মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে বৈঠকের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িপ এরদোগান সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দিবিরোধী অভিযান ৫ দিনের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে সীমান্তের ৩০ কিলোমিটার এলাকা থেকে কুর্দি গেরিলাদের সরে যেতে হবে বলে শর্ত দিয়েছেন তিনি। এদিকে, তুরস্কের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছে জাতিসংঘ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানালেও সৈন্য প্রত্যহারের শর্তে কুর্দিরা রাজি হয়েছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার আঙ্কারায় এরদোগানের সাথে বৈঠকের পর মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতিতে তুরস্কের সম্মত হওয়ার বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের যুদ্ধ ৫ দিন বন্ধ থাকবে। তুরস্ক সীমান্ত এলাকায় যে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ সৃষ্টি করতে চায়, সেখান থেকে কুর্দি বাহিনী প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করবে।’ এ বিষয়ে কুর্দি বাহিনীর অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার মজলুম কোবানি জানিয়েছেন, তারা রাস আল-আইন ও তাল আবিয়াদে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে কিনা তা দেখবেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও রাস আল-আইনে সংঘর্ষের খবর পেয়েছেন তারা।
অভিযানে সামরিক বিরতির কথা স্বীকার করে নিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটাকে কোনও ভাবেই সংঘর্ষবিরতি বলা যায় না। কারণ, আমরা সেনা প্রত্যাহার করছি না। ১২০ ঘণ্টার জন্য অভিযান থামানো হয়েছে, যাতে কুর্দ জঙ্গিরা এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যায়। শর্ত পূরণ না হলে আবার অভিযান শুরু হবে।’ তার বক্তব্য, শরণার্থীদের জন্য ‘সেফ জোন’ যে কোনও মূল্যে তৈরি করতে হবে। তবে তুরস্কের এই সিদ্ধান্ত নিজেদের জয় হিসেবে দেখছে মার্কিন প্রতিনিধি দল। কারণ, শুরুতে সংশয় ছিল যে এরদোগান আদৌ মাইক পেন্সদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কি না! ট্রাম্পের একটি চিঠি ঘিরে প্রকাশ্যেই ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। এমনকী, পেন্স যখন আঙ্কারায় বৈঠকের পথে তখনও বেফাঁস মন্তব্য করে নিজের প্রশাসনের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন ট্রাম্প। দল এবং প্রশাসনের উল্টো পথে হেঁটে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কুর্দদের বাঁচানোর কোনও দায়বদ্ধতা আমেরিকার নেই। কুর্দরা সিরিয়ার লড়াইয়ে মার্কিন সেনাকে সাহায্য করেছে এটা ঠিক, কিন্তু তারাও সাধু নয়।’
যুদ্ধবিরতির বিষয়ে টেক্সাসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘তুরস্ক সঠিক কাজ করেছে এবং সেজন্য আমি এরদোগানকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। তিনি আমার বন্ধু। আমি খুশি যে আমাদের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই।’ এ সময় এরদোগানকে দারুণ নেতা বলে প্রশংসা করেন ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি একজন শক্তিশালী ও দৃঢ়চেতা মানুষ।’ তুরস্কের সেনাবাহিনীরও প্রশংসা করেন ট্রাম্প বলেন, ‘তুরস্কের অনেক শক্তিশালী সামরিক বাহিনী রয়েছে। তারা আমাদের বন্ধু ও ন্যাটের সদস্য।’ অন্যদিকে, তুরস্কের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে জাতিসংঘ। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘জাতিসংঘ চার্টার ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে বেসামরিকদের সুরক্ষায় যে কোন পদক্ষেপকে স্বাগত জানান মহাসচিব।’ জাতিসংঘ আরো জানায়, মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেস মনে করেন সিরীয় সংকট মোকাবিলায় এখনও আরও অনেক কিছু করার আছে। এখনও অনেক পথ বাকি।
পেন্সের উদ্দেশ্য ছিল যে কোনও উপায়ে তুরস্কের সিরিয়া অভিযান বন্ধ করানো। কারণ, এই অভিযানের জেরে ঘরে-বাইরে ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনকে। কেউ দায়ী করছেন তার সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে, কেউ আবার সরাসরি অভিযোগ করছেন যে এরদোগানকে এই হামলার অনুমতি দিয়েছেন ট্রাম্প নিজেই। এমন অবস্থায় ঘরের অসন্তোষ এবং তুরস্কের সঙ্গে সুসম্পর্ক, দুটো দিকই বাঁচাতে নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়েও আঙ্কারায় বৈঠক করতে পৌঁছে যান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। প্রাথমিক ভাবে তার লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। যদিও, এই সাফল্যের মেয়াদ নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের মনেই। প্রথম কারণ, অবশ্যই তুরস্কের কড়া সুর। দ্বিতীয়, সিরিয়া নিয়ে ট্রাম্পের সুস্পষ্ট নীতির অভাব। পেন্স অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, সিরিয়ায় আমেরিকার উপস্থিতি ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে সামরিক ভাবে নয়। এই ‘উপস্থিতি’তে কতটা লাভ হবে, সে প্রশ্ন রয়েই যায়।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ৯ তারিখ থেকে সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা থেকে সিরিয়ার কুর্দি বিদ্রোহীদের উৎখাতে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। আঙ্কারা বলছে, তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া ২০ লাখেরও বেশি শরণার্থীকে পুনর্বাসনের জন্য সেখানে তারা একটি সেফজোন গড়ে তুলতে চায়। ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’ নামে তুরস্কের এই অভিযানে ৮ দিনে সিরিয়ায় অন্তত ৭২ বেসামরিকের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। উদ্বাস্তুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩ লাখ। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন