টাঙ্গাইলের সখিপুরে বিনাদোষে ২৭দিন কারাভোগের পর অবশেষে জামিন পেয়েছে চাঞ্চল্যকর মামলার ভুল আসামী কলেজ ছাত্র বাবুল হোসেন নয়ন। বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সখিপুর থানা আমলি আদালতে তার জামিন চাইলে আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আকরামুল ইসলাম তার জামিন মঞ্জুর করেন। বাবুল হোসেন নয়নের আইনজীবী সেলিম আল দ্বীন তার জামিন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ভুলের খেসারত কে দিবে? নামের সঙ্গে মিল থাকায় গত ২১ আগস্ট উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের ৫ম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে অপহরণের পর কক্সবাজার একটি হোটেলে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বাবুল হোসেন নয়ন গ্রেফতার হওয়ার পর হতে জেল হাজতে ছিল। মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর চাঞ্চল্যকর হওয়ায় অধিকতর গুরুত্ব সহকারে তদন্ত শুরু করেন ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সখিপুর থানার এসআই আসাদুজ্জামান। পরে কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলের দেওয়া মোবাইল নম্বর ও সিসি টিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলে মামলার প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হয়। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ৭ অক্টোবর ওই ঘটনার আসল নায়ক বাসাইল উপজেলার বাঘিল গ্রামের ফারুক ওরফে নূহু মিয়ার ছেলে নয়ন মিয়াকে বাসাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে গ্রেফতার হওয়া দ্বিতীয় নয়ন ওই ছাত্রীকে কক্সবাজারের একটি হোটেলে রেখে ধর্ষণ করেছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয়। নির্দোষ প্রমানিত প্রথমে গ্রেফতার হওয়া সখিপুর উপজেলার প্রতিমাবংকী গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে বাবুল হোসেন নয়ন। বিনাদোষে গত ২৭ দিন ধরে জেল হাজতে ছিল ওই কলেজ ছাত্র বাবুল হোসেন নয়ন। নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পাওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাবুল হোসেন নয়নের পরিবার ও এলাকাবাসী। জানা যায়, অপহরণের পাঁচদিন পর ২৬ আগস্ট টাঙ্গাইল ডিসি লেক এলাকা থেকে ওই ছাত্রী উদ্ধার হলে মেয়েটির মা বাদী হয়ে প্রতিবেশী শাহজাহান আলীর ছেলে বাবুল হোসেন নয়নকে আসামি করে থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। মামলার পরপরই পুলিশ সরকারি মুজিব কলেজ থেকে চলতি ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী প্রতিবেশী বাবুল হোসেন নয়নকে গ্রেফতার করে। এ সময় গ্রেফতার হওয়া বাবুল হোসেন নয়নকে মেয়েটির মুখোমুখি করলে মেয়েটি ওই নয়নকেই ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু নয়ন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ওই ছাত্রীকে চিনে না এবং কক্সবাজারে কখনো যায়নি বলে জোর দাবি করতে থাকে। মেয়েটির অনড় অবস্থানের কারণে নয়নকে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালতে পাঠালে আদালত পুলিশকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়। জেলগেটে জিজ্ঞাবাদের সময়ও নয়ন বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে। পরে কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলের দেওয়া মোবাইল নম্বর ও সিসি টিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলে মামলার প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হয়। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ৭ অক্টোবর ওই ঘটনার আসল নায়ক বাসাইল উপজেলার বাঘিল গ্রামের ফারুক ওরফে নূহু মিয়ার ছেলে নয়ন মিয়াকে বাসাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাবুল হোসেন নয়নের বাবা শাহজাহান আলী বলেন- পুলিশের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এ ঘটনার প্রকৃত আসামি নয়ন গ্রেফতার এবং আমার ছেলে বাবুল হোসেন নয়নকে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া আমরা তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। সখিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো.আমির হোসেন বলেন, ঘটনার পরে মেয়েটি ভয়ভীতির মধ্যে থাকায় আসামি সনাক্ত করা তার পক্ষে কঠিন ছিল। পুলিশ খুব দ্রুত মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে এবং প্রথমবার গ্রেফতার হওয়া বাবুল হোসেন নয়নকেও নির্দোষ প্রমাণিত করতে সক্ষম হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন