শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের চক্রান্ত গভীর মাস্টারপ্ল্যানের অংশ: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৯, ২:২০ পিএম

ছাত্রসমাজ জনগোষ্ঠীর আলোকিত সম্প্রদায় মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের চক্রান্ত গভীর মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতিকে যারা কলুষিত করেছে, মারামারি-দলাদলিকে যারা উৎসাহিত করেছে, ক্যাম্পাসে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা বিস্তারে যারা মদদ দিয়েছে তারাই প্রকৃত ছাত্র রাজনীতিকে মানুষের চোখে হেয় করেছে। তারাই এখন সমগ্র ছাত্র রাজনীতিকে বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে। ছাত্র সমাজ জনগোষ্ঠীর আলোকিত সম্প্রদায়, তারা আলোকদীপ্ত চোখে রাষ্ট্র ও সমাজে অনাচারগুলো চিহ্নিত করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। যুগে যুগে এই ছাত্র সমাজই অন্যায়-অসাম্য-অবিচারের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের শরীরের রক্ত ঝরিয়ে ভাষার অধিকার থেকে শুরু করে স্বাধীকার স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পরেছে। এরা নির্যাতিত জনগণের ভ্যানগার্ড হিসেবে রাজপথে দীপ্তপায়ে এগিয়ে গেছেন।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ছাত্রসমাজের সেই মহিমামান্বিত ঐতিহ্য ম্লান করেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠি। স্বাধীনতার পরপরই ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও শহীদ মিনারে ছাত্রী লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ তাদের যাত্রা শুরু করে। তাদের উত্তরসূরীরাই বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে প্রচলিত বিধিবিধানকে তোয়াক্কা না করে নিষ্ঠুর ও সর্বনাশা নির্যাতন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে সরকারের ছত্রছায়ায়। হলে হলে টর্চার সেল গঠিত হয়েছে। একের পর এক ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ দ্বারা শিক্ষার্থী খুনের ঘটনা ঘটছে। এর ভয়ঙ্করতম রুপ দৃশ্যমান হলো মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে। তাকে মারধরের খবর পেয়ে একজন পুলিশ উপ-পরিদর্শক সেখানে ছুটে গেলে ছাত্রলীগের নেতাদের বাধার কারণে সে কিছু করতে পারেনি।
রিজভী বলেন, ছাত্রলীগকে এই কয়েক বছরে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে তারা কোনো এথিকসের ধার ধারেনি। এই কদাচারের জন্য সমগ্র ছাত্রসমাজ বা ছাত্র রাজনীতি দায়ী হতে পারে না। সরকারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ তথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরঙ্কুশ আনুগত্যের কারনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন-কানুন, বিচারের তোয়াক্কা করছে না ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন। তাদের দৌরাত্ম ও উপদলীয় হানাহানির কারনে সমগ্র ছাত্র রাজনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে একটি নৈতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই তৈরি করেছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠি। আত্মসম্মানহীন একটি নিপীড়ক সংগঠন ছাড়া ছাত্রলীগ আর কিছুই নয়। এর জন্য বহু শতাব্দীর ‘একাডেমিক ফ্রিডম’সহ বহু মুক্তি আন্দোলন সংগ্রামের পথিকৃত ছাত্র সমাজে ছাত্র রাজনীতিকে কাঠ গড়ায় দাঁড় করানো ঠিক নয়।
ঝিনাইদহ ও সাতকানিয়ায় ভোটগ্রহণে অনিয়মেন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে এই বিষয়ে অবহিত করলে তারা দেখছি বলে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। যারা ২৯ শে ডিসেম্বর মধ্যরাতের নির্বাচন করে তাদের কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা অরণ্যে রোদন। নির্বাচন কমিশন সরকারের যাদুর বাক্সে পরিণত হয়েছে। তারা দিনের নির্বাচন রাতে করে এবং ভোটার তালিকায় জীবিত মানুষকে মৃত দেখায়। বিগত নির্বাচনগুলোতে যে সমস্ত ভোটাররা জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ভোট দিয়েছে কিন্তু ভোটার তালিকায় এখন তাদের মৃত দেখানো হচ্ছে। এই যাদুকর প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের অধীনে নির্বাচনে প্রকৃত ভোটারদের ভোট দেয়ার অধিকার নেই। যে সরকার দেশ, মাটি, পানি, গ্যাস বিক্রি করে, যারা দেশের সার্বভৌমত্বকে অন্যের হাতে তুলে দেয় তারা কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে না। পর দেশের কাছে সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিয়ে দালালির পারিশ্রমিক হিসেবে ক্ষমতায় টিকে থাকার গ্যারান্টি পেয়েছে তাদের অধীনে নির্বাচন ভোটার শূন্যই হবে এটাই স্বাভাবিক।
‘এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ভোটারদের ভোট দিতে না দেওয়া কি সু-নীতি? এটাতো এক মহা দুর্নীতি। পুলিশ এবং সরকারী দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে দিনে-দুপুরে ভোট জালিয়াতি করা মহা দুর্নীতিরই বহি:প্রকাশ। আর এই মহাদুর্নীতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বুক ফুলিয়ে বিগত ১০/১১ বছর ধরে করে আসছেন ক্ষমতাসীনরা। দুই একজন চুনো পুটিকে ধরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান বলে না বরং এই অভিযানের নামে বড় বড় দুর্নীতিকে আড়াল করা হচ্ছে। উন্নয়নের নামে গত ১০ বছরে যে অসংখ্য দুর্নীতির গুপ্তধন তৈরি হয়েছে সেগুলো উদ্ঘাটন করা তো দূরে থাক বরং সেগুলোকে পাহারা দেয়া হচ্ছে। সরকারী ব্যাংক, শেয়ারবাজার, পদ্মাসেতুর লুটেরা অধরায় থেকে যাচ্ছে। পর্দা কান্ড, বালিশ কান্ডের মত বিস্ময়কর দুর্নীতিগুলো শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ববাসীকেও তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বড় বড় দুর্নীতির মহারথিরা ক্যাবিনেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত আছেন। কারন ক্ষমতাসীনদের কাছে দুর্নীতির রুই-কাতলারা হচ্ছে দেশ প্রেমিক। সুতরাং তাদেরকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Anwar Hossain ১৪ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:৫৭ পিএম says : 0
ছাত্র রাজনীতি অবশ্যই বন্ধ করা উচিৎ
Total Reply(0)
অভিভাবক ১৪ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৪৫ পিএম says : 0
বি, এন, পির গোপে তেল মঙ্গল গ্রহে কাঁঠাল.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন