মিরপুর সাড়ে বারো। ব্যস্ত সড়কের পাশে ছয়তলা ফ্লাটের নতুন বাড়িতে সময়ে অসময়ে আসতে হয়। মিতু খালা হুটহাট করে মোবাইল করেন।
- হ্যালো, হাসান।
- হু।
- কেমন আছিস?
-ভালো।
- কী করিস?
- বসে আছি।
- কোথায় বসে আছিস?
- সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
- কেন?
- গাড়ির প্যা পু শুনছি।
খালা একগাল হাসেন।গড়ির শব্দ শোনা যেন অপরাধ! হাসি থামিয়ে বলেন, মেসে থাকিস আমার এখানে তো মাঝেমধ্যে আসতে পারিস। ঝটপট চলে আয়। সেই কতোদিন তোর দেখা নেই।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে খালার অনুরোধ ফেলতে পারে না হাসান।সমস্যা একটা, খালু ফরিদ সাহেব তাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখেন না। সরকারি বড়কর্তা। পঞ্চাশোর্ধ অতিরিক্ত দেহের অধিকারী, মেদ ভুড়ি কী করি ধরনের উচু পেট।চেহারায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট। মাঝখানে বিদেশী মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন কয়েক বছর।বিদেশ থেকে এসে ওনার তেজ, পেট দুটোই বেড়ে গেছে।নিয়মিত জিম করেও ফলাফল শূন্য। জিম করলে শরীর পাতলা হওয়ার কথা থাকলেও ফরিদ সাহেব যতো জীম করছেন ততই মোটা হয়ে যাচ্ছেন।আগে থেকেই খিটখিটে স্বভাব।সেটাও বেড়েছে।ফরিদ সাহেবের একমাত্র গুনধর মেয়ে রিনিই তার ভবিষ্যৎ, স্বপ্ন। মেডিকেলে পড়ছে। ছাত্রী যেমন ভালো চেহারাও তেমন। একেবারে দুধে আলতা মেশানো গায়ের রঙ। টানা বড় বড় দুটো মায়াবী চোখ। একপলক দেখলে তাকে ভালো লাগবে না এমন মানুষ কম।মিতু খালার ছয়তলা ফ্লাটের নাম রাখা হয়েছে শীতল স্পর্শ।তিনিই পছন্দ করে নামটা রেখেছেন। গেটে কালো চেহারার উচু লম্বা বড় গোফ ওয়ালা ডাকাত টাইপ দারোয়ান।এই বেচারার সবচেয়ে বড় সমস্যা তার স্মৃতি শক্তি দূর্বল।হাসান যতোবার আসে প্রত্যেকবার তাকে সবিস্তারে বলতে হয়।
সন্ধ্যা নেমেছে। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সুইচে হাত দিবে ঠিক সে সময়ে দারোয়ান ক্যাচ ম্যাচ শব্দে গেট খোলে। আজ গোফ ওয়ালা দারোয়ান গম্ভীর নয়। চেহারা জ্বলজ্বল করছে। চেহারা সুরত ভালো হলে তাকে নবাব সিরাজুদ্দৌলা হিসেবে চালিয়ে দেয়া যেতো।
- আপনার নাম হাসান সাব নাকি?
- হাসান সাব না, আমার হাসান। অনলি হাসান।
- ও, আচ্ছা। অনলি হাসান।অনলি হাসান ভাই আপনি চারতলায় চলে যান। ম্যাডাম আপনার কথা বলে রাখছে।
কী কারণে এতো জরুরী তলব কে জানে! চারতলার ফ্লাট।দু›জন অগ্নিমূর্তির সামনে পড়তেই চমকে ওঠে। প্রথম শুরু করেন মিতু খালা, তুই আমার এতবড় সর্বনাশ কিভাবে করলি হাসান?
- কী সর্বনাশ!
- একদম ভানিতা করবি না। আমার কলিজার টুকরো মেয়ের জীবন ছারখার করবি ঘুনাক্ষরে বুঝতে পারলে তোকে এ বাড়ির ত্রিসীমানায় ঢুকতে দিতাম না।
হাসান অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকে।ঘটনা জানা দরকার।তবে রিনি যে কিছু একটা কান্ড ঘটিয়েছে সেটা নিশ্চিত।হাসানের এক বন্ধু কয়েক মাস আগে সড়ক দূর্ঘটনার স্বীকার হয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়।ঘটনাক্রমে সেদিন রিনির সাথে দেখা।পেছন থেকে ডাকে, হাসান ভাই?
রিনির কন্ঠ হাসানের চেনা।একেবারে ওর গা ঘেষে দাঁড়ায়।
- আরে রিনি, তোমার সাথে দেখা হবে ভাবতে পারিনি।
- আমার কলেজে এসেছ, একটা ফোন দিতে পারতে।
- কলেজে আসিনি তো, বন্ধু মারাত্মক অসুস্থ হাসপাতালে এসেছি।
রিনি গাল ফুলিয়ে রাগের ভান করে বলে, কই তোমার বন্ধু, চল দেখে আসি।
সেদিন বেশ রাত পর্যন্ত হাসানের সাথে ছিল রিনি। হাসান কিছু বলেনি, তার জন্য জটিল কাজ গুলো একটু সহজ হচ্ছে।মানুষের সেবা করার চেয়ে ভালো কাজ আর কী আছে দুনিয়ায়? কেউ যদি করে তাকে বাধা দিতে নেই। হাসপাতালের গেট পেরোতেই রিনি প্রশ্ন করে, কোথায় যাবে এখন?
- তোমাকে কিছু পথ এগিয়ে দিয়ে মেসে ফিরবো।
চাঁদনী রাত জ্যোৎস্না ছড়ায়। রিনির গলায় উচ্ছ্বাস, দেখ দেখ কী সুন্দর চাঁদ আকাশে।
- হু।
- হাঁটতে দারুণ লাগছে না?
- হু।
- হাসান ভাই একটা কথা বলি?
হাসান রিনির মুখের দিকে তাকায়। মায়াবী চেহারায় জ্যোৎস্নার আলো ছুয়েছে।অপরুপ ই বলা চলে। রিনিই আবার বলে, তোমাকে আমি কতো ভালোবাসি এটা কী কোনদিন বুঝবে না?
হাসান আর রিনির ব্যবধান আকাশ-পাতাল। কিছুটা অবাক হয়ে বলে, তুমি কী পাগল রিনি?
- হ্যাঁ, পাগল।
- যা কোনদিন সম্ভব নয় সেগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হয়।
- আমি কিন্তু সম্ভব করে ছাড়বো।
- রিনি তুমি আমার খালাতো বোন। আমি তোমার ভাই।
- লতায় পাতায় জড়ানো ভাই বোনের সাথে ভালোবাসা হয় যে।
ফরিদ সাহেব হুংকারে ভাবনা ফেলে কেপে ওঠে, এই চুপ করে আছ কেন? (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন