। মাঠে কি ঘটেছে, সেই রিপোর্ট তো ম্যাচ রেফারিকে দিবেন ফিল্ড আম্পায়ার। কিন্তু আমি তো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। শুনেছি তানভীর বমি করেছে, তাকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। গাজী সোহেলের অবস্থা কি তা জানি না। তাদের কাজ ভয়-ভীতির উর্ধ্বে থেকে ম্যাচ শেষ করতে হবে। অথবা কেন ম্যাচ শেষ করা যাচ্ছে না, তা বলতে হবে ২ দলকে। তারা যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, সেই বিষয়টিও তো জানাতে হবে। তখন না হয় তাদের নিরাপত্তার জন্য যা যা করণীয়, তা করা হতো।’ প্রশ্ন উঠছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে ম্যাচ রেফারি কালক্ষেপন করায় কী রিপোর্টটি প্রভাবিত হবে না? তামীম কি বড় ধরনের অন্যায় করেও পেয়ে যাবেন পার? এ প্রশ্ন প্রাইম দোলেশ্বরের। পরিস্থিতির মুখে স্থগিত হওয়া এই ম্যাচটি বাদ দিয়ে অবশিষ্ট ম্যাচগুলো সম্পন্ন করার নির্দেশ সিসিডিএমকে দিয়েছে বিসিবি।
বিপিএলের সর্বশেষ আসরে আপীলে সাড়া না দেয়ায় আম্পায়ার তানভীরের উপর তেড়ে গিয়ে এক ম্যাচ সাসপেন্ড হয়েছেন সাকিব। ম্যাচ রেফারি নিয়ামুর রশিদ রাহুল ছিলেন বলেই পার পাননি সাকিব। ম্যাচ রেফারিদের গুণগত মানের পার্থক্যের কারণেই গত পরশুর ম্যাচ শক্ত হাতে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন ম্যাচ রেফারি মন্টু দত্ত, এমনটাই মনে করছেন সায়লাব হোসেন টুটুলÑ ‘আইসিসি’র সিস্টেম হলো টেস্ট অথবা ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ম্যাচ রেফারির। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা এখানে তা অনুসরণ করতে পারছি না।’
বিকেএসপিতে পর পর ২টি ম্যাচে ম্যাচ রেফারির দায়িত্বে ছিলেন মন্টু দত্ত। গত ৮ ও ৯ জুন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ-ব্রাদার্সের ম্যাচটি টানা ২দিন কেটেছে খেলাহীন। প্রায় পৌনে ৪ কোটি টাকায় ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ সিস্টেম স্থপনের পরও সেই ম্যাচে ১ পয়েন্ট করে ভাগাভাগি হয়েছে টস পর্যন্ত করতে না পারায়। ১২ এবং ১৩ জুন বরাদ্দ থাকা সুপার লীগে আবাহনী-প্রাইম দোলেশ্বরের ম্যাচটিও সামান্য ছুঁতোয় হয়ে গেল পÐ! দু’দল খেলতে রাজি থাকার পর ম্যাচটির অপমৃত্যুর জন্য দায়ি কে ? এ প্রশ্নের উত্তর ‘অবশ্যই ম্যাচ রেফারি।’ জাতীয় দলে খেলা দূরে থাক, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলেও মন্টু দত্ত ম্যাচ রেফারি! প্রতিদিন তার ম্যাচ ফি ৫ হাজার ৬শ’ টাকা! বিকেএসপির কোচ বলেই নিজের মাঠে তার উপরই কিনা ভরসা রাখছে আম্পায়ার্স অ্যাসোসিয়েশন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন