শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

সাইফউদ্দিনের ইয়র্কারের রহস্য টেপ টেনিস

প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী, কক্সবাজার থেকে : বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক চেহারার সঙ্গে একটু অমিলই খুঁজে পাবেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের। ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলটির অন্যতম শক্তি হয়ে গেছে যেখানে পেস ডিপার্টমেন্ট। মুস্তাফিজুরের আবির্ভাবে ৫০ ওভারের ম্যাচে পর্যন্ত যেখানে হোমে ৪ পেস বোলারকে রেখে একাদশ গঠন করার ঝুঁকি নিতে পিছপা হয় না টিম ম্যানেজমেন্ট, সেখানে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে চিত্রটা উল্টো। দলটিতে স্পিনারের সমাবেশÑবাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলটিতে তাই মিরাজ, সাইদ সরকার, শাওন গাজী, সনজিতদের কদর একটু বেশি। যেখানে দলে পেস বোলার সফিউদ্দিন, হালিমের অবস্থান সৎ ভাইদের মতো। নতুন বলে শুরুটা করে দিতে হবে পেস বোলারদের, প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের উপর প্রাথমিক চাপ তৈরির জন্য পেস বোলারদের উপর একটাই নির্দেশনাÑনিয়ন্ত্রিত বোলিং! পেস বোলার সাইফউদ্দিন গতকাল মিডিয়াকে জানিয়েছেন পেস বোলিংয়ে তার ভুমিকার কথাÑ‘যেহেতু আমাদের স্পিন অ্যাটাক ভালো তাই স্যাররা (কোচ, উপদেষ্টা কোচ) বলছেন আমরা যেন প্রথম দশ ওভারে একটু রান চেক দেই। প্রথম দশ ওভারে যত কম রান রাখা যায়। একটা-দুইটা উইকেট নেওয়া যায়, প্রত্যেকটা ম্যাচে এ রোলই থাকে। আমরা করছি; মোটামুটি পারছি। এজন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাড়াতাড়ি অলআউট করতে পারছি। ’
অথচ, কি জানেন এই নির্দেশনা পালনের চেয়েও বেশি কিছু করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল যুব বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে। সাইফউদ্দিন নামে ফেনীর তরুণ পেস বোলার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচেই করেছেন বাজিমাৎ। দ. আফ্রিকার বিপক্ষে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ৩/৩০। গত বছর দ. আফ্রিকার বিপক্ষে যে ভেন্যুতে ৫ উইকেট শিকার করেছেন এই ডানহাতি পেস বোলার (৫/২৭), সেই ভেন্যুতেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ৩/৩০। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু করতে পারার কারণ জানিয়েছেন এই পেস বোলারÑ‘এর আগেও আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে সিরিজ খেলছি। আমরা জানি ওরা কোনো জায়গায় দুর্বল, কোথায় শক্তিশালী। আশা ছিল ওদের বিপক্ষে ভালো বোলিং করব, তাই শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
অনূর্ধ্ব-১৯ দলে আছেন তিন বছর। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে এবারই তার হয়েছে অভিষেক। তবে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে এই তিন বছরে ২৯ ম্যাচে ৩৫ উইকেট শিকারে লাইম লাইটে এখন সফিউদ্দিন। উইকেট শিকারে তার উৎসবটা ঠিক শহীদ আফ্রিদির মতোই। তবে পাকিস্তান লিজেন্ডারীকে অনুসরণ করে নয়, অবচেনমনে নাকি তার উৎসবটা নিজস্ব স্টাইল হয়ে গেছে বলে মনে করছেন সাইফউদ্দিনÑ‘কাউকে ফলো করি না। আফ্রিদি ভাইয়ের খেলা ভালো লাগে। সেলিব্রেশনটা আমি আমার মতো করেই করি। অনেকেই বলে আমার সেলিব্রেশন আমি আফ্রিদির মতো করে করি। কিন্তু আমি সত্যিই আমার মতো করেই করি।’ দ. আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে উইকেট প্রাপ্তির উৎসবে যেন কিছু একটা জবাব দিয়েছেন এই পেসার। সাইফউদ্দিনও এমনটাই বলতে চেয়েছেনÑ‘আমি যখন ওর বলে ¯øগ ওভারে ব্যাটিং করছিলাম তখন কয়েকটা বলে আমি পরাস্ত হয়েছি। তাই আমার ইচ্ছে ছিল আমি ওকে (মূলডার) আউট করব। ওভারের প্রথম বলে ওর কাছে বাউন্ডারি খেলাম, তারপরও তাকে আউট করলাম। উইকেট নেওয়ায় জোর বেড়ে যায়। সেটা পেয়েছি।’
দলে তার পরিচয় শুধু পেস বোলার নয়, পেস অলরাউন্ডার বলে নিজেকে তৈরি করছেন সাইফউদ্দিন। সর্বশেষ ২টি ম্যাচে শ্লগে তার ব্যাটিংটাও এসেছে কাজে (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৬ নট আউট, দ. আফ্রিকার বিপক্ষে ১৭ নটআউট)। বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংকেও গুরুত্ব দিয়ে ভাবেন বলে জানিয়েছেন তিনিÑ ‘আমি মূলত ব্যাটসম্যান কাম পেস বোলার। টিম কম্বিনেশনের কারণে হয়তো ৭-৮ এ ব্যাটিং করতে হচ্ছে। আমাকে যখন যেভাবে চাওয়া হয় আমি সেভাবে পারফর্ম করার চেষ্টা করি। যখন ব্যাটিংয়ে আসি তখন ব্যাটিং নিয়ে ভাবি; আমার বোলিংয়ে বোলিং নিয়ে ভাবি।’
প্রথম ম্যাচে দ. আফ্রিকার তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, যার মধ্যে ২টি আবার নিজের প্রধান অস্ত্র ইয়র্কারে বোল্ড আউটে। বলে-কয়ে ইয়র্কার দিতে পারেন ফেনী কলেজে হিসাববিজ্ঞানে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষে পড়া এই ছেলেটি। তার প্রথম পাঠটি পেয়েছেন তিনি টেপ টেনিস বলে, এখন নেটেও ইয়র্কার বোলিং অনুশীলনে দেন সময়। এমনটাই জানিয়েছেন সাইফউদ্দিনÑ ‘ছোটবেলা থেকে পাড়ায় অনেক টেপ টেনিস ম্যাচ খেলতাম তো। টেপ টেনিসে খেলতে খেলতে ক্রিকেট বলে নিখুঁত ইয়র্কার দিতে পারছি আসছে। টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আমি বেশি খেলতাম, লক্ষ¥ীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, তখন থেকে ইয়র্কারের প্রতি ঝোঁক আসে। তখন থেকে ১৬-২০ ওভার ধারাবাহিকভাবে করে যেতাম। ওই বোলিংটাই আমি এখানে এসে করি। স্পট বোলিংয়ের পাশাপাশি ইয়র্কার বোলিংও ২০-২৫টা বল ট্রাই করি। আমার জন্য একটা নিয়ম থাকে; প্রথম ১৮-২০ বল লেন্থ বল। তারপর শ্লগ ও ডেথ বল করার জন্যে আমার জন্যে একটা সময় রাখা হয়। ওই সময়ে আমি ইয়র্কার অনুশীলন করি।’
আফ্রিদির উদ্ভাবিত উৎসব অনুকরণ করলেও আফ্রিদি তো নয়ই, এমনটি উপমহাদেশের কেউ ও নন, সাইফউদ্দিনের আদর্শ নিউজিল্যান্ডের অল রাউন্ডার কোরে এন্ডারসন এবং ইংল্যান্ডের পেস বোলার বেন স্ট্রোকস। লক্ষ্য একটাই, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়া। আর অল রাউন্ডার হিসেবে নিজের ভ‚মিকাটা যথাযথভাবে পালন করাÑ‘যেহেতু শুরুটা ভালো করেছি। লক্ষ্য থাকবে অলরাউন্ডার হিসেবের নিজের রোলটা আরও ভালোভাবে প্লে করার চেষ্টা করব। যেহেতু দেশের মাটিতে খেলা চাইব অন্ততঃ ফাইনাল পর্যন্ত খেলা। পাশাপাশি নিজের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।’
রুবেল, আল আমিন, তাসকিন, মুস্তাফিজুরের পর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ তাহলে আর এক পেস বোলারের আবির্ভাবের জানান দিচ্ছে। পেস অল রাউন্ডারের শূন্যতা পূরণেও দারুণ কিছুর আভাস দিচ্ছেন সাইফউদ্দিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন