মামু-চাচা ছাড়া চাকুরি হয়না, কিংবা ঘুষ ছাড়া চাকুরি হয়না, এ অভিযোগটি বর্তমান তরুণ ও বেকার সমাজের মধ্যে বহুল প্রচলিত একটি ভ্রান্ত ধারণা। ভ্রান্ত ধারণা শব্দটি পড়ার পর পুরো লেখাটি লেখার আগেই হয়ত লেখককে গালি দিচ্ছেন। কিন্তু চাকুরীদাতা হিসেবে বেশিরভাগের মনের হতাশার কথাগুলো এ লেখাটিতে লিখার চেষ্টা করেছি।
বেকারদের হতাশা, চাকুরি নাই, কিন্তু চাকুরীদাতার হতাশা চাকুরি করার উপযুক্ত লোক নাই। এ লেখাটি পড়ার পর প্রতিটি পয়েন্ট অনুযায়ি নিজেকে প্রস্তুত করলে ২ দিকের হতাশা অনেকটাই কমে আসবে।
মিলিয়ে দেখুন, কতটুকু প্রস্তুত চাকুরি পাওয়ার জন্য?
- আপনার কি আধুনিক প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড সিভি প্রস্তুত রয়েছে?
- আপনার টেকনিক্যাল নলেজ কি বর্তমান যুগের চাহিদার সাথে যথেষ্ট?
- আপনার কি যুগের চাহিদা পূরনে অন্যান্য যোগ্যতা রয়েছে, যা আপনার সিভিকে সমৃদ্ধশালী করবে?
- পূর্বের চাকুরির অভিজ্ঞতা না থাকলেও সিভিতে উল্লেখ করার মত এমন কোন অতীত কর্মকান্ডের অভিজ্ঞতা কি রয়েছে যা দেখে চাকুরিদাতা আপনার যোগ্যতার ব্যপারে হালকা ধারনা পাবে?
- কমিউনিকেশন দক্ষতা এ যুগের সবচাইতে চাহিদাসম্পন্ন যোগ্যতা। এ যোগ্যতার ব্যপারে আপনি নিজেকে কত মার্ক দিতে পারবেন?
চাকুরিদাতাদের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা
- বেকারদের হতাশাভরা গল্প শুনে থাকলেও জব পোস্টের বিপরীতে সিভি পাওয়া যায় ১০-১২টা
- সিভি পাঠানোর ধরন দেখলেই প্রথমেই বাদ পড়ে যায় ৮০%
( ** মেইলের সাবজেক্টে মেইল করার কারণ উল্লেখ নাই
** মেইলে ঢুকলে কভার লেটার নাই।
** অনেকে মেইল না করে ফেসবুকে সিভি দেয়।)
- সিভি পড়ার পর বাকি ১০% বাদ পড়ে যায়। সিভির ফরম্যাট দেখে অফিসের পিয়ন পদের জন্যেই শুধুমাত্র তাকে বিবেচনা করা যায়।
- এতগুলো বাদ পড়ার পর যে ভাগ্যবানরা ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পায়, তাদের ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত কর্তাব্যক্তিদের কন্ঠে সময় নস্ট করার জন্য হতাশার কথা শোনা যায়।
চাকুরি পাওয়ার যোগ্য হিসেবে প্রস্তুতিতে কয়েকটি পরামর্শ
- অনলাইনে সার্চ দিলে প্রফেশনাল সিভি ফরম্যাট পাওয়া যায়, সেগুলোর কোনটাকে অনুসরণ নিজের সিভি রেডি করে রাখেন।
- যত চাকুরির অফার দেখবেন, আপনার যোগ্যতার সাথে মিললে সবগুলোতে সিভি সেন্ড করুন।
- সিভি পাঠাতে অবশ্যই মেইলের সাবজেক্টে মেইল করার কারনটি উল্লেখ করুন।
- মেইলের ভিতরে অবশ্যই কভার লেটার লিখুন, সেটি আপনার ব্যপারে পজিটিভ ধারণা তৈরি করবে।
- সিভিতে অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের চাইতে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা চাকুরিদাতাকে আকর্ষিত করে। তাই ছাত্রজীবনেই দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের টার্গেট নির্ধারণ করুন।
- টেকনিক্যাল নলেজ বর্তমান যুগের যেকোন চাকুরির জন্য অত্যাবশ্যকীয় যোগ্যতা। তাই এ দক্ষতা অর্জনে সময় দিন।
সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর ৪০-৫০ টা চাকুরির অফারে আবেদন করুন। আশা করি, তখন চাকুরি না পাওয়ার হতাশাকে ঢাকতে সান্তনা বানী হিসেবে পরিবারকে কিংবা কাছের মানুষকে বলতে হবে না, মামু-চাচা নাই দেখে চাকুরি হচ্ছে না।
লেখক: প্রধান সমন্বয়ক, বইবাজার.কম
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন